আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৫১ এএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক সহিংসতায় আতঙ্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

রাজনৈতিক অস্থিরতা
পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কেন্দ্র করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, নভেম্বরের মধ্যে সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার কথা। ওই সময়ের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নও শেষ করতে হবে। স্কুলগুলোর প্রস্তুতি ছিল সেভাবেই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের মহাসমাবেশ, হরতাল, অবরোধ এবং সেগুলোর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচি ঘিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা আছে। এজন্য অনেক স্কুলে দাপ্তরিক কাজ চললেও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আবার যেসব স্কুলে ক্লাস হয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কম ছিল।

জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৮ অক্টোবর শনিবার মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। কর্মসূচি ছিল জামায়াতেরও। অন্যদিকে সেই কর্মসূচি প্রতিহতে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। এদিন সংঘর্ষের পর দিন রোববার দেশব্যাপী হরতাল করে বিএনপি। এক দিন পর থেকেই শুরু হয় টানা তিন দিনের অবরোধ। সেই অবরোধ শেষ হতে না হতেই ৫ ও ৬ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়। আজ সে অবরোধ শেষ হলেও এমন কর্মসূচি চলমান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক নানা কর্মসূচির কারণে অধিকাংশ স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। তবে কয়েকটি বেসরকারি স্কুল ভার্চুয়ালি ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

অভিভাবকরা বলেন, সরকারবিরোধী দলগুলো পুরো নভেম্বর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে পাল্টা কর্মসূচিতে মাঠে রয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছেন। তাদের ক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতার বছরের শেষ পরীক্ষাগুলো সময়মতো না হলে সন্তানদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সম্প্রতি রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতির তথ্য পাওয়া যায়। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে চার বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে ভার্চুয়াল ক্লাস। এ ছাড়া উইলস লিটল ফ্লাওয়ারসহ বেশ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত। দলগুলোর প্রতি অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন রাজনীতি করবেন না।

উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অনেকে ভয়ে আসছে না। আমার প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে হওয়ায় অন্যগুলোর চেয়ে উপস্থিতি তুলনামূলক ভালো। তবে সন্তোষজনক নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পরীক্ষা পেছালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন এলোমেলো হবে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কঠোর কর্মসূচিতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। কর্মসূচিতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে নিরাপত্তার অভাবে কয়েকদিন বাসা থেকে বের হই না। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি সবাইকে বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) বেলাল হোসাইন বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলগুলো বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে কিছু বলার নেই।

শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার ঘটনা সামনে আরও বাড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক। তাই স্কুল-কলেজকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখার অনুরোধ জানান তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দেশে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা গণমানুষের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া। সে অনুযায়ী কর্মসূচি দেন। শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ বরাবরই কম। এ কারণে শিক্ষা নিয়ে সৃষ্ট কোনো সংকটেও দলগুলো সক্রিয় নয়। এজন্য দেশব্যাপী যখন কোনো আন্দোলন হয়, তখন শিক্ষা গুরুত্ব পায় না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে যাতায়াত করে। কিন্তু অবরোধ মানেই বাচ্চারা স্কুলে যাবে না। অভিভাবকরা সংগত কারণেই তাদের সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সরকারি বা বিরোধী দল কারোরই তা বিবেচনায় নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ক্ষতি জমে ‘অসমাপ্তের পাহাড়’ হবে। এতে মুখ থুবড়ে পড়বে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতের মাটিতে আ.লীগের তৎপরতা নিয়ে ২ দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থান 

শিক্ষককে ছাত্রীর ছুরিকাঘাত, থানায় মামলা

৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি

হোটেলকক্ষে গোপন ক্যামেরা? মোবাইল দিয়ে শনাক্ত করবেন যেভাবে

পদাবনতি দিয়ে বদলি হলেন সেই কৃষি কর্মকর্তা

আমির খানের গোপন সন্তান থাকার অভিযোগ ভাই ফয়সালের

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজ পায়নি ৫৭৬৫ জন

শিল্পাকে বিয়ে করতে কঠিন শর্ত মানেন রাজ

ভুটানকে হারিয়ে সাফে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

৩১ দফার সমর্থনে বিএনপি নেতা ফয়সাল আলীমের গণসংযোগ ও পথসভা

১০

ভারতে আ.লীগের রাজনৈতিক অফিস চালু নিয়ে কড়া অবস্থানে সরকার

১১

সাতক্ষীরায় জেল পলাতক ১১ মামলার আসামি গ্রেপ্তার

১২

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিক্ষিকাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা স্কুলছাত্রের

১৩

শিল্টনের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে ইতিহাস গড়লেন ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার

১৪

ফিল্ম স্টাইলে ব্যবসায়ীর বসতঘরে গুলি

১৫

জানা গেল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে চুলের মুঠি ধরে চড় মারার কারণ

১৬

ঘরের ভেতর জামাকাপড় শুকাচ্ছেন? হতে পারে যেসব বিপদ

১৭

ডিএমপির সাবেক এডিসি নাজমুল বরখাস্ত

১৮

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নতুন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন

১৯

পাথরকাণ্ডে দুদকের তালিকায় সেই মোকাররিম

২০
X