রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ এএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদযাত্রায় দিনে প্রাণ গেছে ২০ জনের

১৫ দিনে তিন শতাধিক মৃত্যু
ঈদযাত্রায় দিনে প্রাণ গেছে ২০ জনের

এবারের ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে প্রাণ গেছে তিন শতাধিক মানুষের। দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৬০টির বেশি। এই হিসাবে প্রতিদিন দুর্ঘটনা নিয়েছে ২০ জনের প্রাণ। মূলত দুই কারণে পথের দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে। এর একটি হলো, দীর্ঘ ছুটির কারণে মানুষের ঘরে ফেরার প্রবণতা বেশি ছিল। অন্যটি নীয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মোটরসাইকেল চালানো। মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৪০ শতাংশই ঘটেছে এই দুই চাকার যানে। মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশ ঘটেছে মোটরসাইকেলে।

এ ছাড়া এবারের ঈদযাত্রায় বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যানবাহনের ফিটনেস ও রুট পারমিট না থাকা। এমনকি চালকের লাইসেন্স না থাকারও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

ঈদের আগে ও পরে সাত দিন করে মূলত ১৫ দিন ঈদযাত্রা ধরে সড়ক দুর্ঘটনার হিসাব তুলে ধরে বেসরকারি সংগঠনগুলো। এবার ঈদুল ফিতর হয়েছে ১১ এপ্রিল। এই হিসাবে ৪ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হয়ে, শেষ হয়েছে ১৮ এপ্রিল।

এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন শতাধিক মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘ ছুটির কারণে মানুষ বাড়ি গিয়েছে বেশি। তা ছাড়া মোটরসাইকেলের

অবাধ চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। প্রাথমিক হিসাবে দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশই দেখা গেছে মোটরসাইকেলের কারণে। এ বছর এই যান চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।

এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএর পক্ষ থেকে ঈদযাত্রায় ১৪ দিনের হিসাব পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, ৪-১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৩৬০। এর মধ্যে ১৬ এপ্রিল সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। ১৭ এপ্রিল ৩১, ১৪ এপ্রিল ২৪ জনের মৃত্যুর কথা বিআরটিএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরের ইউনিক পরিবহনের একটি বাস যাত্রীসহ একটি পিকআপকে চাপা দেয়। এতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে জানা গেছে, বাসটির ফিটনেস ছাড়পত্র ও ট্যাক্স টোকেন কোনো কিছুই ছিল না। এমনকি যে সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেই রুটে চলাচলের অনুমোদনও ছিল না।

বুধবার ঝালকাঠির গাবখানে অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। এ দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ট্রাকটি আল আমিন চালালেও তিনি মূল চালক নন। তার ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের ছাতকে অটোরিকশা ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তুরাগ পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে চাপা পড়েছেন কর্তব্যরত এক ট্রাফিক কনস্টেবল।

ধারাবাহিক প্রতিটি দুর্ঘটনাতেই আইনের ভয়াবহ ব্যত্যয় ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় যথাযথ আইন না মানার কারণ খুঁজে পেয়েছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। এই প্রেক্ষাপটে টনক নড়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে কালবেলাকে বলেন, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর একটি আনফিট গাড়ি যাত্রী পরিবহন করেছে। এর দায় তো কাউকে না কাউকে নিতে হবে।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ২৫ ধারায় বলা আছে, ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে বা ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী যানবাহন চালনা করা বা চালনার অনুমোদন দেওয়া বেআইনি। এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনটির ৭৫ ধারা অনুসারে, ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।

অন্যদিকে সড়ক পরিবহন আইনের ২৮ ধারা অনুসারে, রুট পারমিট ছাড়া যানবাহন চালনা করা বা চালানোর অনুমোদন প্রদান করা বেআইনি। এই ধারা লঙ্ঘন করলে আইনটির ৭৭ ধারা অনুসারে, তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।

দেখা গেল, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর অনেক ধারা লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই দূরপাল্লার ইউনিক পরিবহনের বাস তিন বছর ধরে ফিটনেস ছাড়া এবং দুই বছর ধরে রুট পারমিট ছাড়া চলছিল। অথচ এটির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ নছিমন-করিমন, থ্রি-হুইলার, ফিটনেসবিহীন মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল সড়ক-মহাসড়কে চলাচল, মোটরযানের অতিরিক্ত গতি এবং মালবাহী গাড়িতে যাত্রীবহন ইত্যাদি অনিয়মের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং ট্রাফিক পুলিশের অভিযান জোরদার করার মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধ করে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব।

সাত দিনের পরিকল্পনায় ঈদযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া না হলে কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি কালবেলাকে বলেন, ঈদে আমাদের দেশে যে পরিমাণ মানুষ গ্রামে যায়, সে তুলনায় সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা ও উন্নত গণপরিবহন নেই। এজন্য তিন বছরমেয়াদি একটি টেকসই পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ে গণপরিবহন বাড়ানো, সড়ক আইন নিশ্চিত করা, রাস্তা ঠিক রাখাসহ অনেক কাজ করতে হবে। তবেই ভালো ঈদযাত্রা সম্ভব।

যানবাহনের ফিটনেসসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করে বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগ। এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার প্রশ্নে তিনি কালবেলাকে বলেন, এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সারা দেশে অবৈধ যানবাহন অবাধে চলছে। পিকআপে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এসব দেখভালের দায়িত্ব তো বিআরটিএর একার নয়। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করলে সংকট সমাধান হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রদলের নতুন কর্মসূচি

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে চাকরি, বয়সসীমা অনির্ধারিত

আ.লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়: রিজভী

৭০ শতাংশ পরিবেশ সাংবাদিক হামলা-হুমকির মুখে রিপোর্ট করেন : জাতিসংঘ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সৌদির কঠিন শর্তারোপ

বন্ধুর হয়ে দিচ্ছিলেন প্রক্সি পরীক্ষা, অতঃপর...

‘সানজিদার হাত ভাঙা, কান দিয়ে ঝরছিল রক্ত’

নোবিপ্রবিতে বি ইউনিটের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

যে কারণে আবারও ধোনির সতীর্থ হতে চান মোস্তাফিজ

নিহত সেনার মায়ের সঙ্গেও মিথ্যাচার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর

১০

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবা

১১

‘শান্তির সংস্কৃতি’সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত

১২

হল-ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই কুবিতে ভর্তি পরীক্ষা

১৩

জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের টাকা কোথায়, জিজ্ঞাসা আমিনুল হকের 

১৪

ঢাকার ভেতরে আরেক ঢাকা

১৫

ছাত্র না হয়েও ছাত্রলীগ নেতা থাকেন ঢাবির হলে, করেন ইন্টারনেট ব্যবসাও

১৬

গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে উপস্থিতি ৯০ শতাংশ, ফল ৭২ ঘণ্টায়

১৭

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ভরসা ১০ গ্রামের মানুষের

১৮

‘ওরাল ক্যান্সার সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে’

১৯

প্রকাশ্যে দেওয়ান পরিবারের ‘মা লো মা’

২০
*/ ?>
X