দ্বিতীয় দফায় সংশোধন করা হয়েছে গ্রাম আদালত আইন। সংশোধিত আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠতে পারে আজ রোববার। সংশোধনীতে মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বর্তমান আইনে বেঁধে দেওয়া সময় থেকে ১৫ দিন কমানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে।
এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে সকাল ১০টায় মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সাধারণত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়ে থাকে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিদায়ী সরকারের মন্ত্রিসভায় সংশোধিত আইনটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে নতুন সরকারের সময় এখন আবার আইনটিতে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য আজকের বৈঠকে তোলা হতে পারে।
সূত্র জানায়, গ্রাম আদালত (সংশোধিত) আইন-২০২৪ এ জরিমানার পরিমাণ চার গুণ বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে গ্রাম আদালতের আর্থিক ক্ষমতা (জরিমানা করার ক্ষমতা) মাত্র ৭৫ হাজার।
বিদ্যমান আইনে ৬গ (২) উপধারায় বলা আছে, মামলার শুনানির কার্যক্রম শুরু হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে শর্ত থাকে, ওই সময়সীমার মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে গ্রাম আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে ৩০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করবে। কিন্তু ৩০ দিন সময় কমিয়ে সংশোধিত আইনে ১৫ দিন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের সমন্বয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। কোনো সিদ্ধান্তে আসার সুবিধার্থে এ সংখ্যা বিজোড় রাখতে হয়। কিন্তু কোনো কারণে একজন অনুপস্থিত থাকলে আদালতের সদস্য সংখ্যা চারজন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া আগের আইনের কয়েকটি জায়গায় থাকা ‘নাবালক’ শব্দটির পরিবর্তে সংশোধিত আইনে ‘শিশু’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৩ সালে গ্রাম আদালত আইন সংশোধন করে জরিমানা করার ক্ষমতা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করেছিল সরকার। চেয়ারম্যানদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফের জরিমানার পরিমাণ বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। ২০০৬ সালে প্রথম গ্রাম আদালত আইন প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে গ্রাম আদালত। গ্রামাঞ্চলের কিছু কিছু মামলার নিষ্পত্তি এবং তৎসর্ম্পকীয় বিষয়াবলির বিচার সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর আওতায় গঠিত একটি স্থানীয় মীমাংসামূলক তথা সালিশি আদালতই হলো গ্রাম আদালত। গ্রাম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবে সংক্ষুব্ধ পক্ষ।
ছোটখাটো বিষয়ে মানুষ যেন আদালতের শরণাপন্ন না হয়ে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পন্ন করে নেয়, সেজন্য গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী করার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গ্রাম আদালতকে সক্রিয় করতে এবং মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়, সেজন্য প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সময় সময় আইন সংশোধনেও হাত দিচ্ছে সরকার।