মহিউদ্দীন মাহি
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০২:২১ এএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নাটক, গানে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বাড়ানোই ছিল আমাদের লক্ষ্য

নাটক, গানে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বাড়ানোই ছিল আমাদের লক্ষ্য

দেশের গুণী অভিনেতা তারিক আনাম খান। স্বাধীনতার সময় থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন তিনি। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৭১ সালে দেখেছেন স্বাধীন বাংলার মানুষদের বিজয় উল্লাস। নিজেও দিয়েছেন জয় বাংলার স্লোগান। স্বাধীনতার সেদিনের গল্প ভাগ করেছেন কালবেলার সঙ্গে। লিখেছেন মহিউদ্দীন মাহি—

স্বাধীনতার ৫৩ বছর। এই দিনটি আপনি সেদিন একদম যুদ্ধের ময়দান থেকে দেখেছিলেন। মনে আছে সেদিনের কথা?

এই দিনের কথা সবই মনে আছে। কীভাবে ভুলে যাব সেদিনের কথা। আমার জীবনের অন্যতম একদিন ২৬ মার্চ। আমি দিনটি একেবারে কাছ থেকে দেখেছি। আমি ছিলাম ৯ নম্বর সেক্টরে। সেখান থেকে সাতক্ষীরা চলে আসি। ওইদিন আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছিলাম। মনে আছে আমিসহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাতক্ষীরা কলেজের কাছে একটি ডাকবাংলোতে ছিলাম। আমরা আমাদের ওপরের নির্দেশ অনুযায়ী অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। এরপর খুলনা বেতার থেকে আসে স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর আমরা যে যার স্থান থেকে প্রস্তুত হতে থাকি। নেমে যাই স্বাধীন বাংলা অর্জনে।

যুদ্ধের সময় আপনার ভূমিকা কি ছিল?

আমাদের ৯ নম্বর সেক্টর ছিল দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে গঠিত। এ ছাড়া এই সেক্টরে সাবসেক্টর ছিল তিনটি। আমাদের দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে মুক্তিবাহিনীর জন্য গান করা, নাটক করা। নতুন নতুন গান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি। আমি নিজেও গান গাইতাম। গলা ভালো ছিল না, তার পরও তাদের শক্তি জোগাতে গাইতাম আমরা। বলতে গেলে সংস্কৃতি আন্দোলন চাঙ্গা রাখাই ছিল আমার এবং আমাদের কাজ। কারণ তখন তো শুধু গোলা বারুদ দিয়েই যুদ্ধ হয়নি। সবাই যে যার স্থান থেকে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই এগিয়ে এসেছে। মূলত নাটক, গানে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বাড়ানোই ছিল আমাদের লক্ষ্য।

মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে আপনার সংযুক্ততা কত সাল থেকে?

আসলে মুক্তিযুদ্ধ মানে তো শুধু ’৭১-এর নয়। এর শুরু তো সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। তবে ’৬৯ সালে স্কুল জীবনেই আমি বাংলাদেশের প্রগতিশীল যত আন্দোলন হয়েছে, সবগুলোর সঙ্গে ছিলাম। রাস্তায় থেকেছি, বিভিন্ন আন্দোলন করেছি, যুক্ত হই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। এরপর তো ৭১ এলো। তবে ’৭১-এর আগেও আমাদের ভয়ংকর গল্প আছে। সেই গল্প সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকতে হবে।

যুদ্ধে যাওয়ার মানসিকতা কীভাবে তৈরি হয়েছিল আপনার মাঝে?

মুক্তির মিছিলে আমি স্কুলজীবন থেকেই নিয়মিত অংশ নিয়েছিলাম। এরপর আমি যখন বুঝতে পারলাম, পূর্ব পাকিস্তানের মাটি আমাদের নয়, উর্দু আমাদের ভাষা নয়, তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের মায়ের সংস্কৃতির কোনো মিল নেই। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এই পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমাদের স্বাধীন হতে হবে। এর পরই যুদ্ধে যাওয়া। যেই অর্জন এখনো আমাকে গর্বিত করছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম গর্বের সঙ্গে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারবে। এই চাওয়া নিয়েই সেদিন যুদ্ধে গিয়েছিলাম।

আপনি সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ, সিনেমা-নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন। ভাষার গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, স্বাধীনতার গল্প ও বিজয়ের গল্প নিয়ে আরও বেশি সিনেমা-নাটক নির্মাণ প্রয়োজন বলে কি আপনি মনে করেন?

নাটক যথেষ্ট হচ্ছে। আমি নিজে অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের নাটকে অভিনয় করেছি। সিনেমাও করেছি বেশকিছু। তবে সিনেমা একটু কম হচ্ছে। এর কারণ, স্বাধীনতার আগের সেই সময় আর এখনকার সময় তো এক নেই। সবকিছু বদলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের গল্পে সিনেমা নির্মাণে খরচও অনেক বেড়েছে। তাই বাজেটের কারণে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা সেভাবে নির্মাণ হচ্ছে না। তবে বর্তমানে অনেক সিনেমা হচ্ছে। সরকার এগিয়ে আসছে। তাই আশাহত হওয়ার কিছু নেই।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আপনার বার্তা...

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমার একটাই চাওয়া। সেটি হলো, দেশের ইতিহাস জানার আগ্রহ বাড়াতে হবে। কারণ আজ যেই মাটি, যেই ভাষা এবং যেই সংস্কৃতি নিয়ে আমরা গর্ব করছি। এর জন্য অনেক রক্ত ক্ষয় হয়েছে। সেই রক্তের গল্প বুকে নিয়ে দেশের সম্মানে নিজেকে নিয়োজিত রেখে সর্বদা কাজ করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ ১৬ দেশে ভোটার নিবন্ধন শুরু

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ৩০০ ভবন চিহ্নিত : রাজউক

সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া কাটতে গিয়ে চোরাকারবারি ধরা

আলেমরাই পারেন মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে : ড. কাইয়ুম

মার্কিন সন্ত্রাসী তালিকায় আরও এক সংগঠন

এক নামের সবাইকে কি মাফ করে দেওয়া হবে? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ

নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ অবৈধ : ডিসি কামরুল হাসান

সি-স্যুট সম্মাননা পেলেন নেসলে বাংলাদেশের পরিচালক এএসএম হাফিজুল

চিরনিদ্রায় ধর্মেন্দ্র

বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

১০

প্রবাসীর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ

১১

ঘুষের অভিযোগ / দুদকের শুনানিতে বিআরটিএ পরিদর্শক বরখাস্ত

১২

চট্টগ্রামে কম্বলের গুদামে ভয়াবহ আগুন

১৩

সুন্দরবনে ৪ জেলে অপহৃত, মুক্তিপণ দিয়ে ফিরলেন একজন

১৪

নির্বাচন আয়োজনে কমনওয়েলথের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

১৫

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি সাদা দলের শিক্ষকদের

১৬

বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার কমনওয়েলথ মহাসচিবের

১৭

যে তারিখে জন্ম সে তারিখে বিয়ে করলে কি ক্ষতি হয়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ

১৮

স্টেডিয়ামে ধ্বংস করা হলো উদ্ধারকৃত ১৬ ককটেল

১৯

যাবজ্জীবনে দণ্ডিত গ্রেপ্তার আলম মলমপার্টির ‘সক্রিয়’ সদস্য

২০
X