আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

এখনো নিরক্ষর দেশের চার কোটি মানুষ

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এখনো দেশের ২৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। সংখ্যায় চার কোটির বেশি। গত এক বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে মাত্র ০.৪০ শতাংশ। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ঘোষণা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৬.৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ সমন্বয়কৃত সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১২ কোটির বেশি মানুষের সাক্ষরজ্ঞান রয়েছে। বাকি ৪ কোটি মানুষকে কীভাবে সাক্ষরজ্ঞান দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো পরিকল্পনা নেই। সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালিত প্রকল্পটির মেয়াদও শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। এরপর নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাক্ষরতার হার নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি তথ্যে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। সাক্ষরতার আন্তর্জাতিক সংজ্ঞার সঙ্গেও আমাদের কার্যক্রমের মিল নেই। এ কারণে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার পরিকল্পনা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায়ই আজ পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৩’।

কর্মকর্তারা বলেন, বিবিএস সাক্ষরতার হার নিয়ে জরিপ করার সময় মানুষের কাছে জানতে চায়, আপনি লিখতে পারেন কি না? সে বলল পারি। হয়তো সে শুধু স্বাক্ষর করতেও জানে। কিন্তু তাকে যদি এক পৃষ্ঠা লিখতে দেওয়া হয়, তাহলে সে পারবে না।

অথচ এসডিজির ৪ (৬.১) নম্বর অনুচ্ছেদে সাক্ষরতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী সাক্ষরতা হচ্ছে পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লেখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। এর নিরিখে সাক্ষরতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের ১৪ জুন প্রকাশিত বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২২ অনুযায়ী, সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ এবং নারী ৭৪.৭ শতাংশ। এটি প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের ১৪ জুন। একই সরকারি সংস্থার ‘খানার আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭৫ দশমিক ৮ এবং নারী ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি প্রকাশিত হয়েছে গত ২২ জুন।

অন্যদিকে, প্রায়োগিক সাক্ষরতা নিরূপণ জরিপ-২০২৩ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত বছর থেকে ওপরের বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৬৩ দশমিক ৯৭ এবং নারী ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এটি প্রকাশিত হয়েছে ১৮ জুলাই। কাছাকাছি সময়ে প্রকাশিত বিবিএসের তিনটি জরিপ তথ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে।

বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২২ অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০২০ সালে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২১ সালে ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

দেশে সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালিত প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। এরপর আর কোনো কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি। এ কারণে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে ২০২৫ সালের মধ্যে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করার সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও এমআইএস বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মু. নুরুজ্জামান শরীফ কালবেলাকে বলেন, আগের প্রকল্পটি শেষ হয়েছে এক বছরেরও বেশি আগে। এ ছাড়া ‘আউট অফ চিলড্রেন’ প্রকল্পও শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। এরপর সাক্ষরতা বিষয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি উপজেলা পর্যায়ে অফিস স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আউট অব চিলড্রেন প্রকল্পটি বর্ধিত করতে।

জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সাক্ষরতার তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, সেটি কোনো জরিপে উল্লেখ করা হয়নি। বিভিন্ন এলাকা, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব বৈষম্যের বিষয়টি জরিপে উল্লেখ নেই। নারীদের সাক্ষরতার হার সবসময়ই কম দেখছি। তার মানে, এখানে আমাদের তেমন অগ্রগতি আসেনি। ধরে নেওয়া হয়েছে, স্বাক্ষর যে করতে পারে, সে লিখতে ও পড়তে পারে। কিন্তু সে প্রয়োগ করতে পারে কি না? এক্ষেত্রে তথ্যের গরমিল বলব না। তবে আমরা যে দাবি করছি, সেটি আসলে সঠিক নয়। সরকারি হিসাব সঠিক ধরলেও এখনো চারজনে একজন লেখাপড়া জানে না। এটা তো চলতে পারে না।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানান, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৪) অর্জনের জন্য সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতের জন্য কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখের বেশি কিশোর-কিশোরী ও বয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সাক্ষরতা প্রদান করা; মৌলিক সাক্ষরতা অর্জনকারী ৫০ লাখ নব্য সাক্ষরকে কার্যকর দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধাক্কাধাক্কির জেরে কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা

পাকিস্তানকে সমর্থন করায় মুসলিম দেশের পণ্য বয়কট ভারতের

আইসিইউ থাকলেও চিকিৎসক নেই ৩ বছর

স্টারলিংকে খরচ কত পড়বে?

পর্যটকশূন্য টেংরাগিরি ইকোপার্ক, নেপথ্যে কী এই সেতু?

ফ্রিতে হজের আমন্ত্রণ জানাল সৌদি আরব

দেশে যাত্রা শুরু করেছে স্টারলিংক

ভারতের বিভিন্ন ব্যক্তি-সংস্থার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ক্যানসার আক্রান্ত বাইডেন আছেন আর মাত্র দুই মাস!

ইসরায়েলের ওপর চড়াও পশ্চিমের তিন শক্তিশালী দেশ

১০

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়ায় রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা

১১

দুপুরের মধ্যে ৫ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

১২

আরও এক ভয়াল রাত কাটল গাজাবাসীর, বেড়েছে মৃত্যু

১৩

ঢাকার আবহাওয়া আজ যেমন থাকবে

১৪

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গেল ভারত-পাকিস্তান

১৫

২০ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৭

২০ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

বৈষম্যবিরোধী ১৬ নেতার পদত্যাগ, জেলা কমিটির সংবাদ সম্মেলন

১৯

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বেচে দিয়েছেন অনেকে, অনেকে দিয়েছেন ভাড়া

২০
X