ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলে বিরোধী জোটের তিন তরুণ নেতার বিস্ময়কর উত্থান সবাইকে চমকে দিয়েছে। তাদের নেতৃত্বের রঙ্গে রঙিন হয়ে উঠেছে ইন্ডিয়া জোটের ফলের চিত্র। উত্তর প্রদেশে মুলায়মপুত্র অখিলেশ যাদব শুধু নিজেই জয়লাভ করেননি, তরুণ এ নেতার নেতৃত্বে এ রাজ্যে ফিকে হয়ে গেছে যোগী ম্যাজিক। এ রাজ্যে ইন্ডিয়া জোট পেছনে ফেলেছে এনডিএকে। পশ্চিমবঙ্গে সেই কাজ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রেকর্ড ভোটে জেতার পাশাপাশি দিশা দেখালেন বাংলাকে। অন্যদিকে কর্ণাটক এবং উত্তর প্রদেশের দুটি আসনে জেতার পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে উত্থান হলো কংগ্রেসের। তিন ‘যুবরাজ’ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিরোধীদের।
অখিলেশ যাদব : উত্তর প্রদেশ হয়ে ঢোকা যায় দিল্লিতে। হিন্দি বলয়ের প্রধান রাজ্য যেমন, তেমনই জাতীয় রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র এটি। সেই উত্তর প্রদেশেই বিড়ম্বনা বাড়ল বিজেপির। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরে যাকে বিজেপির মুখ হিসেবে ভাবা হয়, সেই যোগী আদিত্যনাথ এ রাজ্যের দাপুটে নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী। ২০২২ সালে বিধানসভা ভোটেও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেখানে লোকসভায় এনডিএর আসন সংখ্যা থামল ৩৮-এ। ৪১ আসনে জয় পেল ইন্ডিয়া জোট। এর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৫ আসন। নেপথ্যে উত্তর প্রদেশের যুবরাজ অখিলেশ যাদবের চৌকস নেতৃত্ব। গেরুয়া ঝড় রুখে দেওয়ার পাশাপাশি কনৌজ নিজের আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির যুবরাজ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘আমাকে এই কেন্দ্র থেকে জেতানোর দায়িত্ব আপনাদের। বাকি ৪১টি কেন্দ্র থেকে দলকে জেতানোর দায়িত্ব আমার।’ তপশিল ঘোষণা হওয়ার পরই জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ঘরের ছেলে’র কথা রাখলেন ডায়মন্ড হারবারবাসী। দেশের মধ্যে রেকর্ড ব্যবধানে জিতলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি। ৭ লক্ষ্যের বেশি ব্যবধান প্রতিপক্ষকে হারালেন তিনি। শুধু নিজে চমকে দেওয়া জয় পেয়েছেন তাই নয়; ভোটের বাংলায় রাজ্য চষে ফেলেছেন অভিষেক। দলের গুরু দায়িত্ব সামলেছেন। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত সেরেছেন প্রচার। এরপর ফলের পরিসংখ্যান বলছে তৃণমূল ২৯, বিজেপি ১২। এই জয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমিকা প্রশ্নাতীত, তেমনই সেনাপতির কৃতিত্বও কম নয়।
রাহুল গান্ধী: অভিষেক যদি বাংলায় তৃণমূলের কান্ডারি হন, গোটা ভারতে কংগ্রেসের হয়ে সেই ভূমিকা পালন করেন রাজীবপুত্র রাহুল গান্ধী। ভারত জোড়ো যাত্রা এবং ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পায়ে হেঁটে ভারত ভাগ্য বিধাতার মন বুঝেছেন। রাহুলের এই জনসংযোগ লোকসভা ভোটের ফলে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এইসঙ্গে ভোটের প্রচারে গোটা দেশ চষে সভা করেছেন। বিজেপি মেরূকরণের রাজনীতির বিপরীতে রাহুল অবিচল থেকেছেন ‘সংবিধান বাঁচানো’র নিজস্ব ধারার লড়াইয়ে। জাতিগত জনগণনার দাবি তুলেছেন। ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত সংরক্ষণের ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাবেন দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ করে কংগ্রেস নেতা বলেন, দলিত, অনগ্রসর শ্রেণি ও জনজাতিদের স্বার্থেই এই প্রয়াস চালাবে কংগ্রেস। ভোটের ফলে স্পষ্ট অনেকাংশে মানুষ বিশ্বাস করেছে এই বার্তা। সব মিলিয়ে ভরসাযোগ্য নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীকে প্রতিষ্ঠা করল লোকসভা নির্বাচন ২০২৪। এর জলজ্যান্ত প্রমাণ কেরালার ওয়েনাড এবং উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি দুই জায়গাতেই বড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন রাজিবপুত্র। ওয়েনাডে জিতেছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪২২ ভোটে। অন্যদিকে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০ ভোটে জিতেছেন রায়বেরেলিতে।
তরুণ প্রজন্মের তিন নেতার এই জয়জয়কার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিরোধী শিবিরকে। পরিণত তথা অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অখিলেশ, অভিষেক এবং রাহুলের উত্থান নিঃসন্দেহে নজরকাড়া। আগামী দিনে এই যুব নেতারাই দেশ গড়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন