তৌফিক মেসবাহ
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৭ এএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছোটখাটো ট্রিপও পেয়েছি : নভেরা রহমান

অভিনেত্রী নভেরা রহমান। ছবি : সংগৃহীত
অভিনেত্রী নভেরা রহমান। ছবি : সংগৃহীত

নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর প্রথম সিনেমা ‘আয়নাবাজি’ বাংলা সিনেমার হাওয়া বদল করে হলে দর্শক ফেরার ধারা তৈরি করেছিল। দ্বিতীয় সিনেমা ‘রিকশাগার্ল’ ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করে অবশেষে ২৪ জানুয়ারি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। সাক্ষাৎকার তৌফিক মেসবাহ

‘রিকশাগার্ল’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে, কেমন লাগছে?

আমি খুবই আনন্দিত। বিশ্বের অনেক ফেস্টিভ্যালে ঘুরে অনেক দিন পর বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে। আশা করছি দেশের মানুষের ভালো লাগবে।

ইংরেজি ভাষায় নির্মিত সিনেমা, বাংলা ডাবিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ফিল্মটা আমরা প্রথমে ইংরেজিতে শুট করেছিলাম। পরবর্তীকালে ঢাকা লিট ফেস্টে স্ক্রিনিংয়ের জন্য নিজ নিজ চরিত্রে বাংলা ডাবিং করেছিলাম। তখন বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। এবার আরও বড় পরিসরে আসছে। দেখা যাক দর্শক কীভাবে নেয়। যেহেতু ঢাকার গল্প, সুতরাং চরিত্রগুলো যখন বাংলায় কথা বলবে, তা শুনতে ভালো লাগবে। কারণ সবকিছু অন্য ভাষায় শতভাগ প্রকাশ

পায় না।

‘রিকশাগার্ল’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন কীভাবে?

অডিশনের গল্পটা অনেক মজার। যতটুকু জানি এ চরিত্রের জন্য তারা তিন শতাধিক অডিশন নিয়ে তারপর আমাকে কল করেছে। এর আগে অমিতাভ ভাইয়ের সঙ্গে টিভিসি করেছিলাম, সে সুবাদে পুরো টিমের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। অডিশনের প্রায় তিন মাস পর আমেরিকান প্রডিউসার আমাকে সিলেক্ট করলে তারপর কল আসে।

শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

শুটিং অভিজ্ঞতা অনেক মজার ছিল। আমরা পাবনায় অনেক দিন শুট করেছি যেখানে আমার চরিত্র নাইমা আঁকাআঁকি করছে। আমি ছোটবেলা থেকেই আঁকতে পারতাম, ক্যামেরার সামনে সেটাই করেছি। এরপর ঢাকা ফিরে বিভিন্ন স্থানে ঢাকার রিকশাচালকদের সঙ্গে রিকশা চালিয়েছি। অন্য রিকশাওয়ালারা আমার রিকশা ধাক্কা দিয়ে সাহায্য করেছেন। ছোটখাটো ট্রিপও পেয়েছি। রাস্তার মানুষ আমার সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলেছেন। এমনও হয়েছে যে, গোপন ক্যামেরায় শুট চলছে আর সাধারণ মানুষ আমার রিকশায় ওঠে না জেনেই ফিল্মের অংশ হয়ে গেছে। এ অভিজ্ঞতাগুলো রেখে দিয়েছি নিজের কাছে।

লুক চেঞ্জের জন্য কী করেছিলেন?

আমি এরকম লুক চেঞ্জ কয়েকবারই করেছি। এর আগে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ করার সময়ও নিজেকে বেশ পরিবর্তন করেছিলাম। নাইমা চরিত্রের জন্য আমাকে অনেক শক্ত হতে হয়েছে। সব ধরনের সৌন্দর্যচর্চা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। প্রতিদিন ছাদে গিয়ে দাঁড়াতাম সানট্যান ফেলতে।

চরিত্র ধারণের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

চরিত্র ধারণের পদ্ধতিটা বেশ কৌশলী। অমিতাভ ভাইয়ের একটা গুণ হলো উনি চরিত্র বুঝিয়ে অভিনেতার ওপর ছেড়ে দেন। ধীরে ধীরে রপ্ত করেছি নাইমা কীভাবে হাঁটে, কীভাবে কথা বলে, তার উত্তরবঙ্গের টান ঢাকায় এসে কেমন বদলে যায়, এখন কী চিন্তা করছে—এভাবে দৃশ্য ধরে ধরে কাজ করেছি। রিকশা চালানো যেহেতু প্রচণ্ড কষ্টের কাজ এবং ক্লান্ত হয়ে যেতাম, তাই আমাকে সেরকম খাবার খেতে হতো।

অভিনয় শেখার ক্ষেত্রে মা ‘মোমেনা চৌধুরী’র ভূমিকা কেমন?

অনেকটা অবদান আমার মায়ের। ছোটবেলা থেকে থিয়েটার, ফিল্মের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। এজন্য হয়তো কাজ করতে গিয়ে অনেকটা সহজ হয়। ছোট থেকেই মা ও অন্যদের দেখেছি তারা কীভাবে চরিত্র ধারণ করে, কীভাবে সংলাপ মনে রাখে। অবশ্যই সৌভাগ্য যে মায়ের মতো একজন অভিনেত্রীর ঘরে আমার বেড়ে ওঠা।

‘রিকশাগার্ল’-এর পর্দায় মা-মেয়ের রসায়ন কেমন ছিল?

