মনোক্রোমের ‘মনো’ মানে ‘এক’ আর ‘ক্রোম’ মানে রং। এ ট্রেন্ডে যে কেউ পুরো পোশাকই পরতে পারেন একটি রঙের বা একটি শেডের। আবার কেউ চাইলে একই রঙের বিভিন্ন শেডও পরতে পারেন। লিখেছেন বৃষ্টি শেখ খাদিজা
চেক, প্রিন্ট বা বাহারি নকশার আবেদন ছিল সেই আদিকাল থেকে। কিন্তু একরঙের আবেদন ফুরাবে না কখনো। ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গের কথাই ধরুন। তার একরঙের টি-শার্টও থাকে আলোচনায়। আসলে এই একরঙের আবেদনটাই আলাদা। যে কারণে প্যাটার্নের পাশাপাশি এ ট্রেন্ডও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফ্যাশন বলয়ে।
একরঙা মানেই একঘেয়ে নয়। যারা সবসময় চেক, প্রিন্ট বা বিভিন্ন নকশার কাপড়ের তৈরি পোশাক পরতে পছন্দ করেন না, তারাই বেছে নেন একরঙা পোশাক। এখন তো এমনও দেখা যায়, অনেকে আপাদমস্তকই একরঙের পোশাক পরেন। যাকে বলা হচ্ছে মনোক্রোম ফ্যাশন।
মনোক্রোমের ‘মনো’ মানে ‘এক’ আর ‘ক্রোম’ মানে রং। এ ট্রেন্ডে যে কেউ পুরো পোশাকই পরতে পারেন একটি রঙের বা একটি শেডের। আবার কেউ চাইলে একই রঙের বিভিন্ন শেডও পরতে পারেন। কেউ কেউ আবার মনোক্রোম বলতে সাদা ও কালোর মিশেলকে বোঝেন। ব্যাপারটা তা নয়। পোশাকে যে কোনো একটি রঙের আধিক্যই মনোক্রোম ফ্যাশন।
তরুণ মানেই ট্রেন্ডি। তাই মনোক্রোমের পরিমণ্ডলে এখন তারা ঢু মারছেন ঘন ঘন। ফ্যাশন সচেতন প্রবীণরাও মাঝেমধ্যে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে ঝুঁকছেন একরঙের ফ্রিকোয়েন্সিতে।
সবার কথা ভেবেই ফ্যাশন হাউসগুলোতে এখন মনোক্রোম পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। লিনেন, ভিসকস, ডায়মন্ড জর্জেট, ডাবল জর্জেটসহ বিভিন্ন কাপড়েই পাওয়া যাচ্ছে এ ধরনের পোশাক।
সালোয়ার কামিজের ক্ষেত্রে জামা, পায়জামা ও ওড়নার শেড পরিবর্তন করে একই রং ব্যবহার করা যেতে পারে মনোক্রোম ফ্যাশনে। শাড়িতে দেখা যায় একরঙের বিভিন্ন শেডের প্যাটার্ন। এমনকি ম্যাচ করা শেডের ব্লাউজও থাকছে। তবে নিজেকে আগাগোড়া মনোক্রোমের চাদরে জড়াতে কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিতে হবে চুড়ি, কানের দুল, মালা, ঘড়ি ও জুতা। সেই রঙে মিল করে বানিয়ে নিতে পারেন সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কুর্তি, টপস, ফতুয়া, কোঅর্ড সেট। পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, কাতুয়া।
কালো
দিনের বেলা বাঁধনি প্রিন্টের ওড়না আর রাতে জমকালো ব্রোকেড কিংবা বেনারসি দোপাট্টা, এতেই মাত। মোনোক্রোম্যাটিক লুকে যদি আপনি মাত করতে চান, তাহলে কালো রঙের একটি সেট কাছে রাখতেই হবে।
সাদা
এ রং একেবারে বেসিক। কুর্তা-পায়জামার সেটসহ প্রায় সবার আলমারিতে এখন সাদায় সাদায় খচিত পোশাক থাকবেই। সদ্য যারা একরঙা ট্রেন্ড ফলো করতে শুরু করেছেন, তাদের জন্য এ সাদাই পারফেক্ট! সঙ্গে নিন ইন্ডিগো স্কার্ফ অথবা স্টোল। পায়ে অল্প হিলের কোলহাপুরি স্যান্ডেল আর কানে অক্সিডাইজড দুল।
আকাশি নীল
