রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এমএলএসএস পদে চাকরির জন্য ১২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন এক চাকরিপ্রার্থী। মন্ত্রণালয়ের পাশে চায়ের দোকানে হয় তার ইন্টারভিউ। এতে পাস করেছেন জানার পর নিয়োগদাতাকে দেওয়া হয় চুক্তির অর্ধেক টাকা। কিছুদিন পর চাকরিপ্রার্থীকে দেওয়া হয় নিয়োগপত্র। তখন দেওয়া হয় বাকি টাকা। এর তিন মাস পর নির্ধারিত তারিখে মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে যান চাকরিপ্রার্থী। তবে সেখানে গিয়ে জানতে পারেন নিয়োগপত্র ও নিয়োগদাতা সবই ভুয়া। পরে যাকে টাকা দিয়েছিলেন তাকেও আর খুঁজে পাননি তিনি। ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি পরিবর্তন করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সেই চক্র।
প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ৫ মার্চ রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন ওই চাকরিপ্রত্যাশী। এ মামলায় গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন চক্রের মাস্টারমাইন্ড ফরিদুল ইসলাম, সহযোগী নাসির চৌধুরী, নাসিম মাহমুদ ও জুয়েল রানা। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ৪টি মোবাইল ফোন, বেশকিছু ভুয়া নিয়োগপত্র, চেক ও স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও সেনাবাহিনীর চাকরির বিজ্ঞাপন পত্রিকায় আসার পরই চক্রটি সক্রিয় হয়। চাকরিপ্রত্যাশীদের ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করত তারা। ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিত তারা। এভাবে গত কয়েক বছরে তারা কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
চক্রটির অপরাধ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার চক্রটি কয়েকটি ধাপে কাজ করে। কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেই এ চক্রের মাঠকর্মী হিসেবে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে যে কোনো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মতো তাদের হাতে লোক রয়েছে বলে আশ্বস্ত করত। চাকরিপ্রার্থী তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে তাদের কাছ থেকে ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্প ও সিভি সংগ্রহের পাশাপাশি মাঠকর্মী তাদের কাছ থেকে অ্যাডভান্স হিসেবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা গ্রহণ করত।
ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, মাঠকর্মী তার কমিশনের টাকা রেখে বাকি টাকা ও সিভি অন্য এজেন্টের কাছে পাঠিয়ে দিত। এরপর তারাই ওইসব চাকরিপ্রত্যাশীকে একদিন ঢাকায় ডেকে পরীক্ষা ও ভাইভা নিত। পরে ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়েছে জানিয়ে তাদের থেকে চুক্তির ৫০ শতাংশ টাকা নিয়ে নিত তারা। পরে যোগদানের একটি তারিখ দিয়ে তাদের নিয়োগপত্র দিয়ে এবং বাকি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হতো তারা।
ডিবি জানিয়েছে, চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপত্রে উল্লিখিত তারিখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগ দিতে গেলে জানতে পারেন এগুলো সব ভুয়া। তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ততদিনে প্রত্যেক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান জানান, এ চক্রে জুয়েল রানা ফিল্ড পর্যায়ে মাঠকর্মী হিসেবে, নাসিম মাহমুদ ফিল্ড পর্যায়ের সাব-এজেন্ট ও নাসির চৌধুরী ঢাকার সাব-এজেন্ট এবং চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ফরিদুল ইসলামের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি মো. নাজমুল হক বলেন, চক্রটি গত কয়েক বছরে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিলেও কারও চাকরি দিতে পারেনি। পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে শুধু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে কোনো লেনদেন করা যাবে না।
তিনি বলেন, এ চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।