চলছে দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। দেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে। বিভিন্ন পদে জনবল সংকট নিয়ে চলা এ সংস্থার রাসায়নিক ল্যাব বা পরীক্ষাগারটির দশা সবচেয়ে করুণ। বর্তমান অর্গানোগ্রামানুসারে ১২ জন পরীক্ষকের পদ থাকলেও দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে পরীক্ষাগারটি চলছে মাত্র একজন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক দিয়ে। সেইসঙ্গে রয়েছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। এতে পণ্য খালাসে হয়রানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানিকারকরা। তাদের অভিযোগ, কোনো কোনো পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল পেতে দুই সপ্তাহও লেগে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের পক্ষ থেকে বিষয়টি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হলেও কোনো সমাধান পাননি তারা। জানা গেছে, ল্যাবের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষক আবদুল হান্নান অবসরে যান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হেলাল হাসান ল্যাবের কয়েকজন অফিস সহকারীর সাহায্য নিয়ে ল্যাব
পরিচালনা করছেন। পরীক্ষাগারের ১৫টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র পাঁচজন। এর মধ্যে দুজন রাসায়নিক পরীক্ষক, তিনটি উপপ্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক এবং পাঁচটি সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আর প্রতিদিন এ ল্যাবে পরীক্ষার জন্য আসে প্রায় ২০০ নমুনা। এর মধ্যে কিছু সময়মতো দেওয়া গেলেও প্রায় ৬০ শতাংশ নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয় না। চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু কালবেলাকে বলেন, লোকবল সংকটে পরীক্ষার ফল আসতে অনেক দেরি হয়। যত ধরনের লবণ আমদানি হয়, সব পরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু এখানে টেস্ট করতে সময় লাগে। যে একজন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক আছেন, তিনি সব কাজ পারেন না। আবার সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও নেই। সব মিলিয়ে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টসহ যারা বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি করেন, তা তাদের হাতে পৌঁছাতে সময় লাগছে। যে টেস্ট দিনে দিনে হয়ে যাওয়ার কথা, তা পেতে তিন থেকে চার দিন লাগে। কোনো কোনো পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পেতে দুই সপ্তাহও লেগে যাচ্ছে। আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের কনটেইনার চার দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা আকারের একটি কনটেইনারের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয় তাদের। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, কাস্টমসের ল্যাবে জনবল সংকট অনেক দিন ধরে। ফলে সময়মতো পরীক্ষার ফল না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সিস্টেম আধুনিকায়নের পাশাপাশি ল্যাবটির আধুনিকায়নও প্রয়োজন। নাহলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও ডেপুটি কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি কালবেলাকে বলেন, কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে কিছু জনবল সংকট আছে। আমরা সরাসরি লোক নিয়োগ করতে পারছি না। যে পোস্টগুলো আছে, তা প্রমোশনের মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। এখনে প্রমোশন পাওয়ার মতো যোগ্য লোকবলও নেই। এর পরও জনবল কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাজ করছে। এ ছাড়া ল্যাবটি আধুনিকায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন