দীর্ঘ ৩৫ বছর বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (চাকসু)। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী। আর এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী। তবে এদের কারও বাড়িই চট্টগ্রামে নয়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ৫টি কেন্দ্রে সপ্তম ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪টার পর ফলাফল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দীন। ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন রনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। জিএস পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। এজিএস পদে ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৭ হাজার ১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে নির্বাচিতদের বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব তথ্য তুলে ধরা হলো।
ভিপি মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন রনি সহসভাপতি (ভিপি) মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন রনি ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাঁগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নের পাঁচুড়িয়া গ্রামে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা স্থানীয় ব্যবসায়ী।
রনি স্থানীয় মুরাদপুর পাঁচুড়িয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকের পাঠ সম্পন্ন করেন। পরে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
রনির ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি নিজ উপজেলাতেই। তিনি নিজ উপজেলায় ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পরে রাজশাহী মহানগরে কাজ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ক্যাম্পাসে রাজনীতি শুরু করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জিএস সাঈদ বিন হাবিব সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সাঈদ বিন হাবিব ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। স্নাতকে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের সগড়া গ্রামে। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ব্যক্তিগত জীবনে সাঈদ বিবাহিত। তিনি এক পুত্র সন্তানের জনক।
সাঈদ হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
তার রাজনীতির হাতেখড়িও নিজ এলাকায়। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও মানবাধিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে শাখা ছাত্রশিবিরের আইন, প্রচার ও ছাত্রআন্দোলন-বিষয়ক সম্পাদক ও কলা অনুষদ শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন।
মাদ্রাসায় পড়াশোনার সময় সাঈদ বিতর্ক ও আবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তখন বিতর্কে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা, বক্তৃতা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় অসংখ্যবার প্রথম স্থান অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ইসলামের ইতিহাস অলম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এসবের পাশাপাশি শিশু সংগঠক হিসেবে রোভার স্কাউটের একাধিক ক্যাম্পে অংশ নেন।
এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার জন্ম ও বেড়ে উঠা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বরুন গ্রামে। বাবা একসময় ব্যবসা করলেও এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডে বসবাস করেন।
তৌফিক গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন জেলা শহরের চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করে পা রাখেন গাজীপুর ক্যান্টেনমেন্ট কলেজে।
অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি তৌফিক ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ও সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্কুলে স্কাউটিং করতেন। সেসময় প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। কলেজে বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) লিডার ছিলেন। এ ছাড়া প্রথম আলো বন্ধুসভা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বিডি ক্লিন, রাষ্ট্রচিন্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছেন।
তৌফিক নবম শ্রেণি থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০২০ সালে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের আওতাধীন গাছা থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহব্বায়কের দায়িত্ব পান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করেন।
মন্তব্য করুন