দেশে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে কয়েক দিনের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো কিছু ‘কালপ্রিটের’ ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করি। কারণ, এই ঘটনাগুলো এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে হচ্ছে, যে স্থানগুলো দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণভাবে সম্পর্কিত।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর হোটেল তিলোত্তমায় অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর সমন্বয় সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সারজিস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটি ক্লিয়ার না করে, শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা, জুলাই গণহত্যা, শাপলা হত্যাকাণ্ড, মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের যারা প্রধান খুনি ও নির্দেশদাতা ছিল, তাদের বিচারের রায় কার্যকারিতা ও নিশ্চিত না করে অন্তর্বর্তী সরকার যদি একটি দায়সারা নির্বাচন দিতে চায় তাহলে সরকারকে সবার আগে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হবে।
সারজিস বলেন, চব্বিশের আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনাকে মুখোমুখি দাঁড় করায়নি। সাধারণ ছাত্র-জনতা তাকে মুখোমুখি দাঁড় করে তার পতন ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে তারা যে যেই দল করুক না কেন তারা জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চায়। এমনকি যে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সেখানে স্বাক্ষর করেছে তাদের নেতাকর্মীরাও এখন কথা বলছে যে, এই দায়সারা স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি বিএনপি তাদের জায়গা থেকে যে ছয়-সাতটা জায়গায় নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছে। এটা বিএনপির সাথে কনফ্লিক্ট (সাংঘর্ষিক) না। ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের এটি প্রশ্ন যে, যদি গণভোটের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হয় তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা সবকিছু ভুলে গিয়ে জুলাই সনদের সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে কিনা। যদি এটা নিশ্চিত করা হয়, তাহলে তো আমাদের সমস্যা নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে বিষয়টিতে অস্পষ্ট এবং ক্লিয়ারেন্স চায়, আমরাও এনসিপির পক্ষ থেকে তা চেয়েছি। যদি অন্তর্বর্তী সরকার এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমরা বিশ্বাস করি জনগণ এর বিপক্ষে দাঁড়াবে এবং এনসিপি জনগণের পাশে থাকবে।
সারজিস আলম বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই এটা গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইটেরিয়া। আমরা দৃশ্যমান বিচার চাই। সব মামলার সব আসামির ফেব্রুয়ারির মধ্যে দৃশ্যমান বিচার হবে তাও প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু যারা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বা নির্দেশদাতা, ওইরকম প্রথমসারির রায় ও কার্যকারিতা দেখতে চাই।
সারজিস আলম বলেন, ফ্যাসিস্টদের তোষামোদকারী দোসরদের খুঁজে বের করে অন্তর্বর্তী সরকার শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি। তারা এখন বিভিন্নভাবে অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে নির্দেশনা পেয়ে এই কাজগুলোর সাথে যুক্ত হচ্ছে। এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণভাবে তদন্ত করা উচিত এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সুশীল এ দয়াপ্রবণ মনোভাব থেকে বের হয়ে যারা অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে একটু শক্ত ও দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখতে চাই তাহলে নির্বাচনকালীন সময়ের রাজনৈতিক দল ও জনগণের একটা আস্থা তৈরি হবে।
আগামী নির্বাচনে অন্য দলের সাথে এনসিপির জোটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি প্রয়োজন হয় এনসিপি এককভাবে নির্বাচন করবে। যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে এই কমিটমেন্ট আসা যায় যে, ওই রাজনৈতিক দলেই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে জুলাই সনদের যে প্রত্যেকটি চাওয়া সেগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষার নেগোসিয়েশন না করে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে তাহলে ওই দলের সাথে এনসিপির জোট হতে পারে।
এ সময় এনসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক আতিক মুজাহিদ, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, আসাদুল্লাহ আল গালিবসহ জেলা এবং মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন