মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৪ এএম
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নগদ টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে

মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জনে সংশয়
নগদ টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে

মানুষের হাতে নগদ টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বরের পর ডিসেম্বরেও এই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। গত নভেম্বরে ব্যাংকের বাইরে ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে সেটি আরও বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন যে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে রয়েছে, তার লক্ষ্য অর্জনে নীতি সুদহারসহ সব ধরনের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের হাতে থাকা অর্থ বেশি সুদের আশায় ব্যাংকে আসার কথা; কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। অর্থাৎ মানুষের হাতে টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের সাম্প্রতিক তারল্য সংকট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত নেতিবাচক খবর মানুষের মনে ব্যাংকের প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে। তারা ব্যাপক হারে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে জমা রাখছে। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায়ও নগদ অর্থের চাহিদা ব্যাপক বাড়ছে। সাধারণ মানুষ নগদ টাকায় কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। তা ছাড়া গুটিকয়েক শপিংমল আর হোটেল-রেস্টুরেন্ট বাদ দিলে দেশের কোথাও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা নেই। দোকানিরাও চাইছেন লেনদেন নগদে হোক। তা ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ হস্তান্তর করলে তার ওপর শুল্ক দিতে হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতিটি লেনদেনে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে এবং নগদ লেনদেন করছে। তদুপরি অসাধু ব্যবসায়ী, অসৎ কর্মচারী এবং চোরাকারবারিরাও ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে আগ্রহী হচ্ছে না। সব কিছু মিলিয়েই ব্যাংকের বাইরে বাড়ছে নগদ অর্থের প্রবাহ। এর ফলে অবারিত হচ্ছে ছায়া অর্থনীতির দ্বার।

সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনকেন্দ্রিক নগদ টাকার লেনদেন সর্বত্র বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জানিয়ে দাবি করেছেন, এখন যেহেতু দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং ইতোমধ্যে নতুন সরকারও গঠন হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কঠোর মুদ্রানীতি প্রয়োগে অনড় রয়েছে। এতে আশা করা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোয় হয়তো ব্যাংকে টাকার প্রবাহ বাড়তে শুরু করবে। তবে কোনো কারণে যদি চলমান এই প্রবণতা অব্যাহত থেকেই যায়, তাহলে কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক যে মুদ্রানীতির কথা বলছে, সেটি কোনোভাবেই বাস্তবায়ন হবে না, কারণ একশ্রেণির মানুষ প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা ধরে রেখেছে। এ অবস্থায় সুদহার বাড়িয়ে কিংবা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে এখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, কোনো দেশে দুর্নীতি বাড়লে সেখানে নগদ অর্থের চাহিদাও বাড়ে। বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রেই ঘুষ, দুর্নীতিসহ কালো টাকার দৌরাত্ম্য বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে এ ধরনের সব লেনদেনই নগদ টাকায় হচ্ছে। এ কারণে এখানে নগদ অর্থের চাহিদা কমছে না, বরং বাড়ছে। সরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীরা নগদ অর্থই ঘরে স্তূপ করে রাখছেন। তারা নগদ টাকা দিয়েই কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছেন। তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ায় নগদ অর্থের চাহিদা কমে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাংক খাতের ব্যাপ্তি অনেক বড় হলেও নগদ টাকার চাহিদা কমছে না। এটি অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতের ব্যর্থতা। বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন কার্ড কিংবা প্লাস্টিক মানিতে লেনদেন করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও মানুষ বাজার-সদাই করার ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেটি হয়নি। দেশের বড় পাইকারি বাজারগুলোয় এখনো নগদ লেনদেন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণেও ব্যাংকের বাইরে টাকা বেশি থাকতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ কোনো উৎসব এবং অনুষ্ঠান উপলক্ষেও নগদ টাকার চাহিদা বাড়তে পারে। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও নগদ টাকার চাহিদা কিছুটা বেড়ে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নীতির কারণে সেই টাকা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। যার ফলে ডিসেম্বরে ব্যাংকের আমানতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে আমানতের সুদহারও বাড়ছে। এ কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহিত হচ্ছেন। ইস্যুকৃত নোট বাড়লেও সেটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, যা এর আগের মাস নভেম্বরে ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসেও ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে আড়াই হাজার কোটি। এর আগে, গত মে মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৯ কোটি। পরের মাস জুনে ব্যাংকের বাইরে পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসেই ব্যাংকের বাইরে চলে যায় ৩৬ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, যা সর্বোচ্চ। এত পরিমাণ টাকা ব্যাংকের বাইরে থাকার পরিপ্রেক্ষিতেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টিউমারের ভারে থমকে আছে শিশু মুকাব্বিরের দুরন্তপনা

১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

নিখোঁজ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা উদ্ধার

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত মাহবুবুল আনামের

চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

এবার কোথায় বসবেন তারা

খাবার প্লেটের আকারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের কী সম্পর্ক রয়েছে

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৭৫ বাংলাদেশি

কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়াল

বিপিএল খেলা তারকা ক্রিকেটার প্রথমবার নাম লেখালেন সিপিএলে

১০

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রিভিউ শুনানি দ্রুত করতে সব রাজনৈতিক দলের আবেদন

১১

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

১২

নেতানিয়াহুর ‘দুর্বল’ মন্তব্যের শক্তিশালী জবাব দিল অস্ট্রেলিয়া

১৩

এ যেন বক-পানকৌড়ির অভয়ারণ্য

১৪

সিপিএলে ব্যাট হাতে সাকিব ব্যর্থ হলেও জয় পেয়েছে দল

১৫

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দাবির প্রতিবাদে মধ্যরাতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৬

লুটের ২ শতাংশ পাথরও উদ্ধার হয়নি

১৭

ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে অবস্থান

১৮

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

১৯

যে কারণে লিগস কাপের কোয়ার্টারে ছিলেন না মেসি

২০
X