বৃষ্টি শেখ খাদিজা
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম

সুন্দর হাসি অনেক পরিস্থিতি সহজ করে দেয়। মনের প্রফুল্লভাব ধরা দেয় হাসির হুল্লোড়ে। এমন প্রাণখোলা হাসির জন্য মনও যেমন নানা নাগরিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া চাই, দাঁতও হওয়া চাই নীরোগ।

যার দাঁত নেই, তার কথা অবশ্য আলাদা। এজন্যই বোধহয় ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝা’ প্রবাদটি এসেছে। লিখেছেন বৃষ্টি শেখ খাদিজা

দাঁতের সুস্থতায় সবার আগে যে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে, তা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে নাশতার পর দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সেটি অবশ্যই সঠিক নিয়মে। অনেকে দাঁত ব্রাশ করেন ঠিকই, কিন্তু এর সঠিক নিয়ম জানেন না। ওপরের পাটির দাঁত ব্রাশ করুন ওপর থেকে নিচের দিকে, নিচের পাটির দাঁত ব্রাশ করুন নিচ থেকে ওপরের দিকে। প্রতিবেলা দু-তিন মিনিটের বেশি সময় দেবেন না দাঁত ব্রাশের জন্য। রাতে ঘুমের আগে মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন, মুখে গন্ধ হবে না। দুই দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে দাঁতের ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে তা বের করে ফেলুন।

প্রবাদ আছে, দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্ম বুঝে না। সত্যিই তাই। শরীরে রোগ থাকুক বা না থাকুক, কমবেশি সবাই নির্দিষ্ট দেখভালের মধ্যে থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শও মেনে চলেন। একমাত্র দাঁতে ব্যথা বা কোনো সমস্যা না হলে বেশিরভাগ মানুষই যান না চিকিৎসকের কাছে।

তবে দন্ত চিকিৎসকদের পরামর্শ, প্রতি ছয় মাসে একবার দাঁত দেখিয়ে নেওয়া ভালো। সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে গোড়াতেই তার প্রতিকার করা যাবে। নয়তো দাঁত ভালো আছে, এটা ভেবে নিশ্চিন্তে খেয়ে যাবেন চা থেকে আইসক্রিম। দাঁতের যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তা হলো শিরশিরানি বা সংবেদনশীলতা। গরম, ঠান্ডা পানীয় থেকে অ্যাসিড জাতীয় খাবারেও এ অস্বস্তি হতে পারে। এর কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন চিকিৎসকরা।

কেন হয়: চিকিৎসকদের মতে, শিরশিরানি আসলে একরকম ব্যথা। কারও ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা বেশি, কারও কম। দাঁতের একেবারে বাইরের আস্তরণ হলো অ্যানামেল, যা দাঁতের ক্রাউনকে ঢেকে রাখে। অ্যানামেলে ক্ষতি হলে স্নায়ু উন্মুক্ত হয়ে যায়। দাঁত সংবেদনশীল হয়।

কী কারণে ক্ষতি: ক্যাভিটির কারণে অ্যানামেল ক্ষয়ে গেলে শিরশিরানি হতে পারে। তীব্র শিরশিরানি থেকে ব্যথা হয়। ৬০ শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে দাঁতের গর্ত বড় হলে অ্যানামেল ক্ষয়ে নার্ভ পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

ঠান্ডা বা গরম খাবারে উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন শিরশিরানি হতে পারে। বয়সের কারণে অ্যানামেল ক্ষয়ে যেতে পারে।

তামাক জাতীয় জিনিস দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত খেলেও অ্যানামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। কোল্ডড্রিঙ্ক, অ্যাসিড বেশি তৈরি হলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে। ব্রাশ করার পদ্ধতিতে ভুল থাকলেও হতে পারে। জোরে, অতিরিক্ত ঘষা হলে অ্যানামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। দাঁত ভালো রাখতে নিয়মিত এর যত্ন নিচ্ছেন অথচ দাঁতের রং পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, এমন লক্ষণ কিন্তু কঠিন রোগের ইঙ্গিত দেয়। দাঁত বলে দিতে পারে হাজারো রোগের কথা। তাই সুস্থ সবল দাঁত দেখেই অনেকটা চেনা যায় শরীরের অবস্থা। তার মধ্যে অন্যতম হলো হার্টের অসুখ। এ ছাড়া পেটের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে শুরু করে শুধু মুখে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে।

দাঁতের যত্নে করণীয়

মুখ পরিষ্কার: নিয়ম মেনে নিয়মিত দাঁতের সব পৃষ্ঠ ভালোমানের নরম টুথব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকে, তাদের ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশে অভ্যস্ত হতে হবে। দাঁতের ভেতরের পৃষ্ঠে পাথর এবং চর্বণে ব্যবহৃত পৃষ্ঠ ও দুই দাঁতের মধ্যবর্তী পৃষ্ঠে ক্ষয় বেশি হয়। কারণ, এসব স্থান পর্যাপ্ত পরিষ্কার হয় না। আঙুল বা ব্রাশ দিয়ে জিভ পরিষ্কার ও মাড়িতে আলতোভাবে ম্যাসাজ করা জরুরি। রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করা জরুরি। শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা, কয়লা-ছাই ব্যবহার, দু-তিন মিনিটের অধিক সময় বা বারবার দাঁত ব্রাশ, চার মাসের অধিক সময় এক ব্রাশ ব্যবহার ও একজনের ব্যবহৃত ব্রাশ অন্যজন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

খাদ্যাভ্যাস: মুখের জন্য উপকারী সুষম আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। ফরমালিনমুক্ত তাজা ফলমূল, শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, টক দই, চিজ, চিনিমুক্ত চুইংগাম, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। মূলত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি-ডি-ই, জিঙ্ক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মাতৃদুগ্ধ শিশুর মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ মানসিক-শারীরিক বিকাশসহ এলোমেলো দাঁত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য মুখের স্বাস্থ্যকে যেমন হুমকিতে ফেলে, তেমনি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস করে। ছোটবেলা থেকে চিনির প্রতি দুর্বলতা কমাতে শিশুদের উৎসাহিত করতে হবে। ধূমপান, জর্দা, গুল ও মদ স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। অতিরিক্ত টকজাতীয় খাবার, যেমন লেবু, তেঁতুল, ক্যান্ডি দাঁতের সংস্পর্শে যত কম রাখা যায়, ততই ভালো।

মাউথওয়াশ ব্যবহার: যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, ক্যান্সারের মতো ক্রনিক রোগ আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার করা জরুরি। মুখ পরিষ্কারে অবহেলা থাকলেও মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন মাউথওয়াশ ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ: সমস্যা না হলেও বছরে অন্তত একবার

অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মুখের অনেক রোগ শুরুতে বোঝা যায় না, নিয়মিত চেকআপে শনাক্ত হলে তার চিকিৎসা করা সহজ হয়। চিকিৎসক নির্বাচনে দায়িত্বশীল হতে হবে।

আমাদের দিন শুরু ও শেষ হয়

দাঁত ব্রাশ করা দিয়ে। অথচ অনেকেই হয়তো জানেন না দাঁত ব্রাশ করার সঠিক নিয়মকানুন; বিশেষ করে আপনি নিজেই যদি না জেনে থাকেন, তবে বাড়ির শিশুটিকে শেখাতেও পারবেন না। আর সঠিক নিয়মে ব্রাশ না করলে লেগে থাকবে দাঁত ও মুখের নানা সমস্যা। তাই জেনে নিন কীভাবে দাঁত ব্রাশ করা উচিত।

প্রথম কথা হচ্ছে টুথব্রাশ বাছাই করা। ভালোমানের টুথব্রাশ ব্যবহার করুন, যার শলাকাগুলো বেশি শক্ত বা বেশি নরম নয়। ছোটদের জন্য ছোট আকারের ব্রাশ দরকার, যা ওদের মুখে সহজে আঁটে।

পরিমিত মাত্রায় পেস্ট নিয়ে সকালে নাশতার পর ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করুন। সম্ভব হলে ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। শিশুদের জন্য কম ঝাঁজালো টুথপেস্ট বেছে নিন।

ব্রাশের শলাকাগুলো দাঁতের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোনাকুনিভাবে ধরে ওপর পাটির দাঁত ওপর থেকে নিচে এবং নিচের পাটির দাঁত নিচ থেকে ওপরে ব্রাশ করুন।

দাঁতের ভেতরে ও বাইরের অংশে সমান সময় নিয়ে ব্রাশ করুন। তাড়াহুড়া করবেন না। কমপক্ষে দুই মিনিট সময় নিয়ে ব্রাশ করুন।

তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ব্রাশের শলাকাগুলো বাঁকা হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে।

দিনে কমপক্ষে দুবার ব্রাশ করার পাশাপাশি অন্য সময় চকলেট কিংবা মিষ্টিজাতীয় আঠালো খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁত ব্রাশ করুন।

কীভাবে দাঁত ব্রাশ করবেন

ওপরের পাটি

মাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে প্রতিটি দাঁতের আশপাশে

ব্রাশ পৌঁছে দিন।

নিচের পাটি

মাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে প্রতিটি দাঁতের আশপাশে

ব্রাশ করুন।

দাঁতের ওপরের অংশ

পেছনের দাঁতের ওপর-নিচ সবখানে ব্রাশ করুন।

দাঁতের বাইরের অংশ

একপ্রান্ত থেকে শুরু করে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত অথবা ওপর থেকে নিচের দিকে ব্রাশ করুন। ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে এক থেকে দুই মিনিট সময় নিন।

যা করা উচিত নয়

অতিরিক্ত দীর্ঘ সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই। বেশি জোরে ও দ্রুত ব্রাশ করা থেকেও বিরত থাকুন।

ব্রাশের আঘাতে যেন মুখগহ্বরের ভেতরের ঝিল্লির পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সামনে-পিছে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের গোড়া ক্ষয়ে যেতে পারে। ওপর-নিচে ব্রাশ করুন।

টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকুন।

শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সঠিক নিয়মে ব্রাশ করা শেখানো অভিভাবকের দায়িত্ব। দাঁতের সুস্বাস্থ্যের জন্য শিশুদের মাছের কাঁটা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নুর-রাশেদসহ গণঅধিকারে ২৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ

নতুন ফিচার নিয়ে এলো হোয়াটসঅ্যাপ

‘রাজনীতি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল’

ছুটির দিনে খেলতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের গোপন বৈঠক

বিদেশি অস্ত্রসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

ইসরায়েলি হামলায় মারা গেলেন আরও এক ফিলিস্তিনি ফুটবলার

আবারও জয়ার সিনেমার ট্রেলার শেয়ার করলেন অমিতাভ বচ্চন

সৌরজগতে শনাক্ত হলো রহস্যময় ধূমকেতু

উড়াল থেমেছিল চিকিৎসায়, জীবন থামল সড়কে

১০

চতুর্থ বিয়ের জন্য তৃতীয় স্ত্রীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ভুয়া সনদ, অতঃপর...

১১

এবার চাঁদাবাজির অভিযোগে জনতার হাতে আটক পুলিশ সদস্য

১২

এবার শেফালীকে নিয়ে মুখ খুললেন স্বামী পরাগ

১৩

আওয়ামী দুঃশাসনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকরা: ডা. রফিক

১৪

ভারতের নজরদারিতে ১১ কোটি ডলারের ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান

১৫

ক্রিস্টাল আইসসহ কুয়াকাটায় ৪ যুবক আটক

১৬

ছবিতে প্রথমে কী দেখছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন

১৭

শ্বশুরবাড়িতে অবৈধভাবে চাল মজুত, ধরা খেলেন জামাই

১৮

বিজিবিতে বড় নিয়োগ, অষ্টম শ্রেণি পাসেও করা যাবে আবেদন

১৯

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস

২০
X