সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সা ক্ষা ৎ কা র

দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ না করলে বিদেশি উদ্যোক্তারা আসবে না

ড. এ কে এনামুল হক
দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ না করলে বিদেশি উদ্যোক্তারা আসবে না

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক। এর আগে ছিলেন ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর। এ ছাড়া তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কৃষকের যৌক্তিক মূল্য, বাজার ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি

আমাদের অর্থনীতিতে একটা বড় সমস্যা হলো মূল্যস্ফীতি। এ মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? সরকার কি ভুল পথে এগোচ্ছে?

ড. এ কে এনামুল হক: আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতির কয়েকটি বড় কারণের মধ্যে একটি হলো কৃষিপণ্যের দাম। কৃষিপণ্যের দাম ওঠানামা করে মৌসুমের সঙ্গে। কোনো কোনো মৌসুমে আমাদের জোগানের সংকট দেখা দেয়। সে সময় মূল্যস্ফীতি হয়। এর সমাধান করার একমাত্র বুদ্ধি হচ্ছে জোগান বাড়ানো। আমাদের যে মৌসুমে উৎপাদন কম হয়, অথবা যদি উৎপাদনের উপযুক্ত মৌসুম না হয়, যেমন ধরা যাক জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর—এ সময় উৎপাদন খুবই কম হয়, ফলে এ সময় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এটা সমাধান করতে হলে আমাদের আমদানি সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে হবে যে, এ সময়ে আমি কিছু আমদানি করব। এটা জোগান বাড়ানোর একটা বুদ্ধি। দ্বিতীয় যে কারণটি হলো, ডলারের রেট ওঠানামা করা। এগুলো হচ্ছে মোটাদাগে দেশের মূল্যস্ফীতির কারণ। অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতি হলে আমরা বলি, চাহিদা কমে যায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমে, চাহিদা বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এটা হচ্ছে চাহিদার ক্ষেত্রে। দেশে চাহিদা নিয়ে চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই, কারণ আমাদের চাহিদা শুধু বাড়ে। কমার সুযোগ নেই। যার জন্য আমাদের মতো দেশে কখনো মন্দা দেখা দেয় না। কারণ আমাদের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং এটা একটা ইতিবাচক দিক। আর এটা আছে বলেই আমাদের ইতিবাচক মূল্যস্ফীতিরই একটা চাপ দেশে সব সময় থাকে। এ কারণে আমাদের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি আমেরিকার মতো কখনো হবে না। কারণ, তাদের দেশে চাহিদার ওঠানামার হার অনেক বেশি। আমাদের দেশে সেটি নেই। যেহেতু জনসংখ্যা বাড়ছে, আমাদের অর্থনীতি এখনো গড়ে উঠছে। এরকম অর্থনীতিতে চাহিদার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজি নেই। আমাদের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে জোগানকে পরিচালনা করা। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জোগান নিয়ে কথা না বলে চাহিদা নিয়ে কথা বলি। এসব কারণে কখনোই আমরা মূল্যস্ফীতি সামলাতে পারি না।

প্রায় সময়ই উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য আমাদের এখানে সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়। তাদের দায় কি সর্বোচ্চ?

ড. এ কে এনামুল হক: সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। সিন্ডিকেটকে আমি এভাবে দেখি—যদি মনে করেন যে, একটা পণ্যে দাম বাড়ছে এবং আমার যদি মনে হয় যে, এখানে বিক্রেতারা একজোট হয়ে গেছে, এ কথাটা যদি সত্যও হয়, তাহলে তারা বাড়তি মুনাফা করছে, অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। তাহলে আরেকজন কেন এ বাজারে প্রবেশ করছে না? আসলে প্রবেশ করতে না পারার কারণ হলো, আমাদের আইনগতভাবে অন্যকে হঠাৎ করে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। যেমন, বাসের ক্ষেত্রে যদি বলি, হঠাৎ করে একজন বাস চালাতে পারবে না—বলা হবে বাস সমিতির অনুমতি ছাড়া বাস চালাতে পারবে না। হঠাৎ করে একজন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ তৈরি করতে পারবে না। দেখা যাবে যে, বিজিএমইএর মেম্বারশিপ না নিলে রপ্তানি করতে পারবে না। আমরা যখন এসব নিয়মকানুন তৈরি করি, তার মানেই হচ্ছে আমি নানারকম রেগুলেটরি কারণে জোগান বাড়াতে দিতে পারছি না। তখন সিন্ডিকেটের দোষ, নাকি নিয়মকানুনের দোষ? আমরা সিন্ডিকেটের দোষ দিয়ে বিক্রেতাদের ওপর অনর্থক চাপ সৃষ্টি করছি। আমাদের চিন্তা করা উচিত কেন বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে না। আরেকটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে। দেশে অনেক ধান উৎপাদনকারী আছে। সিন্ডিকেট ধান উৎপাদনকারীরা করে না, চাতালরা করে, যারা চালের ব্যবসা করে। তাহলে চাতালের সংখ্যা বাড়ালে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। সরকার তো সেদিকে যাচ্ছে না। বরং এমন ভূমিকা পালন করছে, যাতে চাতালের সংখ্যা না বাড়ে। আবার একই সঙ্গে আমাদের মজুতদারি আইনটা সঠিক না। আমি আগেও বলেছি এটি। মজুতদারি আইনের একটা বাড়তি সমস্যা আছে। আমরা বলছি এক মাসের বেশি কেউ মজুত রাখতে পারবে না। ধানের মজুত ছয় মাস রাখতে হবে। ধানের ক্ষেত্রে কি উল্টো নিয়ম! আবার আমি যদি পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বলি—পেঁয়াজের মৌসুম মাত্র একটা। সুতরাং আমাকে মৌসুমের ভিত্তিতে মজুতের আইনটা সমন্বয় করতে হবে। এটা হলো কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে। অকৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, স্থিতিস্থাপকতা। যে পণ্যে স্থিতিস্থাপকতা কম, সে পণ্যে জোগান একটু কমলেই উৎপাদনকারীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, এসব বাজারে যাতে সহজে উৎপাদনকারী প্রবেশ করতে পারে। আমরা বাংলাদেশের মতো জায়গায় এখনো ‘ফারমার্স মার্কেট’ তৈরি করতে পারিনি। ফারমার্স মার্কেট সারা পৃথিবীতেই আছে। কারণ, কৃষিপণ্যে স্থিতিস্থাপকতা কম। এ ক্ষেত্রে যে কোনো সময় যে কোনো বিক্রেতা গ্রুপ মার্কেটকে ম্যানিপুলেট করতে পারে। ম্যানিপুলেশন কমানোর বুদ্ধি হলো কৃষকদের সরাসরি বাজারে আসতে দেওয়া। আমরা যেখানে ফারমার্স মার্কেট বানাচ্ছি, সেখানেও এক ধরনের গ্রুপ ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। দোষটা বিক্রেতাদের নয়। দোষটা আমাদের ব্যবস্থাপনা, নীতিনির্ধারকদের।