মায়ের সঙ্গে আমার খুব ভালো একটা কাজের সম্পর্ক রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সবার মধ্যে ‘মা’ ডাকতে অস্বস্তি লাগে, অনেক সময় ‘মোমেনা আপা’ বলে ডাকি। মায়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ করি এবং একে অন্যকে সহযোগিতা করেই কাজ করি। মা-মেয়ের আসল রসায়নটাই ক্যামেরায় ফুটে উঠেছে। যেহেতু আমাদের চেহারার একটা মিল আছে, সুতরাং কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে এটা সহজ হয়।

রিকশাপেইন্টিং ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতির পেছনে এ সিনেমার ভূমিকা আছে বলে মনে করেন?

এ ফিল্মের অনেক দিন পর রিকশাপেইন্টিং বিশ্ব ঐতিহ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ধারা নিয়ে ঢাকায় তো অনেক দিন চর্চা চলছিল। সব শিল্পীই এ শিল্পকে ধারণ করেছে। এ চলচ্চিত্রের পর যেহেতু বেশ আলোচনায় এসেছিল সুতরাং কিছুটা ভূমিকা হয়তো রেখেছে। তবে আমি আনন্দিত এটাকে সিনেমায় উপস্থাপন করাতে। এ ফিল্মের মাধ্যমে রিকশাপেইন্টিং নিয়ে স্টাডি করেছি। আমাদের রিকশাপেইন্টার সোলাইমান ভাইয়ের সঙ্গে থেকে তার কাজ দেখে দেখে শিখেছি।

চলচ্চিত্র উৎসবের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

আমি কয়েকটি উৎসবে থাকতে পেরেছিলাম। সেখানে নানা ধরনের প্রশ্ন আসত। বিদেশি দর্শক, যারা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত না, তারা খুব ভালোভাবেই নিয়েছে সিনেমাটি। মূলত বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছায়। তার বিপরীতে তারা বাংলাদেশ থেকে একটু ভিন্ন ধাঁচের কাজ পেয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীরাও ব্যাপক পছন্দ করেছেন। বিদেশের মাটিতে পরিচিত ঢাকা শহরকে দেখে তার বেশ আনন্দিত ছিল।

‘রিকশাগার্ল’ দেশের প্রেক্ষাগৃহে কেমন সাড়া ফেলবে?

আমি বেশ নার্ভাস। এটা অনেক আগের সিনেমা। এরপর কভিডসহ নানান বিষয় সিনেমাকে বদলে দিয়েছে। অমিতাভ ভাইয়ের দ্বিতীয় সিনেমা হিসেবে তার ভক্তরা সবাই দেখতে আসবেন আশা করি। এখানে উনি ভিন্ন কিছু চেষ্টা করেছেন। ‘আয়নাবাজি’ থেকে এটা বেশ আলাদা ধাঁচের। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

বর্তমানে কী কাজ করছেন?

প্রযোজনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছি। দেশে কাজ করব বলেই পড়তে গিয়েছিলাম। এখন বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করছি। আরও কিছুদিন বিদেশে কাজ করে অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দেশে প্রযোজনা নিয়ে কাজ শুরু করব। যদিও এখানে প্রযোজনার সংজ্ঞা আলাদা তবুও এখন দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। বিদেশে যে শিক্ষা-অভিজ্ঞতা নিচ্ছি, তা দেশে এসে কাজে লাগাতে চাই। আর তেমন গল্প পছন্দ হলে অভিনয়ও করতে চাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছেলের সঙ্গে কেক কেটে অপুর জন্মদিন উদ্‌যাপন

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস আজ

টেরিটরি সেলস অফিসার পদে এসএমসিতে চাকরির সুযোগ

বিএনপি রাজনীতি করে মানুষের মুখে হাসি ফোটানো জন্য : ডা. শামীম 

স্বামীকে কিডনি দিতে এক মুহূর্তও দেরি করলেন না তরুণী

গুলশানে ডাক পেলেন পটুয়াখালী বিএনপির ৪ নেতা

৫ পদে একাধিক নিয়োগ দিচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

অনূর্ধ্ব-২০ দল / ৭ ফরোয়ার্ড নিয়ে শক্তিশালী দল ঘোষণা ব্রাজিলের

মারিয়া কোরিনা কি নিজ ভুবনে শান্তিতে আছেন?

জ্বালানি ঘাটতির জন্য রাজনীতিবিদরাও দায়ী : ফাওজুল কবির

১০

উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের কারও সেফ এক্সিটের দরকার নেই : আসিফ নজরুল

১১

নতুন চমক নিয়ে ফিরছে ‘বাহুবলী থ্রি’

১২

নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা, সমস্যা হলে ভোট বন্ধ : সিইসি

১৩

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে বাংলাদেশ

১৪

শাপলা প্রতীক না দিলে ধানের শীষও বাদ দিতে হবে : হাসনাত 

১৫

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলা মানায় না: সাকিব

১৬

‘আমরা নিজেদের সঙ্গেই লড়ছি’ যশকে নিয়ে যা বললেন নুসরাত

১৭

এমবাপ্পের গোলের দিন ফ্রান্সের জয়, লুক্সেমবার্গকে হারিয়ে শীর্ষে জার্মানি

১৮

সদরঘাটে চালকের ছুরিকাঘাতে চালক খুন

১৯

মার্কিন সেনাদের বিস্ফোরক সরবরাহ করা কোম্পানিতে বিস্ফোরণ

২০
X