শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:২৩ এএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শীতে পোড়া রোগীর ৭০% নারী-শিশু

বছরে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার ৮ লাখ
শীতে পোড়া রোগীর ৭০% নারী-শিশু

শীত এলেই বাড়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ও পোড়া রোগী। এসব রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। সাধারণত শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে বৃদ্ধ ও নারীরা বেশি দগ্ধ হন, আর শিশুদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ এ ঘটনা ঘটে গোসলে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে অসতর্কতায়। এ দুই উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ দগ্ধ হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তা ছাড়া রোগী ও স্বজনের কথায়ও অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অসতর্কতা ও অসচেতনতার বিষয়টিই উঠে এসেছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোড়া কোনো রোগ নয়, এটি দুর্ঘটনা। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও ভিন্ন। দগ্ধের ধরন ও মাত্রাভেদে টানা দুই বছরও চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। টিমওয়ার্কভিত্তিক চিকিৎসা লাগে। তবে এখনো উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পোড়া রোগীর সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এতে

দূর-দূরান্ত থেকে আসা দগ্ধ ব্যক্তিদের ৫০ ভাগই ‘গোল্ডেন আওয়ারের’ মধ্যে (দুর্ঘটনার প্রথম ২৪ ঘণ্টা) হাসপাতালে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়। তখন শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি বেড়ে যায়। অধিকাংশ পোড়া রোগী জীবনভর বয়ে বেড়ান শারীরিক সমস্যা।

জানা গেছে, প্রতিবছর বিভিন্নভাবে প্রায় ৮ লাখ মানুষ অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়। পোড়া রোগীদের অনেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যথাসময়ে বার্ন ইউনিটে আসতে পারেন না। এ কারণে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়াসহ অনেককে পঙ্গুত্বও বরণ করতে হয়।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের একাধিক চিকিৎসক বলেন, প্রথমত দেশের মানুষ স্ক্যাল্প বার্ন তথা গরম পানি, গরম তেল বা গরম কোনো তরল পদার্থ দ্বারা পোড়ে বেশি। দ্বিতীয়ত, ইলেকট্রিক বার্ন অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হন। তৃতীয়ত, ফ্লেম বার্ন তথা সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে পুড়ে থাকে যেমন; মোমবাতি, কোরোসিন বাতি, চুলা বা অন্যভাবে শাড়ি, ওড়না, জামা-পাজামা বা পরিধেয় বস্ত্রে আগুন লাগা। চতুর্থত, কেমিক্যাল বার্ন তথা দাহ্য পদার্থ জাতীয় রাসায়নিকে পোড়া।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে ২ হাজার ৮৫২ জন, জরুরি বিভাগে ৩ হাজার ৩১ জনসহ মোট ৫ হাজার ৮৮৩ জন পোড়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৬৯৩ জন। শীত শুরুর পর গত অক্টোবরে বহির্বিভাগে ৫ হাজার ১ জন এবং জরুরি বিভাগে ৯৮২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। একইভাবে নভেম্বরে বহির্বিভাগে ৪ হাজার ৪৮১ জন এবং জরুরি বিভাগে ৮১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। গত বছরের এই সময়ে চাপ থাকলেও

হরতাল-অবরোধের কারণে এবার হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, অসচেতনতাবশত আগুনে পুড়ে জরুরি বিভাগে দৈনিক ৫০ জনের বেশি এবং বহির্বিভাগে আড়াইশ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আন্তঃবিভাগে অন্তত ৫০০ জন ভর্তি থাকছের। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী, যাদের বেশিরভাগই ঢাকার আশপাশের বাসিন্দা।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক দগ্ধ রোগী আসছেন, যারা

দরজা-জানালা বন্ধ রেখেই গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গিয়ে অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। অনেকে পানি ও খাবার গরম করতে গিয়ে তা শরীরে ফেলছে। বাসার গ্যাস সরবরাহ লাইনে লিকেজ বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও দগ্ধ হয়ে আসছে। অনেকে পরনের পোশাকে আগুন লেগে দগ্ধ হয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার বলেন, এই ইউনিটে ৩০০ শয্যা রয়েছে। বর্তমানে গড়ে ৩০০-র ওপরে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শীতের আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ জন। এখন ওয়ার্ড ছাড়াও বারান্দার বিছানায় রোগী ভর্তি থাকছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী আসছেন। এখানকার রোগীর মধ্যে ৭০ শতাংশই ঢাকার বাইরের; তাদের মধ্যে নারী-শিশু বেশি।

পোড়া রোগী ব্যবস্থাপনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও জাতীয় কো-অর্ডিনেটর ডা. সামন্তলাল সেন কালবেলাকে বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আগুন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের ব্যবহারে সর্বোচ্চ সচেতনতা থাকা; গরম পানি পাতিল বা ডেকচির পরিবর্তে বালতিতে বহন করা উচিত। সচেতনতা বাড়াতে সরকারকে দাপ্তরিকভাবে, গণমাধ্যম দায়িত্ব নিয়ে, চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে প্রচারপত্র বিলি, মাইকিং করতে হবে। সেলিব্রেটি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে পরিবার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

১০

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

১১

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

১২

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

১৩

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

১৪

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১৫

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১৬

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১৭

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৮

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৯

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

২০
X