

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু স্থানীয় কাঞ্চনপাড়া বাজারে বয়সে তরুণ সোহেল হাওলাদারকে জড়িয়ে ধরলেন। কথা বলতে চাইলে সোহেলের চোখ বেয়ে পড়ছিল পানি। একটু পরই বোঝা গেল তিনি বাকপ্রতিবন্ধী। পকেট থেকে স্মার্টফোনটি বের করে গ্যালারি ঘেঁটে দেখাতে লাগলেন বিএনপির নানা সভা-মিছিলে তার অংশ নেওয়ার ছবি, মোবাইল ফোনটির প্রচ্ছদে মিয়া নুরুদ্দিন অপুর ছবি! এমন ভালোবাসায় আপ্লুত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এ নেতা। শুধু বাকপ্রতিবন্ধী সোহেল হাওলাদারই নন, গত বৃহস্পতিবার থেকে নুরুদ্দিন অপু শরীয়তপুরের যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উদ্বেলিত হয়ে তাকে আলিঙ্গন করছেন, কেউ বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে রাখছেন, কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব নুরুদ্দিন অপুকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস আর আবেগের চিত্র বলে দিচ্ছে, যেন শরীয়তপুরের মানুষ বহু বছর ধরেই তার আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। তিন দিন ধরে দিনে-রাতে তিনি জেলার ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-৩ আসনের যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। মতবিনিময় সভা আর পথসভাগুলো রূপ নিচ্ছে জনসমাবেশে। নিজ জন্মভূমি শরীয়তপুরের মানুষের ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হচ্ছেন। উন্নয়ন আর হিংসামুক্ত সমাজ গঠনে শান্তির বার্তা দিচ্ছেন। চালাচ্ছেন তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার প্রচার।
মতবিনিময় সভা, পথসভা আর জনসংযোগের তৃতীয় দিন গতকাল শনিবার তিনি ডামুড্যা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, হাটবাজারে গণসংযোগ চালান। সকালে গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুরের বাসভবন থেকে তিনি বের হন জনসংযোগে। শুরুতে গোসাইরহাটের হাওলাদার বাজারে ব্যবসায়ী আর স্থানীয় জনতার সঙ্গে জনসংযোগ করেন। তিনি নিজ গাড়িতে যতই এগিয়ে যান, পথে পথে সেই বহর বড় হতে থাকে। ‘নুরুদ্দিন অপু আসছেন’ খবরেই লোকজন ভিড় করেন রাস্তার পাশে। দোকান থেকে নেমে রাস্তায় আসেন ব্যবসায়ীরা, চলন্ত পথে গাড়ি থামিয়ে লোকজন তাকে বুকে টেনে নেন। অপু গাড়ি থেকে নেমে তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জনতার ভিড়ে যানবাহন আটকে যেতে দেখলে নিজেই নির্বিঘ্নে যান চলাচলে রাস্তায় নেমে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
সকালে তিনি ডামুড্যা পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ‘এ সামাদ ইসলামী একাডেমি’র ‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোরআন সবক ও দোয়া’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি শিশুদের কোলে তুলে নেন। পবিত্র কোরআনের নানা আয়াত উল্লেখ করে সততা আর সত্যের ভিত্তিতে জীবন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। শরীয়তপুর ঘিরে নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেন, সবাইকে নিয়ে স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর শরীয়তপুর গড়ে তুলব। এখানে কোনো প্রতিহিংসা থাকবে না। মানুষ তার নিজ মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে।
ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে তিনি বেলা ১১টার দিকে ডামুড্যার তিন খাম্বা বাজারে যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘নিউনেস ইসলামী একাডেমি ও নিউনেস মডেল মাদ্রাসা’র সামনে তার গাড়িবহর হঠাৎ করেই থেমে যায়। তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ছুটি হলে শিক্ষার্থীরা মূল সড়কে উঠছিল। অপু গাড়ি থেকে নেমে শিক্ষার্থীদের মাঝে যান, শিশুদের কোলে তুলে নেন। বলেন, ‘আমি তোমাদের অপু ভাই, মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু। তোমাদের নিয়ে সুন্দর শরীয়তপুর গড়ে তুলব। এজন্য তোমাদের ভালোভাবে পড়ালেখা করতে হবে। সৎভাবে বড় হতে হবে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে তার সালাম পৌঁছে দিতে বলেন। এমন একজন নেতাকে কাছে পেয়ে এবং তার ব্যবহারে অভিভূত হয় শিশু-কিশোররা। পরে তিনি পথে আরেকটি মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অপুর গাড়িবহর তিন খাম্বা বাজার এলাকায় গেলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাকে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানান, তাকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন। তিনি প্রতিটি দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে কনেশ্বর ইউনিয়নে যাওয়ার পথে ফরকার পাড়ায় জনসংযোগ করেন। কনেশ্বরের ছাতিয়ানি গ্রামে ছাতিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি বলেন, তিনি ডামুড্যার আনাচেকানাচে ঘুরে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা দেখেছেন। তার কাছে কোনো দাবি করতে হবে না। এলাকাবাসী সুযোগ দিলে তিনি সবাইকে নিয়ে শরীয়তপুরের উন্নয়ন করবেন। পরে তিনি শিধলকুড়া ইইনিয়নে বাসস্ট্যান্ড এলাকা, শিধলকুড়া বাজার, ধানকাঠি এলাকার বিভিন্ন হাটবাজার, মডেল হাটবাজার ও বেতমোড়া বাজার এলাকায় ব্যাপক জনসংযোগ করেন। ডামুড্যার এসব এলাকার মানুষ তাকে আপনজন হিসেবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
শিধলকুড়া বাজারে সংক্ষিপ্ত পথসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিয়া নুরুদ্দিন অপু বলেন, পিআর পদ্ধতি এখন ফেক হয়ে গেছে। যারা এটাকে জনসম্পৃক্ততা করার চেষ্টা করেছিল, তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে যেসব অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তা বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি গোষ্ঠী ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে।
পরে তিনি বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ডামুড্যা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
মিয়া নুরুদ্দিন অপু সন্ধ্যার পর ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে পথসভায় যোগ দেন। নেতাকর্মী আর এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে মূলত এ পথসভা জনসভায় রূপ নেয়।
পথসভায় অপু বলেন, ২০১৮ সালে আমি আপনাদের মাঝে এসেছিলাম। তখন ফেসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য রাম দা দিয়ে মাথায় আঘাত করে, ঘাড়ে রড দিয়ে পেটায়। এরপর আমাকে কারাগারে পাঠানো হলো। তখন চিন্তা করলাম, আমাকে কেন হত্যার ষড়যন্ত্র? আমি কারও ক্ষতি করিনি। বুঝতে পারলাম, শরীয়তপুরবাসীকে ভালোবাসার কারণেই আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। আপনাদের দোয়ায় সেদিন বেঁচে গিয়েছি। এখন আপনাদের সেবা করার সুযোগ চাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি তারেক রহমানের এপিএস ছিলাম; তাই ফেসিস্টরা মনে করেছিল, আমি জেলের বাইরে থাকলে সরকার পতন ঘটাব। তাই আমাকে বিনাদোষে জেলে পাঠায়।
অপু বলেন, শরীয়তপুর আমার ঘর, আমার সংসার। সংসারে কী লাগবে, আমি বুঝতে পারি। কোনো দাবি করতে হবে না।
দিনভর গণসংযোগ, পথসভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শরীয়তপুর জেলা, ডামুড্যা উপজেলা, পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন