

দেশীয় চলচ্চিত্রে ১৯৯১ সালে গুণী নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে ‘চাঁদনী’ সিনেমার মধ্য দিয়ে দুই নতুন মুখ, দুই নতুন নায়ক-নায়িকা নাঈম-শাবনাজের অভিষেক হয়েছিল। আর ‘চাঁদনী’ সিনেমার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তারুণ্যের জোয়ার শুরু হয়েছিল। যেই জোয়ারের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে সালমান শাহ-মৌসুমী, সালমান-শাবনূর জুটিরও উত্থান হয়। ‘চাঁদনী’ সিনেমা মুক্তির পর নাঈম-শাবনাজ এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, জুটি হিসেবে তাদের দর্শক গ্রহণ করে নেয়। যে কারণে জুটিবদ্ধ হয়ে তারা পরে ‘জিদ’, ‘লাভ’, ‘সোনিয়া’, ‘অনুতপ্ত’, ‘চোখে চোখে’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ সিনেমায় অভিনয় করেন।
নাঈম-শাবনাজ ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন। একে অন্যের বিপরীতে ছাড়া বাইরে তারা খুব কম সিনেমায়ই অভিনয় করেছেন। ২০০১ সালে সর্বশেষ এ জুটিকে প্রয়াত আজিজুর রহমানের ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ সিনেমায় দেখা যায়। তবে ২০০৭ সালে আজিজুর রহমানেরই ‘ডাক্তার বাড়ি’ সিনেমায় শাবনাজ অভিনয় করেন। সত্যি বলতে, ‘চাঁদনী’ সিনেমা মুক্তির মধ্য দিয়ে শাবানা, কবরী, ববিতা, রোজিনা, সুনেত্রা, দিতি, সুচরিতা, চম্পাদের মতো নামিদামি তারকার ভিড়ে তারুণ্যের এক ভিন্নধারা এনে দিয়েছিলেন নায়িকা শাবনাজ।
দর্শকদের কাছে তিনি ‘শাবনাজ’ নামে পরিচিত হলেও তার পারিবারিক নাম সাবরিনা তানিয়া। তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। তার ছোট বোন মৌও একজন অভিনেত্রী। শাবনাজের বাবার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত ছিলেন গুণী পরিচালক আজিজুর রহমান। তার মাধ্যমেই পরিচালক এহতেশামের হাত ধরে রুপালি পর্দায় পা বাড়ান শাবনাজ। এই মুহূর্তে সারা বাংলাদেশে আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর বিষয়টি। বাংলা সিনেমার এ ক্ষণজন্মা নায়কের বিপরীতেও শাবনাজ অভিনয় করেছেন শিবলী সাদিকের ‘মায়ের অধিকার’, হাফিজ উদ্দিনের ‘আঞ্জুমান’ ও তমিজ উদ্দিন রিজভীর ‘আশা ভালোবাসা’ সিনেমায়। ‘মায়ের অধিকার’ সিনেমাটিই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে এবং দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে সালমান-শাবনাজের তিনটি সিনেমার মধ্যে।
এদিকে আজ শাবনাজের জন্মদিন। জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন না থাকলেও পারিবারিকভাবেই দিনটি উদযাপন করা হবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, এখন আর জন্মদিন ঘিরে কোনো উচ্ছ্বাস কাজ করে না। বাবা-মা নেই, তাদের কথা জন্মদিন এলে বিশেষভাবে মনে পড়ে। ঘরোয়াভাবে যতটা অল্পের মধ্যে উদযাপন করা যায় ঠিক ততটুকুই। জন্মদিনে শুধু সবার দোয়া চাই আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। দর্শক এখনো আমাকে মনে রেখেছেন, এখনো দেখলে আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে আসেন—এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।’
শাবনাজ জানান, ছোট্টবেলা থেকেই তিনি রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি জীবনে প্রথম ‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’র ‘রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড সেন্টার’-এ প্রথম রক্ত দেন ১৯৯৬ সালের ১ ডিসেম্বর। এরপর থেকে আজ অবধি বহুবার বহু মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন রক্ত দিয়ে। ১৯৯৬ সালটি শাবনাজের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ এ কারণেই যে, সেই বছরে ৮ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল নায়ক আলমগীর পরিচালিত ‘নির্মম’ সিনেমাটি, যাতে অভিনয় করে তিনি তার অভিনয় জীবনের একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি পেয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন