টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফের বাড়ছে নদনদীর পানি। ২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। এবারের বন্যা দুই বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে সিলেটবাসীকে। আকস্মিক এ বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। শুধু জেলাতে নয়, পুরো সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে আগ্রাসী বন্যা। সুনামগঞ্জের ঝাওয়ার হাওরের পাশে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের ঘরের চাল ছুঁইছুঁই পানি। তাদের চুলা ধরানো বা রান্না করার মতো অবস্থা নেই। সোনাই নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার অনেক এলাকা। এদিকে তিস্তাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি বেড়ে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কালবেলার ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
সিলেটের নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিলেট মহানগরীকে দুভাগে বিভক্ত করা সুরমা নদীর পানিতে তীরবর্তী ওয়ার্ডগুলোর বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যায় ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত মহানগরের ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বেশিরভাগ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসাবাড়ি বা আত্মীয়স্বজনের ঘরে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বন্যার পানি উঠেছে। রোগী চিকিৎসক নার্স সবাইকেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রেখেছি।
সিলেটের বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। গতকাল বিকেলে মিরাবাজার কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তিনি প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন।
সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। গতকাল ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল ভোর থেকে ফের টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুন পাড়া, শান্তিরগা, ধোপাখালী, বাঁধনপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, নবীনগর, বিলপাড়, ময়নার পয়েন্ট, কাজীর পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, একতালা বা কাঁচা ঘরে থাকা মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। মঙ্গলবার রাত থেকেই অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সবার চোখেমুখে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আতঙ্ক। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেরই চুলা ধরানো বা রান্না করার মতো অবস্থা নেই। ঝাওয়ার হাওরের পাশে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের ঘরের চাল ছুঁইছুঁই পানি। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের তথানুযায়ী, ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজার বানভাসি এ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাবিত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ উপজেলা। বেশি প্রভাব পড়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলা। ছাতক শহরের বাগবাড়ী, মণ্ডলীভোগ, হাসপাতাল রোড, তাঁতিকোন, বৌলা, চরেরবন্দ, মোগলপাড়া, ঢাকাইয়া বাড়ি, লেবারপাড়া, পাটনীপাড়া, কুমনা, শ্যামপাড়া, বাঁশখলাসহ আবাশিক এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদী।
উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। পাহাড়ি ঢলের স্রোতের ধাক্কায় উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবতী নীজগাঁও, রতনপুর, বাগানবাড়ি, নোয়াকোট, ধনীটিলা, ছনবাড়ী, দারোগাখালী সড়কসহ নবনির্মিত আট থেকে ১০টি কাঁচা সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার ইছামতী-ছনবাড়ীবাজার, শিমুলতলা-মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের বিভিন্ন নিচু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, রাজনগরসহ সাতটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঈদুল আজহার দিনেও ভোগান্তিতে পড়েন মুসল্লিরা। পানিবন্দি অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন। জেলার সাতটি উপজেলার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের ৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে গত সোমবার রাতে প্লাবিত হয়ে যায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ এলাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মঙ্গলবার সারাদিন বৃষ্টিপাত হওয়ায় পর পৌর শহরের মাগুরা, সাদেকপুর, বিহালা, সোনাপুর, কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন, মৈন্তাম, ভাগমতপুর, গুপ্তগ্রাম, তিলকপুর, ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, কুরবানপুর, মুক্তাজিপুর, জাবদা, কালেশার, কাইরচক, চিলারকান্দি, কানেহাত, জয়চন্ডী ইউনিয়নের ঘাঘটিয়া, মিরবক্সপুর, কামারকান্দি, কুঠাগাঁও, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের দেখিয়ারপুর, কুলাউড়া গ্রাম, বনগাঁও, গাজীপুর আংশিক, পুরন্দপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, বন্যাকবলিত উপজেলার ইউএনওদের সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ খাবার ও পানির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারিবর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট পানিবন্দি হয়েছে মানুষ। সোনাই নদীর বাঁধ ভেঙে হরিশ্যামার মরাচর পয়েন্টেসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে পানি উঠেছে। ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ, নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসলসহ ঘরবাড়ি। কাশিমনগরের রাবার ড্যাম্পের দুই পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তাও। গতকাল বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদী ও খাল দখল করে ভবন এবং স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে ভারিবর্ষণ হলেই অস্থায়ী বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে উপজেলার নাজিরপুর, কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপন, কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উব্দাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে ভারিবর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। অন্য নদনদীর পানি বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রংপুর জেলার সব নদনদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২০ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে ভোর ৬টায় ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি উঠেছে, তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ডুবে গেছে ওইসব এলাকার সবজিক্ষেত।
এদিকে তিস্তাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাট সদর, জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব পানিয়ালের ঘাট এলাকায় দেখা যায়, নদীতে ঘোলা পানির স্রোত বইছে। চরের অধিকাংশ জমি পানি নিচে নিমজ্জিত। কৃষকের ফসলি জমিতে ধরেছে ভাঙন। কেউ কেউ নদীর পাড়ে বাদাম তুলে স্তূপ করে রেখেছেন। স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে পানি প্রবাহ বেড়েছে। কখনো পানি বাড়ছে আবার কমছে। ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে দুর্ভোগের আতঙ্ক রয়েছে। নদীতীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়ে বাদাম ও শাকসবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হবে। নদীর নিম্নাঞ্চল হালকা প্লাবিত হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, বন্যা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।