দুই মাসের মধ্যে কুয়েতে পাঠানো হবে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন বিজ্ঞাপন দিয়েছিল ‘আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে নিয়েছিল অফিসও। বিজ্ঞাপন দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা অর্ধশত কুয়েত যেতে আগ্রহীর প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। তবে ভিসা দেওয়ার দিন অফিসটি তালাবদ্ধ পান ভুক্তভোগীরা। এভাবে প্রতারণা করে অন্তত দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
এরপরের ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। পুলিশের কাছ থেকে রক্ষা পেতে লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী থেকে পুরুষ হয়ে আত্মগোপনে চলে যান ওই চক্রের দুই সদস্য। তবে এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারায় অভিযান চালিয়ে ওই দুজনসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তাররা হলেন শরিফুল ইসলাম, হৃদি ওরফে আবরার জাওয়ার তন্ময়, আহিয়ান শিশির ও শারমিন। তাদের মধ্যে হৃদি লিঙ্গ পরিবর্তন করে নিজের নাম রাখেন রেজাউল করিম রেজা এবং আহিয়ান নিজের নাম রাখেন কামরুজ্জামান শিশির।
গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, চক্রটি গুলশান-১-এ নেওয়া অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে পেজ খুলে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। এতে আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করা কুয়েত যেতে আগ্রহীদের সঙ্গে চুক্তি করে। এরপর তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতের আসল ভিসার কপি সংগ্রহ করে। ভিসা নম্বর ঠিক রেখে ফটোশপের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্য তথ্য সংযুক্ত করে জাল ভিসা তৈরি করে। এর ভিত্তিতে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করে সব কাগজপত্র নিয়ে জনশক্তি ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে যান ভুক্তভোগীরা। কুয়েতের সরকারি ওয়েবসাইটে ভিসা নম্বর চেক করে অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যাটাস অ্যাপ্রুভড থাকায় তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। পরে ‘স্ট্যাটাস অব বায়ো ফিঙ্গার এনরোলমেন্ট: সাকসেস’ মর্মে এর এক কপি যাত্রীদের দেওয়া হয়। এ ছাড়া চক্রের সদস্যরা একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যানকপিতে ভুক্তভোগীদের নাম-ঠিকানা যুক্ত করে সেটিও কমপ্লিট হয়েছে বলে জানান। এরপর বিমানের টিকিট দেখিয়ে তাদের থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়।
ডিবিপ্রধান বলেন, এভাবে চক্রটি প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকার একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের শনাক্ত করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার শরিফুল ইসলামের নামে বিভিন্ন থানায় ৪টি ও আবরার জাওয়ার তন্ময়ের নামে একটি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে।
তিনি আরও জানান, আবরার জাওয়ার তন্ময়, কামরুজ্জামান শিশির দুজনই ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে হৃদি থেকে আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা এবং শারমিন থেকে কামরুজ্জামান শিশিরের পরিচয় ধারণ করে। ডিবির নিবিড় তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার হয়। গুলশান থানায় মামলায় গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন