শিতাংশু ভৌমিক অংকুর
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রাণের মেলা

ছোট-বড়র ভিড়ে মুখর আঙিনা

ছোট-বড়র ভিড়ে মুখর আঙিনা

বইমেলার প্রথম শুক্রবার ছিল গতকাল। প্রথম ছুটির দিনে জমে উঠেছিল এ আয়োজন। স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন ছুটি থাকায় মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়। এ মেলার দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই শুরু হয় বইপ্রেমীদের আনাগোনা। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। স্টলে স্টলে ঘুরে বইয়ের মলাট উল্টে পাল্টে দেখে-কিনে সুন্দর সময় পার করেন পাঠক ও দর্শনার্থীরা।

লেখক-প্রকাশকরা আশা করছেন, দিন যত যাবে, পাঠকদের উপস্থিতি আরও বাড়বে। দ্বিতীয় দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিন সকালে প্রাণের মেলায় প্রত্যেকেই বই কেনার চেয়ে ঘুরে ঘুরে বই দেখার প্রতিই মনোযোগী বেশি ছিলেন। প্রকাশকরা বলেন, মেলায় জনসমাগম বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। বইপ্রেমীরা আসছেন, বই দেখছেন। সংখ্যায় কম হলেও বই কিনছেন অনেকেই।

দ্বিতীয় দিন মেলায় এসেছিলেন লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক। তিনি প্রথমা প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের ভেতর থেকে পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি পাঠকদের নিয়মিত বই পড়ার আহ্বান জানান।

তরুণ কবি সৈকত আমিন শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবারের বইমেলা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেষ বইমেলা হতে পারে। কারণ, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিকল্প জায়গা দেখার কথা বলেছেন। এখানেই আমরা বুঝতে পারি হয়তো এটাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেষ বইমেলা। বাংলা একাডেমির পাশে এত বড় প্রকাশনী-লেখক-পাঠক সমাবেশ আর কোথাও হবে না। বইমেলার যে প্রাণোচ্ছ্বল চিত্র দেখতে পাই, তা এ বাংলা একাডেমির পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কারণে। যদি আমরা অমর একুশে বইমেলাকে বাংলা একাডেমির পাশে রাখতে না পারি, তাহলে এ আয়োজন তার প্রাণোচ্ছ্বলতা হারাবে।

উচ্ছ্বাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মুনীর আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এবারের মেলায় আগের চেয়ে অনেক বেশি উপস্থিতি দেখা যাবে। পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে আসবেন। কারণ, সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক ভালো। তাই পাঠকরা আগের চেয়ে খুব সহজে ও কম সময়ে মেলায় আসতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমাদের পাঠক সমাজের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিও আমরা লক্ষ করেছি। যা আমাদের জন্য বড় প্রত্যাশার জায়গা, যা ইঙ্গিত দেয়—এবারের বইমেলা আগের চেয়ে আরও ইন্টারেক্টিভ হবে।’

মেলার দ্বিতীয় দিনের হিসাবে বিক্রি আগের বছরগুলোর তুলনায় ভালো বলছেন বিক্রয়কর্মীরা। সময়ের সঙ্গে মেলা আরও মুখর হয়ে উঠবে বইপ্রেমীদের পদচারণায়—এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। এবার বইয়ের দাম বাড়লেও প্রথম থেকেই যেভাবে পাঠকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বিক্রি আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন তারা।

অর্জন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ওয়াসিয়া নূর সারা বলেন, মেলার দ্বিতীয় দিন বিবেচনায় দর্শক ও ক্রেতার সংখ্যা ভালোই বলতে হবে। দ্বিতীয় দিনে মেলা জমে উঠতে শুরু করেছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার মেলার পরিবেশ সত্যিই ভালো। দ্বিতীয় দিনে এমন গোছানো পরিবেশ আগে দেখা যায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় ও বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।

মেলার দ্বিতীয় দিনে ঘুরতে আসা রেদোয়ান আহমেদ বলেন, এবারের মেলায় আজ প্রথম ঘুরতে এসেছি। বই কিনব দু-এক দিন পর থেকে। আজ শুধু প্রকাশনাগুলোর স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ছুটির দিন থাকায় মিরপুর থেকে ঘুরতে এলাম মেট্রোরেলে চেপে অল্প সময়ে মেলা প্রাঙ্গণে। আশা করি, মেলায় নিয়মিত আসতে পারব দ্রুত সময়ের মধ্যে মেট্রোরেলে চড়ে। তিনি আরও বলেন, তরুণ লেখকদের প্রতি আমার ঝোঁক বেশি। এ ছাড়া নামকরা লেখকরাও আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। বইমেলার প্রতি আমার ছোটবেলা থেকেই টান। মেলার এবারের স্টল বিন্যাস পাঠক ও দর্শনার্থীদের নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে। ঘুরে ঘুরে দেখছি। বই পছন্দ করছি, কিনছি। আজ দুটি বই কিনলাম। আরও কিছুদিন মেলায় আসব। আরও কয়েকটা বই কিনব।

দ্বিতীয় দিনের মেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে শিশুরা। কেউ কেউ বইও কিনেছে রং-বেরঙের। অন্য বছরগুলোর মতো এবার ছুটির দিনে ছিল শিশুদের বই নিয়ে আলাদা ‘শিশু চত্বর’। মেলায় এ চত্বরে শিশুদের আধিক্য দেখা গেছে। গতকাল বইমেলায় সকাল ১১টায় সিসিমপুর কিডস কর্নারের উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নূরুল হুদা। এ সময় সিসিমপুরের টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরিসহ অন্য অতিথি এবং শিশুরা উপস্থিত ছিল।

এবারের মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে। বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে থাকবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

গত বৃহস্পতিবার মেলার প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর প্রচুর পাঠকের আনাগোনা শুরু হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে। তবে প্যাভিলিয়ন আর স্টলগুলো গুছিয়ে না উঠতেই শুরু হয় বৃষ্টি। মাঘের শেষ সময়ের এই বৃষ্টি পণ্ড করে দেয় মেলার প্রথম দিনের সব আয়োজন। বৃষ্টি দিয়ে শুরু হলেও এবারের বইমেলা নিয়ে ভীষণ আশাবাদী প্রকাশকরা। তবে বইমেলার আসল উদ্দেশ্য যেন সাধিত হয়, সেদিকেও তারা সচেষ্ট। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে টানা আধা ঘণ্টার মতো টিপটিপ বৃষ্টি হয়। সঙ্গে ছিল বাতাসও। বৃষ্টি থেমে গেলে আবার পাঠকদের আনাগোনা শুরু হয়। বিক্রি হয় কিছু বইও।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: বইমেলা ২০২৪
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জানাজায় ব্যস্ত খামারি, সেই সুযোগে ৮০০ হাঁস লুট

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক, অধ্যাদেশ জারি

‘বিএনপিকে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের নেতারা বিশ্বাস করে’

৩৬ হাজারে বিক্রি ২৪ কেজির কোরাল

কিছু বিষয় আলোচনা না হলেও জুলাই সনদে রাখা হয়েছে : সালাহউদ্দিন

খাবারে বিষক্রিয়া, বন্ধ হলো রণবীরের সিনেমার শুটিং

ভিটাসহ শ্বশুরবাড়ি বিক্রি করে দিলেন নাজমুল

ব্রাজিল দলে জায়গা হারাচ্ছেন ভিনি!

সৌন্দর্যের রহস্য ফাঁস করলেন সানি লিওন

কম্পিউটারের জন্য নিখোঁজ, ১০ দিনেও মেলেনি রাকিবের সন্ধান

১০

বুকে ব্যথা, জ্ঞান হারালেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী

১১

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনয়নপত্র ক্রয় ঠেকাতে মব করা হয়েছে : রিজভী

১২

আশুলিয়ায় হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

ওয়াইফাইয়ের গতি কম? বাড়াবেন যে ১০ উপায়ে

১৪

জেনেভা ক্যাম্পের হত্যা মামলায় ২৬ আসামিকে গ্রেপ্তার  

১৫

রিয়ালের চুক্তির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ভিনি

১৬

মাউশির চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

১৭

সচিবালয়ের সামনে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের অবস্থান

১৮

শিক্ষার্থীদের রাতের আড্ডা বন্ধে চৌদ্দগ্রাম ইউএনওর অভিযান

১৯

কাজে আসছে না কোটি টাকার নৌ অ্যাম্বুলেন্স

২০
X