মাতৃত্বের জীবন হৃদয় দিয়ে উপভোগ করছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। ছেলে রাজ্যের বয়স এখন মায়ের সঙ্গে থাকার। সেই সঙ্গ কোনোভাবেই যেন বিচ্ছিন্ন না হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই হচ্ছেন নতুন কাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। প্রথমবারের মতো কাজ করছেন কলকাতার সিনেমায়। ‘ফেলুবকশি’ শিরোনামের এ সিনেমায় তার নায়ক সোহম চক্রবর্তী। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন দেবরাজ সিনহা। ক্যারিয়ারের বর্তমান সময়, ছেলেকে নিয়ে শুটিং ও নতুন কাজের ব্যস্ততা নিয়ে পরী কথা বলেছেন কালবেলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার মহিউদ্দীন মাহি—
মোবাইল ফোনে আপনার ছেলে রাজ্যের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছি। সে মনে হয় আপনাকে এখন কথা বলতে বারণ করছে। তাহলে আমি পরে কল দিই?
না, ঠিক আছে। রাজ্য আমার সঙ্গেই ঘুমায় তো, তাই আমি উঠলেই সে উঠে যায়। এরপর মাম্মার মোবাইলে কল এলে সে নোটিশ করে আমি কার সঙ্গে কথা বলছি। তাই সে জানতে চাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন একটি খেলা শিখেছে, সেটাও আমাকে ঘুম থেকে উঠে দেখাচ্ছে।
তাহলে প্রশ্নে যাই?
অবশ্যই।
কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে জয়া, বাঁধনের পর আপনার যাত্রা শুরু হলো। সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্পটি শুনতে চাই...
টালিগঞ্জের সঙ্গে আমাদের ঢাকাই সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীর যোগাযোগ আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। অনেক দিন ধরেই দুই ইন্ডাস্ট্রির তারকারা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝে একটু কম হয়েছিল, এখন আবার বেড়েছে। বিষয়টি ভালো লাগছে। এ ছাড়া শিল্পীর কোনো সীমানা নেই। কাজের প্রয়োজনে বিশ্বের যে কোনো ইন্ডাস্ট্রিতেই অভিনয় করতে হবে। আর সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তারা আমার সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ করে আসছিল। এরপর আমাকে গল্প পাঠায়। গল্পটি দেখে আমি কাজটি করার জন্য হ্যাঁ বলে দিই।
শুটিং কবে থেকে শুরু হচ্ছে?
আমি ১৭ এপ্রিল কলকাতা যাব। লুক ঠিক করে ২৫ তারিখ থেকে কলকাতার বিভিন্ন শহরে শুটিং করব। এর মাঝে ২০ এপ্রিল একবার ঢাকায় আসব। রাজ্যের একটি ভ্যাকসিন আছে সেটি দেওয়ার জন্য। তারপর আবার কলকাতায় চলে যাব।
নতুন ইন্ডাস্ট্রি, তাদের কাজের ধরনও ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির থেকে আলাদা। কী মনে হচ্ছে, কাজের অভিজ্ঞতা কেমন হবে?
এ বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। কারণ দেশের প্রোডাকশনগুলোতে আমি যখন কাজ করতাম তখন আমার সুবিধামতো সবার কাছ থেকে সময় বের করে নিতাম। এরপর রাজ্যকে নিয়ে শুটিং করতাম। ওর সব সুবিধা-অসুবিধার দেখভাল করার সুযোগ দিতে হবে, সেই বিষয়টি আগেই প্রোডাকশনকে জানিয়ে রাখতাম। তারাও আমাকে সেইমতো করে সুযোগ করে দিত। কিন্তু কলকাতায় সেটি দেবে কি না, তা নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু না, তাদের আচরণ ও ভালোবাসা আমাকে প্রথমেই মুগ্ধ করেছে। আমি তাদের বলেছি রাজ্যকে ছাড়া আমি শুটিং করতে পারব না। ওর জন্য আমাকে শুটিং স্পটে আলাদা সময় দিতে হবে। তারা আমার সে কথাই রাখছে এবং তারা বলেছে, এ বিষয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। এমনটি হলে কলকাতায় মনে হচ্ছে আরও চার-পাঁচটি কাজ করতে পারব।
টালিগঞ্জ থেকে বি-টাউনের দিকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?
অবশ্যই আছে। সবে তো শুরু। আমি একটু সুস্থ হই। এবার কাজ দিয়ে সবাইকে চমকে দেব। জীবনে অনেক সময় নষ্ট করেছি, আর নয়। এখন শুধু কাজ আর কাজ, এটি নিয়েই আমার ভাবনা। আমার ইচ্ছে অনেক বড় বড় নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার। সেই যোগ্যতা অর্জনে এরই মধ্যে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেছি। অনেকটাই গুছিয়ে আনছি। ব্যক্তিজীবন দিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এখন সময় শুধু কাজের জন্য ব্যয় করতে চাই। আমার জীবনে রাজ্যের প্রবেশ কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকুক এটাই চাওয়া। ভবিষ্যতে ও যেন বলতে পারে তার মাম্মাম তার জন্মের পর নিজের ক্যারিয়ার ও কাজে মনোযোগী হয়ে কালজয়ী সব কাজ দর্শকদের উপহার দিয়েছে। তাই টালিগঞ্জের পর আমার গন্তব্য কোথায় হবে সেটি সময়ই বলে দেবে। দর্শকদের বলব একটু অপেক্ষা করুন।
আপনার কি মনে হয় ক্যারিয়ারে আপনি অনেক সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি?
কত সুযোগই তো এসেছিল জীবনে। কিন্তু আমি সেসব সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছি। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর আগেও আমার কাছে অনেক ভালো ভালো কাজের সুযোগ এসেছিল দেশ ও দেশের বাইরে থেকে। কিন্তু তখন আমি ক্যারিয়ার ও অভিনয় নিয়ে ততটা সিরিয়াস ছিলাম না। ভাবতাম হলেই হলো। কিন্তু এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বর্তমানে আমার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস চলছে। আমি চাই আমার এ ইনিংসটাই দর্শক ও সমালোচকরা মনে রাখুক। তার জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করছি।
নতুন সিনেমায় আপনার চরিত্র কী?
চরিত্র নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তবে শিগগিরই সিনেমায় আমার একটি লুক প্রকাশ করা হবে।
বর্তমান কাজের ব্যস্ততা?
এখন নতুন কোনো কাজের ব্যস্ততা নেই। কিছু বিজ্ঞাপনের কাজ আছে। সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে সেগুলো সম্পন্ন করব।
ঈদে দর্শকের জন্য নতুন কিছু থাকবে আপনার...
এখনো বলতে পারছি না। তবে কিছু না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
পুরোদমে কাজে ফিরবেন কবে?
রাজ্য আরেকটু বড় হোক তারপর। কারণ সবাই জানে আমাকে ছাড়া ও থাকতে পারে না। এখন আমার কাছে ওর জন্য সময় রাখাই বড় দায়িত্ব।