কৃষকরা পণ্যের দাম পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। এর কি কোনো সমাধান নেই?

ড. এ কে এনামুল হক: এটা কৃষিপণ্যের এক ধরনের তাত্ত্বিক অবস্থা। যখনই এসব পণ্যের জোগান বাড়ে কিংবা আমরা বাড়াই—গবেষণা করে নতুন জাত উদ্ভাবন করি, তাতে জোগান বাড়ে, তখন সঙ্গে সঙ্গেই মূল্য কমে। সে কারণে সারা পৃথিবীতে কৃষিকে সুরক্ষা দেওয়া হয়। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হবে এসব চিন্তা না করে কৃষিক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সুরক্ষা বলয় তৈরি করা, যাতে ওই সময়ে যদি তাদের পণ্যের দাম কমে যায়, হয় তাদের কৃষিঋণ মওকুফ করা হবে অথবা সারের দাম কমানো হবে, কিংবা বিদ্যুৎ বিল কমাতে হবে—কিছু না কিছুতে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। আমার জানি যে, সে কখন শকড হবে। এটাকে হঠাৎ করে পরিবর্তন করার সম্ভাবনা নেই। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা এখানে খুব কম, অতএব মাথায় রাখতে হবে যে, পাবলিক পলিসিতে কী ধরনের ব্যবস্থা আছে। কিছু কিছু পণ্য আমরা মজুত করি, যেমন আমাদের সাইলো আছে, সেখানে চাল রেখে দিই। কিন্তু পেঁয়াজ ওভাবে রাখতে পারব না, দুধও রাখতে পারব না। তাহলে এসব ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ভর্তুকি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সারা পৃথিবী তাই করে। কেন ইউরোপ গরুপ্রতি দুই ইউরো ভর্তুকি দেয়? কারণ তারা জানে যে, এটা না দিলে সমস্যা হবে। এটা কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

বীমার মাধ্যমে কি এর কোনো সমাধান করা সম্ভব?

ড. এ কে এনামুল হক: আমাদের মতো দেশে এটি খুব কঠিন। আমরা ছোট দেশ। প্রথমত ইন্স্যুরেন্সে একটা নৈতিক বিপত্তি থাকে। সেটা দূর করার জন্য আমরা ইন্স্যুরেন্স ডিজাইন করি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন হবে : এসএম জাহাঙ্গীর

অ্যানফিল্ডে এক দশকের অভিশাপ ভাঙল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

রূপনগরে আগুন / ডিএনএ শনাক্তের পর ১৬ মরদেহ পেলেন স্বজনেরা

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক 

সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : বাসস চেয়ারম্যান

রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতকে হারিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

‘আগুন লাগার ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে’

কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ

গাজায় আবারও ইসরায়েলের বিমান হামলা 

১০

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১১

আ.লীগের কেন্দ্রীয় ১ নেতা গ্রেপ্তার

১২

হোটেলে নাশতা খেয়ে শিশুসহ ৬ জন অজ্ঞান

১৩

তাঁতিবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ

১৪

তিন ধর্মের উপাসনাস্থল নির্মিত হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

১৫

সীমান্তে ১২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

১৬

রাজধানীতে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৭

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব দুঃশাসনের কবর দেওয়া হবে : জুয়েল

১৮

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ : সারজিস

১৯

জবি ছাত্রদল নেতা খুন, সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল

২০
X