রাফসান জানি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৫ এএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তরাঞ্চলের সিন্ডিকেট প্রধান ইউপি চেয়ারম্যান

মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস
সাজ্জাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
সাজ্জাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের উত্তরাঞ্চলের সিন্ডিকেট প্রধান হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র কিনে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে অন্তত ৩০ জন ভর্তির সুযোগ পাওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাজ্জাদ ইউপি চেয়ারম্যান হলেও ২০১০ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি তিনি দিনাজপুরের বিরামপুরের একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এ সুবাদে মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি। উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করেন সাজ্জাদ।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অব্যাহতভাবে অভিযান চালাচ্ছে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ। ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনাজপুর, নীলফামারী, ঢাকা থেকে প্রশ্নফাঁস চক্রের উত্তরাঞ্চলের সিন্ডিকেট প্রধান সাজ্জাদ ও পাঁচ চিকিৎসকসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিরা হলেন ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, আবদুল হাফিজ অরফে হাপ্পু, ডা. সোহানুর রহমান সোহান ও ডা. তৌফিকুল হাসান রকি। ঢাকা থেকে ডা. ফয়সাল আলম বাদশা ও ডা. ইবরার আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা কালবেলাকে বলেন, গ্রেপ্তার সবাই মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্য ও ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে এ পর্যন্ত ২৩ চিকিৎসকসহ ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, সাজ্জাদ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। তিনি ২০১৭ সালের প্রশ্নফাঁসের আরেকটি মামলারও আসামি। একাধিক আসামির জবানবন্দিতেও সাজ্জাদের নাম এসেছে। জসিমের কাছে পাওয়া ডায়েরিতেও তার নাম ও ফোন নম্বর পাওয়া গেছে।

ফাঁস করা প্রশ্ন নিজের কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন সৈয়দপুরের বিটস কোচিং সেন্টারের মালিক হাপ্পু। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালেরও মালিক। এর আগে গ্রেপ্তার ডা. জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন। যারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকেও শনাক্ত করেছে সিআইডি।

তাদের একজন ডা. সোহানুর রহমান সোহান। হাপ্পুর কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্নপত্র কিনে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।

চেয়ারম্যান সাজ্জাদের প্রশ্ন কিনে জাতীয় মেধা তালিকায় ১৫তম হয়েছিলেন ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল। তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এরপর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইল্যান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ডা. ফয়সাল পরবর্তী সময়ে নিজেও প্রশ্নফাঁসের সঙ্গেও জড়ান।

ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি এর আগে গ্রেপ্তার ডা. রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করেন। রকি বিটস কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু এবং রনি মিলে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. রনি জবানবন্দিতে ডা. রকির কথা স্বীকার করেন।

রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করা ডা. ইবরার আলমও ডা. রনির সহযোগী ছিলেন। তার কথাও রনি জবানবন্দিতে বলেছেন। ইবরার ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ডা. রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। তাদের অনেকেই চান্স পায়।

রায়হানুল ইসলাম সোহান এবং বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁসকৃত প্রশ্ন পায় এবং বকুলকে তা সরবরাহ করে। বকুল তার চার ভর্তিচ্ছু ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে। চারজনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে।

ডা. সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে প্রশ্নফাঁস করে।

সিআইডি জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় তারা। ২০২০ সালের জুলাইয়ে এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তার তথ্যে সিআইডি প্রথমবার জানতে পারে, ২০১৩, ১৫ ও ১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তার তথ্যেই গ্রেপ্তার হয় জসিম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হেলমেটবিহীন তেল দিচ্ছে না দিনাজপুরের পাম্পগুলো

তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন, সোমবার দেশজুড়ে বৃষ্টি

ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন / মিজান-লাভলু-বাশার পরিষদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

কর্ণফুলী নদীতে ভাসছিল নিখোঁজ জেলের লাশ

নেতাকর্মীদের যে বার্তা দিলেন জামায়াতের আমির

‘ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখতে হবে’

শেখ হাসিনার চিত্ত সর্বদা ভয়শূন্য : ধর্মমন্ত্রী

পুকুরপাড়ে খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে ভাই-বোনের মৃত্যু

অপশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান জরুরি : আ স ম রব 

ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও রেলের রেয়াতি প্রথা বহালের দাবি

১০

ইসলামী আন্দোলনের নেতা বেলায়েত হোসেনের ইন্তেকাল

১১

এক মাস পর জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব

১২

আইসিজের কাঠগড়ায় ইসরায়েল, খালাস পেতে যা বলল

১৩

স্ত্রী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামী গ্রেপ্তার

১৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সারা দেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ

১৫

সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বেধড়ক পেটাল ছাত্রলীগ

১৬

বিএনপির অসুস্থ নেতাদের খোঁজ নিলেন আবদুস সালাম 

১৭

বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : নাছিম

১৮

ঝিনাইদহে প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত

১৯

বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে শিশুর মৃত্যু

২০
X