অক্সিডাইজড গহনা পরতে ভালোবাসেন? তাহলে চোখ বুজে বেছে নিন আকাশি নীল কুর্তার সেটটি। দিনের বেলা পরুন ছোট দুল দিয়ে। রাতে এই এক পোশাকেই আপনার কান আলো করুন বড় ঝোলা দুলে।
নিউট্রাল শেড
একগাদা সোনার গহনা রয়েছে, যেগুলো কোথাও পরা হয় না? তাহলে আপনার চাই নিউট্রাল শেডের একরঙা কুর্তা-সালোয়ারের সেট। রংটির সুবিধা হলো, এর সঙ্গে সোনার গহনা ম্যাচ করবে দারুণ। মানিয়ে যাবে রুপা বা ডোকরার গহনাও। মানে, খাঁটি বাঙালি সাজে সাজতে চাইলে, এই মোনোক্রোম্যাটিক কুর্তা একবার পরতেই হবে।
গাঢ় শেড
অ্যাসিমেট্রিক কুর্তা এখন দারুণ চলছে। এ ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্ট করুন জুতো নিয়ে। বেশি খালি-খালি লাগলে গলায় জড়িয়ে নিতে পারেন জমকালো স্কার্ফ।
বেনারসি ওড়না
শাড়ি হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হলেও সোনালি সুতায় কাজ করা বেনারসির পোশাক বেশ জনপ্রিয় এখন। একরঙা পোশাকের সঙ্গে জমকালো বেনারসি ওড়নায় সাজতে পারেন। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা একেবারে কন্ট্রাস্ট রং বেছে নিলেও চমৎকার দেখাবে।
হ্যান্ড পেইন্টের ওড়না
সাদা পোশাকের সঙ্গে নীল হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করা একটি ওড়না বেছে নিতে পারেন। ওড়না জুড়ে ফুটে থাকা বড় বড় ফুল সাধারণ পোশাককে করে তুলবে জমকালো।
সুতার কাজ করা ওড়না
ফুলকারি বা সুতার ভারী কাজ করা ওড়না সিম্পল পোশাকে নিয়ে আসবে ভিন্ন মাত্রা। মাল্টি রঙের সুতা দিয়ে কাজ করা ওড়না বেছে নিতে পারেন হালকা রঙের পোশাকের সঙ্গে।
কলমকারি ওড়না
পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াতে একটি কলমকারির ওড়না যথেষ্ট।
টাইডাই ওড়না
একরঙা পোশাকের সঙ্গে একবারে ভিন্ন রঙের টাইডাই ওড়না পরতে পারেন। সাদা বা কালো পোশাকের সঙ্গে যে কোনো রঙের ওড়না মানিয়ে যাবে।
রং যাচাই
অনেকে একরঙা কাপড় শখ করে কেনেন, কিন্তু একবার ধোয়ার পরেই দেখা যায়, কাপড়ের রং নষ্ট হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে! তখন রং হারিয়ে হয়ে যায় মন খারাপ। তাই একরঙা কাপড়ের রং যাচাই করে পোশাক কেনা উচিত।
কাপড়ের রং পাকা না হলে রংটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। এ অস্বাভাবিকতা চোখে ধরা পড়ে।
কাপড়ের রং উঠবে কী উঠবে না সেটা বোঝার জন্য এক কোনা একটু ভিজিয়ে নিন সাবান পানি দিয়ে। কয়েক মিনিট রেখে কচলে দেখুন। রং ওঠার হলে উঠবেই।
কাপড়ের খানিকটা অংশ ভিজিয়ে নিন, তারপর ওপরে একটি সুতি কাপড় রেখে ইস্ত্রি করুন। সুতি কাপড়টি যদি সাদা থাকে, তবে কাপড়ের রং পাকা।
কাপড়ের রং পাকা না হলে কিছুদিন পর এটি ফেড হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ওই কাপড় বা দোকানিকেই কালো তালিকায় নিয়ে নিন।
খারাপ ফেব্রিকে রং ভালো বসে না। তাই রং থাকবে কি না, সেটা কাপড়ের কোয়ালিটি দেখেও বুঝে নিন। তবে সাবধান! কাপড়ের উঠে আসা রং কিন্তু কারসিনোজেনিক, মানে ত্বকের ক্যান্সারের কারণ।
মন্তব্য করুন