এক সবুজ ঘাসফড়িং ও নীল প্রজাপতির গভীর বন্ধুত্ব ছিল। তারা ছোট্ট একটা বনে সুখে-দুঃখে দিন কাটাত। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াত তারা। ঘাসফড়িংয়ের ছিল স্বচ্ছ সবুজাভ সাদা। প্রজাপতি ঘুরে বেড়াত তার নীল ডানা উড়িয়ে।
রঙিন প্রজাপতির সঙ্গে ঘাসফড়িংয়ের গলায় গলায় ভাব থাকলেও প্রজাপতি ঘাসফড়িংয়ের ডানা পছন্দ করত না। কেননা তার নিজের ডানা রঙিন হলেও ঘাসফড়িংয়ের ডানা ছিল রংহীন।
প্রজাপতি ঘাসফড়িংকে ডানাগুলো ফেলে দিতে বলত। কিন্তু ডানা ছাড়া ঘাসফড়িং উড়বে কী করে?
—তোমার ডানাগুলো খুব বিশ্রী। আমার ডানা দেখো। কেমন ঝলমল করছে। তোমার ডানাগুলো ফেলে দাও।
—ডানা ফেলে দিলে আমি উড়ব কী করে? এরকম ডানাই তো আমার আছে।
ডানা নিয়ে প্রতিদিন ছোটখাটো ঝগড়া লেগেই থাকত। তবে ডানা নিয়ে ঝগড়া বাধলেও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তারা একসঙ্গে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াত। সন্ধ্যায় ফিরত।
এক দিন ঘাসফড়িং নদীর পাড়ে ঘুরতে যায়। এদিকে প্রজাপতি ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘাসফড়িং নেই। বন্ধুকে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। সে ঘাসফড়িংকে বনে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে প্রজাপতিটা বনে হারিয়ে গেল। দিকহারা প্রজাপতি একটা গাছে আশ্রয় নিল।
এদিকে সকালে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাওয়া ঘাসফড়িং বেলা গড়াতেই বাসায় ফিরে এলো। কিন্তু ফিরে এসে সে তার বন্ধুকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল। তাই সেও বনে খুঁজতে লাগল তার বন্ধুকে।
খুঁজতে খুঁজতে সে প্রজাপতিকে একটা গাছের ডালে বসে থাকতে দেখল। এদিকে এই গাছে এক সাপ বাস করত। শিকারের গন্ধ পেয়ে সে বেরিয়ে এলো। ঘাসফড়িং দূর থেকে তার বন্ধুর পেছনে সাপ দেখে দ্রুত উড়ে এসে প্রজাপতিকে নিয়ে গাছের নিচে ঘাসে লুকাল।
এদিকে শিকার হারিয়ে সাপটা ভীষণ রেগে খুঁজতে লাগল প্রজাপতিকে। কিন্তু বুদ্ধিমান ঘাসফড়িং তার সবুজাভ ডানা মেলে প্রজাপতিকে নিয়ে এমনভাবে লুকাল, সাপ টেরই পেল না। ঘাসফড়িং কী করে লুকাল। সে তার বন্ধুকে ঘাসের ভেতর রেখে তার উপর বিছিয়ে দিয়েছিল নিজের ডানা। আর সেটা দেখে সাপ ভাবল এ বুঝি ঘাস।
সাপ চলে যাওয়ার পর প্রজাপতি বুঝতে পারল ঘটনা। সে ঘাসফড়িংকে ধন্যবাদ দিল ও অনুতপ্ত হলো। এরপর থেকে আর ডানা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি।
মন্তব্য করুন