পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, কুড়িগ্রামে এবার ধরলা নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও আবার বাড়তে শুরু করছে। অন্যদিকে, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে সুরমার পানি। ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—
তিস্তাপাড়ে পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার পরিবার : উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণের পরও তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি। নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার পরিবার।
পাউবো সূত্র জানায়, পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে তিস্তাপাড়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে।
এদিকে, পানিবন্দি বিভিন্ন পরিবারের অভিযোগ, তারা দুদিন ধরে পানিবন্দি অথচ এখনো শুকনো খাবার বা ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। যদিও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। এরই মধ্যে ১১০ মেট্টিক টন চাল বিতরণের কাজ চলছে।
কুড়িগ্রামে দুধকুমার ও ধরলায় পানি বৃদ্ধি: উজানের ঢলে দুধকুমার নদের পর এবার ধরলা নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে আরও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নাগেশ্বরীতে দুধকুমার নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে কমপক্ষে পাঁচটি গ্রামে পানি ঢুকেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৬ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমায় পৌঁছতে পারে। এতে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ নদ-নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত: গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে বন্যা আতঙ্ক।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, উজানে ভারি বর্ষণের যমুনা অনুযায়ী আরও ৩ থেকে ৪ দিন নদীর পানি পানি বাড়বে।
ব্রহ্মপুত্রের পানিতে লোকালয় প্লাবিত: কুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আবারও বাড়তে শুরু করছে। উজান থেকে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করছে পানি। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখনো বাড়িঘরে পানি ওঠার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, কিছু স্থানে সমতল এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হতে শুরু করেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ১৮ বা ১৯ জুলাই চিলমারী ও উলিপুরে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জে ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার নিচে: সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে গতকাল শুক্রবার বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুরমা নদীর পানি। যদিও ছাতকে সুরমা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে।
মন্তব্য করুন