ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল। রোববারের (১৯ অক্টোবর) এসব হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে হামাস। এ হামলায় রকেট, গ্রেনেড ও স্নাইপার ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি তার। তিনি বলেন, এটি যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। জবাবে ইসরায়েল রাফা এলাকায় বিমান হামলা চালায়।
তবে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল রিশেক দাবি করেছেন, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু ইসরায়েলই বারবার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গাজার গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল মোট ৪৭ বার তা লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ জন নিহত এবং অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে এবং রাফায় কোনো সংঘর্ষের খবর তাদের জানা নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত সব শর্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গাজা উপত্যকার সর্বত্র যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা। রাফায় সংঘর্ষের খবর আমাদের কাছে নেই, কারণ ওই এলাকা দখলদার বাহিনীর (ইসরায়েল) নিয়ন্ত্রণাধীন রেড জোন হিসেবে বিবেচিত। গত মার্চ মাস থেকে সেখানে আমাদের অবশিষ্ট ইউনিটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন।
নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর স্থাপনা লক্ষ্য করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত মিসরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত ক্রসিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ বন্ধ রেখেছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। এতে উপত্যকায় স্থায়ী শান্তির আশা জেগে উঠেছিল। তবে এই হামলার পর সেই আশার আলো অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। ইসরায়েল ও হামাস একে অপরের ওপর এ হামলার দায় চাপাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর পরদিন থেকেই গাজায় শুরু হয় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, যা দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে রূপ নেয়। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন