অভিযানের আতঙ্ক কাটিয়ে জমে উঠছে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সাতমসজিদ রোডের রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট ও ইফতারির বাজারগুলো। এই রোডের ইফতারি বাজারের সুখ্যাতি রয়েছে গোটা শহর জুড়ে। এই রোডের দুই পাশে রয়েছে প্রায় অর্ধশত নামিদামি আর জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট। প্রতি বছর রমজানেই ইফতারির বিশেষ আয়োজন থাকে এখানকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের। কিন্তু সম্প্রতি রাজধানী বেইলি রোডের একটি ভবনের রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসে ফায়ার সার্ভিস ও নগর কর্তৃপক্ষ। ফায়ার সার্ভিস অভিযান চালায় ধানমন্ডির জিগাতলার কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবন এবং সাতমসজিদ রোডের রূপায়ণ জেড আর প্লাজায়।
কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ভবনটি সিলগালার পাশাপাশি এতে অবস্থিত ভিসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রূপায়ণ জেড আর প্লাজায় দ্য বুফে এম্পায়ার রেস্টুরেন্টকে ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণ না করায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বুফে লাউঞ্জ এবং বুফে প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টগুলোর প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযানের পর রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়লেও রমজানকে কেন্দ্র করে আবারও চেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে এখানকার রেস্টুরেন্টগুলো।
গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, সাতমসজিদ রোডে সীমান্ত স্কয়ার থেকে শুরু করে পুরোনো ২৭ নম্বর পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে রয়েছে অসংখ্য ইফতারির দোকান। শুধু ধানমন্ডি ১৫ থেকে শংকরের মধ্যেই
রয়েছে অন্তত ২০-২৫টি বড়-ছোট অস্থায়ী ইফতারির দোকান। এ ছাড়া স্টার কাবাবের দুটি শাখাসহ সীমান্ত স্কয়ারের ফুডকোর্ট, কড়াই গোস্ত, চুঁইঝাল, কাচ্চি ভাই, নিউ চট্টলা ফুড, এ ওয়ান ফুড অ্যান্ড পেস্ট্রি, বার-বি-কিউ টনটে, আমাল রেস্টুরেন্ট, মিনা সুইট, হান্ডি রেস্টুরেন্ট, বুশরা স্ন্যাকস ও জুসবার, কাসুন্দী রেস্তোরাঁ, আফতাব রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কাবাবে বিক্রি হচ্ছে ইফতারি সামগ্রী। এ ছাড়া অস্থায়ী ইফতারির বাজারসহ অসংখ্য রেস্টুরেন্টেই রয়েছে ইফতারির বিশাল আয়োজন। তবে বিগত রজমানগুলোতে এসব রেস্তোরায় যেমন ভিড় দেখা যেত, গতকাল তেমনটা চোখে পড়েনি। এক দোকানের সামনে মাইকিং করে ক্রেতাদের ডেকে আনার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
স্টার কাবাবে খাসির জালিকাবাব কিনতে আসা শ্যামলীর বাসিন্দা জালাল আকন্দ বলেন, এখানকার খাবারের মান বেশ ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত। তাই খাসির জালিকাবাব ও খাসির হালিম নিতে এসেছি; কিন্তু অনেক ভিড়।
এ বিষয়ে কথা হয় সাতমসজিদ রোডের ফায়ার সার্ভিসের অভিযানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত রূপায়ণ জেড আর প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলায় পরিচালিত হান্ডি রেস্টুরেন্টের কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আসলে আমরা জানি না, কী কারণে এই ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলো। আমাদের এখানে অগ্নিনিরাপত্তার সব সরঞ্জাম রয়েছে। অভিযানের পর আমরা ব্যবসা কিছুটা সীমিত করেছিলাম। কিন্তু রমজান উপলক্ষে আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে চালাচ্ছি। বেশ ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। আশা করছি, রমজানের বাকি দিনগুলোতে ভালো বেচাকেনা হবে।
এখানকার রেস্টুরেন্ট ও ইফতার বাজারগুলোতে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পদসহ রয়েছে আঞ্চলিক ও বিদেশি ইফতারের পদ। মুখরোচক এসব ইফতারের দামও তুলানামূলক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় দুই বছর পর এখানকার ইফতারি বাজার আবারও জমে উঠেছে। করোনায় গত দুই বছর ক্রেতা না থাকায় সীমিত পরিসরে ইফতারির আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার অধিকাংশ ব্যবসায়ী বড় পরিসরে ইফতারির আয়োজন নিয়ে বসেছেন, বেচাবিক্রিও ভালো।
গতকাল সাতমসজিদ রোডের অধিকাংশ ইফতারির দোকানেই দেখা গেছে কমবেশি ক্রেতার চাপ। বিশেষ করে স্টার কাবাবে ইফতারি কিনতে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সাশ্রয়ী মূল্যে আর খাবারের মানের কারণে বরাবরের মতো ক্রেতা চাহিদা ধরে রেখেছে এই রেস্তোরাঁটি। এখানকার জনপ্রিয় ইফতারির মধ্যে রয়েছে—হালিম, খাসির জালিকাবাব ও রোস্ট, পরোটা, চিকেন বার-বি-কিউ, গরুর মাংসের চপসহ বিভিন্ন পদ। মিলছে পুরান ঢাকার বেশকিছু ঐতিহ্যবাহী ইফতারির পদও।
বিক্রেতা আসিফ বলেন, পুরান ঢাকার বেশ কিছু জনপ্রিয় ইফতারি পদ তারা বিক্রি করছেন, যার বেশিভাগই সেখানকার বিখ্যাত বাবুর্চি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে শাহী জিলাপি, শাহী পরোটা, বিরিয়ানি, দইবড়াসহ মাংসের বেশকিছু পদ রয়েছে। এ ছাড়াও ফালুদা, লাবাঙ্গ, লাচ্ছিসহ বিভিন্ন পানীয় বিক্রি করছেন তারা।
অন্যদিকে চুঁইঝাল ও বাঙালিপনার মতো রেস্তোরাঁগুলোতে পরিচিত বিভিন্ন পদের পাশাপাশি রয়েছে খাসি ও গরুর মাংসের আঞ্চলিক বিভিন্ন পদ। ক্রেতারা জানান, সাতমসজিদ রোডের ইফতারি বাজার বরাবরই বাহারি ইফতারির জন্য বিখ্যাত। সাধ্যের মধ্যে মিলছে দেশি-বিদেশি মুখরোচক সব পদ।