অ্যানফিল্ড—যেখানে প্রায় এক দশক ধরে দুঃস্বপ্নে ভুগছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শেষবার ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তারা এখানে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। অবশেষে ২০২৫ সালের অক্টোবরে এসে, হ্যারি ম্যাগুয়ারের শেষ মুহূর্তের দুরন্ত হেডে লাল শিবিরে ফিরে এসেছে সেই হারানো গৌরব। ইউনাইটেডের ২-১ গোলের জয় শুধু ইতিহাস পুনরুদ্ধারই নয়, চার ম্যাচের টানা হারের ধাক্কা খাওয়া লিভারপুলের জন্য নতুন সতর্কবার্তাও।
ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল বিদ্যুতের ছোঁয়া। গত মৌসুমে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল দল হিসেবে ইউনাইটেডকে ছুঁয়ে ফেলা লিভারপুলের বিপক্ষে এই ম্যাচটি ছিল গৌরবের লড়াই। শুরুতেই ৬২ সেকেন্ডে গোল! আমাদ দিয়ালো দুর্দান্ত পাস দেন এমবেউমোকে, যিনি নিখুঁত ফিনিশে মাতিয়ে তোলেন অ্যানফিল্ড।
এরপর ম্যাচে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এক পর্যায়ে ম্যাকঅ্যালিস্টারকে আঘাত করার অভিযোগে ভ্যান ডাইককে নিয়ে রেফারির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট। ভিএআর সেই ঘটনাটি পর্যালোচনাই করল না, যা আরও বাড়িয়ে তোলে বিতর্কের আগুন।
ইউনাইটেড কোচ রুবেন আমোরিম এদিন রক্ষণভাগ সাজান ৫-৪-১ ফরমেশনে। মূল পরিকল্পনা ছিল দ্রুত কাউন্টার আক্রমণ। মধ্যমাঠে মাউন্টের পাশে কুনহা, আর ডান দিক দিয়ে বারবার লিভারপুলের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করেন দিয়ালো।
লিভারপুলের পক্ষে গোল পাওয়ার সুযোগ প্রথম আসে ফন ডাইকের লম্বা রানে, যেখান থেকে গ্যাকপোর শট লাগে পোস্টে। এরপর ব্রুনোর শট অল্পের জন্য বাইরে যায়, কিন্তু গ্যাকপো আরেকবার পোস্টে আঘাত করে ইউনাইটেডকে সতর্ক করেন।
দ্বিতীয়ার্ধেও সেই একই গল্প—গ্যাকপোর শট আবার পোস্টে! ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই কাজেমিরো কার্ড দেখলে তাকে তুলে উগার্তেকে নামান আমোরিম। স্লটও ঝুঁকি নেন—মাঠে নামান ভির্টজ ও একিতিকে। তবুও গোল খুঁজে পাননি তারা। সালাহের পা থেকেও গোল মিসে ভোগে লিভারপুল।
শেষ পর্যন্ত বদলি হিসেবে নামা ফেদেরিকো কিয়েসা ম্যাচে প্রাণ ফেরান। ৭২ মিনিটে মাঠে নেমে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ক্রস বাড়ান, গ্যাকপো এবার আর মিস করেন না। তিনবার পোস্টে লেগে বেঁচে যাওয়ার পর অবশেষে তিনি স্কোরলাইন সমান করেন—১-১।
কিন্তু গল্পের শেষ তখনও বাকি। ম্যাচের শেষ পাঁচ মিনিটে ইউনাইটেডের শেষ আক্রমণ থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজ পাঠান নিখুঁত এক ক্রস। সেখানে কনাতে-কে হারিয়ে উঠে আসেন ম্যাগুয়ার—তার শক্তিশালী হেড বলটি জালের ভেতর। অ্যানফিল্ড নিস্তব্ধ।
শেষ দিকে ফ্রিমপংয়ের ক্রস থেকে গ্যাকপোর হেড বাইরে গেলে শেষ আশাটুকুও উড়ে যায় লিভারপুলের। স্লটের দল এবারও পেল নিজেদের ওষুধের স্বাদ—শেষ মুহূর্তে ধসে পড়ে, এবং এখন আর্সেনালের থেকে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে।
অন্যদিকে ইউনাইটেড—আমোরিমের অধীনে টানা দুই প্রিমিয়ার লিগ জয় পেয়ে আবারও ফিরে পেল হারানো আত্মবিশ্বাস, আর লিভারপুলের অ্যানফিল্ড দুর্গে তুলে নিল এক দশকের অপেক্ষার পর লাল পতাকা।
মন্তব্য করুন