মাদক নির্মূলে হরহামেশা অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জিরো টলারেন্সও ঘোষণা করা হয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে। তবে কারাবারি ও মাদকসেবীরাও থেমে নেই। প্রচলিত মাদক যখন আনা কঠিন হয়ে পড়েছে, তখন মাদকাসক্তদের সামনে পেশ করা হচ্ছে অন্য কোনো নেশাদ্রব্য। সে নেশায় ঝুঁকছে তরুণ কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক মাদকসেবীরাও। এ সুযোগে দেশে নিত্যনতুন মাদক আনছে কারবারিরা। বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি মনে হলেও সেসব নয়া মাদক আর সেবনকারী পৌঁছে গেছে খাদের কিনারায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও নির্মূলে বেগ পেতে হচ্ছে। অভিযান চালানোর পাশাপাশি সীমান্তেও রাখা হচ্ছে কড়া নজরদারি। পরিচিত সব মাদক আদান-প্রদান ও কেনাবেচায় কঠোর নজরদারি রাখায় ভিন্ন মাদক ও পথ বেচ্ছে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সচরাচর ব্যবহার হওয়া মাদকের খোঁজ করতে গিয়ে মিলছে নাম না জানা আরও ভয়ংকর নতুন মাদকের সন্ধান। গত কয়েক বছরে এমন বেশ কিছু মাদকের নাম উঠে এসেছে সামনে, যেসব মরণঘাতী মাদক ছড়াচ্ছে হুমকি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক সময় নতুন স্বাদ এবং নতুন অভিজ্ঞতার জন্যও দেশের মাদকসেবীদের এক্সপেরিমেন্টে যুক্ত হচ্ছে অজানা সব মাদকের নাম। তরুণ মাদকসেবীদের কাছে ব্যাপক চাহিদা সেগুলোর। সে কারণে দেশের বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে ডিওবি, ডিওএস, ম্যাজিক মাশরুম, টাপেন্টাডল, বুপ্রেনরফিন, পার্টি ড্রাগসহ আরও অনেক মাদক। এসব মাদক নীরবে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে-কানাচে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় ভয়াবহ সব মাদকের দিকে ঝুঁকছে সেবীরা। যেমন ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে টাপেন্টাডল। শুরুতে সীমান্ত এলাকায় এই মাদকের প্রভাব থাকলেও বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশেই ব্যবহার বেড়েছে।
ইয়াবার ব্যাপকতা ঠেকাতে সকারের কঠোর নজরদারির মধ্যে ব্যথানাশক ট্যাবলেট টাপেন্টাডল বছর পাঁচেক আগে মাদক হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় দেশে। বিষয়টি জানাজানি হলে এটি মাদকের তালিকাভুক্তও করা হয়। গত বছরের শেষের দিকে টাপেন্টাডলের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ হয় রাজধানীতে। ইয়াবার চেয়ে দামে কম হওয়ায় মাদকটির ব্যবহার বাড়ছে। এটি ইয়াবার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। এমনই আরেক মাদক হচ্ছে ডিওবি (ডাইমেথক্সিব্রোমো অ্যাম্ফেটামিন)। ভয়ংকর মাদক এলএসডির পরিবর্তে দেশে এই মাদকের ব্যবহার শুরু হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, এটি এলএসডি থেকেও ভয়াবহ। এটি সেবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, শারীরিক বৈকল্য তৈরি হয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত ৩৭ ধরনের মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ম্যাজিক মাশরুম, ডায়মিথাইলট্রিপ্টামাইন (ডিএমটি), লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি), ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বা মেথামফিটামিন, এস্কাফ সিরাপ, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথিডিন, বিভিন্ন ধরনের মদ, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, বুপ্রেনরফিন (টি.ডি. জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইনজেকশন), মরফিন, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোনসহ আরও নতুন কিছু মাদক এসেছে। এগুলো আপাতত ছড়িয়ে না গেলেও কিছু সংঘবদ্ধ মাদকসেবী সেগুলো গ্রহণ করছে এবং বাজার তৈরির চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান কালবেলাকে বলেন, অভিযানে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু নতুন মাদক উদ্ধার হয়েছে। নতুন কয়েকটি চক্রও পাওয়া গেছে। তারা এসব মাদকের বাজার তৈরি করতে চাচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ বলেন, গত কয়েক বছরে প্রচলিত মাদক মদ, গাঁজা, ইয়াবার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। দেশে কিছু নতুন মাদক ঢুকেছে। তবে সেটির ব্যবহারকারী এখন পর্যন্ত অল্প। এগুলো যেন হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য আমরা কাজ করছি।