রাজধানী ঢাকার মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১১৯টি। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের ৫৫টি ওয়ার্ড বা অর্ধেক ঢাকাই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে দক্ষিণের ২৮ ও উত্তরের ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আয়োজিত কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, গত ১৮ থেকে ২৭ জুন ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় বর্ষা মৌসুমপূর্ববর্তী এ জরিপ চালানো হয়। উত্তরের ৪০টি এবং দক্ষিণের ৫৮টি মিলিয়ে দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। এসব ওয়ার্ডের ৪ হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে উত্তরে ২৭২টি এবং দক্ষিণে ২৭৮টি বাড়িতে লার্ভা মিলেছে।
কোনো এলাকায় মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা হয়। এই বিচারে ঢাকা উত্তর সিটির ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ। মিরপুর, পল্লবী, মাজার রোড, পীরের বাগ. মনিপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, বনানী, গুলশান, বারিধারা, মহাখালী, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, কারওয়ানবাজার, তেজতুরী বাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, বায়তুল আমান, মগবাজার, ইস্কাটন, বাড্ডা পড়েছে এসব ওয়ার্ডের আওতায়।
আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। গোরান, মেরাদিয়া, বাসাবো, সবুজবাগ, মুগদা, মাদারটেক, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমন্ডি, রায়েরবাজার, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফেন্ট রোড, মিন্টো রোড, কাকরাইল, হাজারীবাগ, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার, ওয়ারী, সূত্রাপুর, মিলব্যারাক, সায়েদাবাদ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মীরহাজিরবাগ, দোলাইরপাড়, গেন্ডারিয়া, জুরাইন এবং কামরাঙ্গীরচর এসব ওয়ার্ডের আওতায় পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই ফলাফলের মানে হলো, এসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। উত্তর-দক্ষিণ যাই বলি না কেন, আমরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবু আমাদের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও লোকবলের কোনো ঘাটতি নেই।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা, অপর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরিন, কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক প্রমুখ।
গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।
মন্তব্য করুন