১৪ ডিসেম্বর রাত ২টা। দিনের কোলাহল শেষে রাজধানী তখন ঘুমন্ত নগরী। কারওয়ান বাজার মোড়ে এক প্রাইভেটকার থামার সিগন্যাল দেয় কয়েকজন, সঙ্গে অসুস্থ স্বজন। চালককে হেমায়েতপুর পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে তারা। প্রথমে যেতে না চাইলেও মানবিক কারণে রাজি হন চালক কাজল চন্দ্র মোহন্ত। ৯০০ টাকায় ভাড়া মিটিয়ে রওনা হন চালক এবং পাঁচ যাত্রী। তবে এ ঘটনাই কাল হয়ে দাঁড়ায় কাজলের।
গাড়িটি হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা চালকের গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে। এরপর চাকু ঠেকিয়ে কাজলকে গাড়ির পেছনের সিটে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। পরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মারধর করে চালককে ছুড়ে ফেলে দেয় গাজীপুর কালিয়াকৈর রেলগেট এলাকায়।
শুধু গাড়ি ছিনতাই করেই থেমে থাকেনি এই চক্র। চালককে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার আগে তার মোবাইল নম্বর নিয়ে যায় তারা। পরে ওই নম্বরে ফোন করে ২ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে নিতে বলে তারা। তখন গাড়ির মালিক দুই দফায় তাদের ৬০ হাজার টাকা দেন। তবে সেই গাড়ি আর ফিরিয়ে দেয় না। ওই গাড়ি নিয়েই তারা আবার ছিনতাইয়ে বের হয়। গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে পণ্যবাহী পিকআপ ছিনতাই করে ওই চক্র। ওই পিকআপের চালক মো. দেলোয়ার ঢাকার শ্যামবাজার থেকে আদা-রসুনের বস্তা নিয়ে গাজীপুর যাচ্ছিলেন। পথে আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকায় এই চক্রের কবলে পড়েন তিনি। কাজলের কাছ থেকে ছিনতাই করা প্রাইভেটকার দিয়ে ওই পিকআপের গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে তার হাত-পা বেঁধে মালপত্র ভর্তি পিকআপ ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা। আর দেলোয়ারকে একটি পুকুরে ফেলে দেয়। যদিও নিজের চেষ্টায় পুকুরে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান দেলোয়ার।
এরপর ওই দুই চালক অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের পর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গত শনিবার গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলো মো. রানা, মো. বিশাল, মো. রুবেল, মো. রাব্বী ও নয়ন ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা প্রাইভেটকার, পিকআপ, চারটি মোটরসাইকেল ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
চালক কাজল চন্দ্র মহন্ত জানান, তিনি পেশায় একজন রেন্ট-এ-কারের গাড়িচালক। মানবিক দিক বিবেচনা করে এত রাতে যাত্রী নিয়ে যাওয়াই কাল হয় তার। তিনি বলেন, প্রথমে ঘটনাস্থল কারওয়ান বাজার হওয়ায় কলাবাগান থানায় অভিযোগ দিই। এরপর ঘটনার দুদিন পর ডিবিতে আসি। এর কয়েকদিন পরই ডিবি থেকে জানানো হয় যে, গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। পরে আমি এসে আসামিদের শনাক্ত করি।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, এই চক্রের সদস্যরা একটা সময়ে মোবাইল ছিনতাই করত। এরপর তারা গাড়ি ছিনতাই শুরু করে। সাধারণত তাদের সবার পেশা লেগুনাচালক ও হেলপার। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। দুই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কলাবাগান ও আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর ডিএমপি গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম ছায়া তদন্তে নেমে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) লিডার রাকিবুল হাসান ভূঞার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।