সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী
দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিন-তিনবার নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। একজন মেধাবী চিকিৎসক থেকে সফল রাজনীতিবিদ। লিখেছেন রীতা ভৌমিক-

রাজনীতি মানেই মানুষের সেবা। একজন মেয়র হিসেবে প্রতিটি দায়িত্ব সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করছি। পরিবার থেকেই মেয়েরা প্রথম অবহেলার শিকার হয়। পরিবারই মেয়েদের গৃহবন্দি করে

রাখে। মেয়েদের ক্ষেত্রে মায়েদের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তেমন পরিবর্তন হয়নি। যে মায়েদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে, সেই মায়েদের মেয়েরাই অনেকদূর এগিয়ে গেছে। সর্বপ্রথম আমাদের যদি কিছু পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে দরকার আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতার পরিবর্তন। নিজের কষ্ট অনুভব করেই মেয়েকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। ছোটবেলায় নিজের বিয়ে হয়েছে বলে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেওয়া

যাবে না। জমি বিক্রির টাকায় মেয়েকে বিয়ে নয়, লেখাপড়া শেখাতে হবে। নিজে লেখাপড়া করতে না পারলেও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে হবে। লেখাপড়া, খেলাধুলা, চলাফেরা, চাকরি, মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে মেয়েকে সহযোগিতা করা। এটাই হবে আমাদের নারী সমাজের স্লোগান—বললেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

সামাজিকভাবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে ঘরে-বাইরে নারীকে শক্তিশালী হতে হবে। যুদ্ধ করেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে নারী সাহসী, সে-ই সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। তবে প্রতিটি কাজই সততার সঙ্গে করতে হবে। পরিবার থেকে কর্মক্ষেত্র সব জায়গায় নারীরা সততার সঙ্গে কাজ করে বলে মনে করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নারীরা যাতে স্বাবলম্বী হয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে নিজের বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরি করতে পারে, এ জন্য নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ইউএনডিপির সহযোগিতায় স্থানীয় সংগঠনের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এ ব্যাপারে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গার্মেন্ট সেক্টরকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নারীরা গার্মেন্টে কাজ করলেও অনেকে মেশিন চালাতে পারেন না। তাদের মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যিনি ড্রাইভিংয়ে আগ্রহী তিনি ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এ ছাড়া পুরুষদেরও ড্রাইভিংয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অনেক নারী মুদিদোকান, ব্যবসা করতে আগ্রহী, কিন্তু পুঁজি নেই। আমরা তাদের পুঁজির ব্যবস্থাও করে দিই।

নারায়ণগঞ্জ সদরে এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম সেলিনা হায়াৎ আইভীর, ১৯৬৬ সালের ৬ জুন। ছাত্রজীবনে বাবা আহমদ চুনকার হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৪ সালে বাবাকে হারান। ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার স্কলারশিপ নিয়ে ডাক্তারি পড়তে যান। কিন্তু সেখানে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সামাজিক বাধা আসে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন সবাই চাচ্ছিলেন তিনি ঢাকায় ডাক্তারি পড়েন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলের নেত্রী। রাজনীতির কারণে তিনিও তাকে ঢাকায় লেখাপড়া করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তার মা তাকে সোভিয়েত রাশিয়ায় পড়ার পক্ষে সম্মতি দেন। মা বলেছিলেন, আইভী যেখানে পড়তে চায় সেখানেই পড়বে। কেউ তাকে বাধা দেবে না। অথচ তার মা ঘরের চার দেয়ালের ভেতরেই বড় হয়েছেন। বাইরের জগৎ সম্পর্কে ধারণা ছিল না। স্বামীর সেবা আর মানুষকে রান্না করে খাওয়াতেই জীবন পার করেছেন। সেই মা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই আজকে আইভী হতে পেরেছেন। লেখাপড়া খুব বেশি না জানলেও তিনি অসম সাহসী ছিলেন। মায়ের মতো আইভীর মধ্যেও সাহসিকতার পরিচয় মেলে। দৃঢ় চেতনার আইভী ১৯৮৫ সালে রাশিয়ায় পড়তে যান। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে ইন্টার্নি করেন। ১৯৯৫ সালে মিটফোর্ড এবং নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৩ সাল। সেলিনা হায়াৎ আইভী পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র তিনি। যিনি পরপর তিনবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। রাজনীতিতে আসা নিয়েও অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। অনেকেই তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। কেউ কেউ তাকে বদমেজাজি, খারাপ, বাবার মতো হয়নি, ডাক্তারি পড়েছে রাজনীতির সে কী বুঝবে! দুদিন পর তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে, এক বছরও যাবে না সে এখান থেকে পালাবে ইত্যাদি নানা মন্তব্যও তাকে শুনতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিকৃত পোস্টার লাগিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জ ভরে দিয়েছে। এতকিছুর পরও তাকে দমানো যায়নি।

এ প্রসঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের বলেছিলাম, আমার নামে কুৎসা রটাবে, আমি ভয় পেয়ে মুখ লুকিয়ে চলে যাব, তা হবে না। নারী বলে আমাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেদিন সংকল্প নিয়েছিলাম, আমাকে যত কিছুই বলুক আমি এখান থেকে যাব না। কারণ আমি সততার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। আমি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি পরিবর্তন করতে চেয়েছি। গণমানুষের কাছে যেতে চেয়েছি। ভয়ভীতি ত্রাসের রাজত্ব ভাঙতে চেয়েছি। এর ফলে শত নারী আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি আলী আহমদ চুনকা ফাউন্ডেশন এবং নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাজনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০২২-এর আগস্টে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মা ইলিশ রক্ষায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার টহল

ন্যাশনাল পিপলস যুব পার্টির মাদকবিরোধী আলোচনা সভা

নিউমার্কেটে চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার ১

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের বিবৃতি

কক্সবাজার আদালতে বিচারকের মোবাইল-মানিব্যাগ চুরি

পাঠ্যপুস্তক ছাপার দায়িত্ব হস্তান্তর ‘মাথাব্যথায় মাথা কাটার মতো সিদ্ধান্ত’ : টিআইবি

বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

মৌসুমি বায়ুসহ আগামী ৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

১০

এবার উপদেষ্টাদের নিয়ে মুখ খুললেন সামান্তা শারমিন

১১

ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক

১২

ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়লেন স্মৃতি মান্ধানা!

১৩

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

১৪

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

১৫

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

১৬

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

১৭

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১৮

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে : মুনতাসির

১৯

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

২০
X