ডিম, আলুর পর এবার সিন্ডিকেটের নজর ডালের বাজারে। ১৫ দিনের ব্যবধানে ডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। আমদানি করা ডালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তবে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবার ডালের দাম বৃদ্ধি করছে।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। আর ভারত থেকে আসা চিকন মসুর ডাল আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। এখন কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। আর চিকন দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩২ টাকা করে পাইকারিতে। খেসারি ডাল কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৩ টাকায়। আর মটর ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায়। সেইসঙ্গে খাতুনগঞ্জে বেড়েছে ছোলার দামও। বস্তাপ্রতি ছোলার দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা করে। ১৫ দিন আগে যে ছোলা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা, বর্তমানে সেই ছোলার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকা করে।
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, খেসারির ডাল ৯০ টাকা, এ ছাড়া চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়, মুগ ডাল ১৪০ টাকা আর মটর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। এই বাজারের ক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সবকিছুর দামই বাড়ছে। সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। আজকে বাজারে এসে দেখি ডালের দামও বেড়েছে। এসব মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
খাতুনগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি ডাল আমদানি হয়। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার জটিলতায় ব্যয় বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে খাতুনগঞ্জে ডালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে বড় কোনো সংকট তৈরি হওয়ার আগেই এলসি খোলার জটিলতা নিরসন করা দরকার।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও এম এস তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের মালিক ডাল ব্যবসায়ী সোলাইমান বাদশা কালবেলাকে বলেন, সব ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না। যে কারণে ডালের আমদানি কমেছে। আমদানিকারক যাদের কাছে ডাল আছে, তারা বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তবে দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে ক্রেতাও কমে যাওয়ায় বেচা-বিক্রি কমে গেছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ডালের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা এলসি খুলতে পারছি না। ব্যাংকগুলোতে এলসি নিচ্ছে না, ডলারের দাম বেশি—এসব কারণে ডালের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও ডালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিন্ডিকেট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মহিউদ্দিন বলেন, এখানে সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। সবকিছু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করে। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় দাম বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে।
ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ব্যবসায়ীরা বাইরোটেশন একেকটা পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। ডিম, আলুর পর এখন ডালের দাম বাড়াচ্ছে। ডালের পর আবার আরেকটি পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেট দাম বাড়াবে। ডালের দামও সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে। এসবের সুবিধা যেহেতু তারা পেয়েছে, সেই পথে তারা হাঁটবেই। একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ালেও কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বুঝে ফেলেছে, সরকার তাদের কিছুই করতে পারবে না, সেই কারণে তারা সুবিধা নেওয়া ছাড়বে না। সাধারণ মানুষ এতদিন তো ডাল খেতে পারত। তার দামও হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট।
মন্তব্য করুন