রাফসান জানি
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২০ এএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছক কষে চা বিক্রেতা, ছিনতাইয়ে ২ পুলিশ

পরিকল্পনায় ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা
ছিনতাইকারী দুই পুলিশ সদস্য। ছবি : সংগৃহীত
ছিনতাইকারী দুই পুলিশ সদস্য। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর করপোরেট আইডিয়াজ নামে যে প্রতিষ্ঠানের কর্মীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ছিনতাই করেন দুই পুলিশ সদস্য, ওই প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মো. শাজাহানই ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি কাজ করেন আইডিয়াজে। তার সঙ্গে সখ্য হয় প্রতিষ্ঠানের নিচে ব্যবসা করা চা দোকানি হৃদয়ের। এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করার সুবাদে প্রতিষ্ঠানের টাকা কোন ব্যাংকে, কখন নিয়ে জমা দেওয়া হয় বা উত্তোলন করা হয়, তা জানতেন শাজাহান। তাই সহকর্মী আজিম অফিসের টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার সময় তা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন শাজাহান ও হৃদয়। চা দোকানি হৃদয়ের সঙ্গে কনস্টেবল মাহাবুব আলীর আগে থেকেই পরিচয় ছিল। পরিকল্পনার বিষয়টি মাহাবুব আলীকে জানান হৃদয়। অর্ধেক টাকা নেওয়ার শর্তে রাজি হন মাহাবুব। সঙ্গে নেন আরেক কনস্টেবল আসিফ ইকবালকে। এই চারজনের সঙ্গে যুক্ত হন মো. রাসেল নামে চা দোকানি হৃদয়ের বন্ধু। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পুরানা পল্টন লাইনের আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখার ভেতর থেকে মো. আজিমকে জোর করে তুলে নেন দুই পুলিশ সদস্য। তখন আজিমের ব্যাগে ছিল ২০ লাখ ৫ হাজার টাকা। আজিমের নামে মামলা আছে এবং তিনি যে টাকা বহন করছেন, তা অবৈধ। এই কথা বলে টেনেহিঁচড়ে আজিমের কাছ থেকে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেন দুই পুলিশ সদস্য। দুই পুলিশের মাঝখানে আজিমকে বসিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে দুপুর ১২টার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তাকে নামিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান দুই কনস্টেবল। আজিম ফোন করে টাকা ছিনতাই

হওয়ার খবর দেওয়ার পর পল্টন থানা পুলিশকে জানান আইডিয়াজের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন। খবর পেয়ে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় একে একে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে। গ্রেপ্তার হন কনস্টেবল মাহাবুব আলী ও আছিফ ইকবাল। তারা ডেমরা পুলিশ লাইনের পিওএম পূর্ব বিভাগের এফ কোম্পানিতে কর্মরত। গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ শাজাহান, চা দোকানি হৃদয় ও তার বন্ধু রাসেল। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ২০ লাখ ৫ হাজার টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা উদ্ধারও করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দীন মিয়া কালবেলাকে বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী শাজাহান ও চায়ের দোকানি হৃদয়। টাকা কোথা থেকে কোথায় যায়, কখন জমা দেওয়া হয়—এসব বিষয়ে জানতেন শাজাহান। পরিকল্পনা করার পর বাস্তবায়ন করতে দুই পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই কনস্টেবলের মধ্যে মাহাবুবের সঙ্গে হৃদয়ের পূর্বপরিচয় ছিল। কনস্টেবল আছিফকে এ কাজের জন্য ম্যানেজ করেন মাহাবুব।

যেভাবে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও টাকা উদ্ধার:

অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তে নামে পল্টন থানা পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহকদের দেওয়া তথ্যে চা দোকানি হৃদয়কে প্রথমে আটক করে পুলিশ। তিনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে নেন। সেইসঙ্গে জানান, ডেমরা পুলিশ লাইনের কনস্টেবল মাহাবুব, আছিফ, করপোরেট আইডিয়াজের শাজাহান ও রাসেল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

হৃদয়কে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যরা জানতে পারেন, ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন দুই কনস্টেবল ও বাকি ১০ লাখ টাকা আছে তার বন্ধু রাসেলের কাছে। ডেমরা থেকে কনস্টেবল মাহাবুব ও আছিফকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা স্বীকার করেন তারা। তাদের কাছ থেকে একটি ব্যাগে ১০ লাখ টাকা, দুই সেট পুলিশের পোশাক ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করা ইয়ামাহা মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়।

পরে হৃদয়ের দেওয়া তথ্যে বাসাবো টেম্পুস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রাসেলকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৪ লাখ টাকা। বাকি ৬ লাখ টাকা উদ্ধার হয় শাহজাহানপুর থেকে। এই ৬ লাখ টাকা ছিল হৃদয়ের হেফাজতে, যা শুরুতে স্বীকার করেননি তিনি। রাসেলকে আটক করার পর হৃদয়ের কাছে টাকা থাকার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। এই চারজনকে আটক করার পর তাদের তথ্যে করপোরেট আইডিয়াজের অফিস থেকে আটক করা হয় প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মো. শাজাহানকে।

এই শাজাহান আইডিয়াজের অফিসে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবদুল্লাহ আল মামুনের দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই শাজাহান। পরিকল্পনা করে প্রতিষ্ঠানের টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন করপোরেট হাউসে জিনিসপত্র সাপ্লাই করে। শাজাহান মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করত। তার সঙ্গেই মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন মো. আজিম। যিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়েছিলেন। কখন, কে টাকা নিয়ে যাবে, তার সবই জানত শাজাহান। সেই যে পরিকল্পনা করেছে, তা পুলিশ আমাকে এখনো জানায়নি। ২০ লাখ ৫ হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছিল। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে।

আবদুল্লাহ আল মামুনের মামলায় পল্টন থানা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোহাগ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর উদ্যোগ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আজ থেকে সারা দেশে চিরুনি অভিযান

চাকরি দিচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি

তপশিল থেকে নৌকা প্রতীক বাদ দেওয়ার দাবি এনসিপির

হাসিনা ও তার সহযোগী ঢাবি শিক্ষকদের বিচার দাবি সাদা দলের 

কুমিল্লা মিডিয়া ফোরামের নেতৃত্বে মামুন-আতিক

৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক নাসিম 

অভিনয়ের জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে : অপু বিশ্বাস

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল

জবির দুই শিক্ষককে মারধর / তদন্ত কমিটি থেকে সভাপতি-সেক্রেটারির পদত্যাগ

১০

পাইকগাছা-খুলনা সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ

১১

হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলেন অপু বিশ্বাস

১২

সিরিজ বাঁচাতে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে বাংলাদেশ 

১৩

মিটফোর্ডে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২

১৪

‘যে নেতারা তাদের দলে নিয়েছে তাদের আগে বহিষ্কার করা উচিত’

১৫

ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনাল / পিএসজি না চেলসি কার হাতে উঠবে শিরোপা?

১৬

সোমবার শহীদ মিনারে কনসার্ট ও ড্রোন শো

১৭

‘শাটডাউন’ ঘোষণা মিটফোর্ড শিক্ষার্থীদের

১৮

এফিডেভিট জালিয়াতি : কম্পিউটার দোকানের কর্মচারি রিমান্ডে

১৯

সচিবালয় অভিমুখে তথ্য আপারা, পুলিশের বাধা

২০
X