দোয়া ইউনুস। গুরুত্বপূর্ণ এক দোয়া। এ দোয়ার মাহাত্ম্য অনেক। যে কোনো সংকট ও অস্থিতিশীল সময়ে এই দোয়া পড়া সুন্নত।
আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে বারবার এ দোয়া পড়েছিলেন। তখন আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ দোয়ার সঠিক আমলে মানুষ দুনিয়ায় যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে উপকার পায়। হাদিসে দোয়া ইউনুসের ফজিলত ও উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহর পয়গাম্বর হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সময় নদীতে ঝাঁপ দিলে তিনি মাছের পেটে বন্দি হন। এ অবস্থায় বিপদে পড়ে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন আর সে দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাই দোয়া ইউনুছ। আর তাহলো-
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়া ইউনুসের বাংলা উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালেমিন।
দোয়া ইউনুসের অর্থ : তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের দলর্ভুক্ত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি এই দোয়া ইউনুসের সাহায্যে আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।
অন্য হাদিস অনুযায়ী, এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দেবেন। সুনানে আত-তিরমিজি : ৩৫০৫, শায়খ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দোয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। আপনার যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয়, ততবার পড়বেন। তবে আমাদের দেশে টাকা কিংবা হাদিয়ার বিনিময়ে হুজুর বা মাদ্রাসার ছাত্রদের ভাড়া করে এক লাখ পঁচিশ হাজারবার এই দোয়া পড়ে যে ‘খতমে ইউনুস’ পড়ানো হয়, এমন দোয়া কেনাবেচা করা বিদআত।
এরকম খতম করানোর কোনো দলিল নেই। আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার দোয়া ইউনুস পড়বেন, এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই।
আপনি নিজের জন্য নিজে যেই দোয়া করবেন, আল্লাহতায়ালার কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। ভাড়া করে হুজুর দিয়ে দোয়া পড়ানো বা কোরআন খতম পড়ানোর কোনো উপকারিতা বা প্রয়োজন নেই।
দোয়া ইউনুসের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। যে কোনো বিপদ-মসিবত, দুশ্চিন্তা- পেরেশানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল।
দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ইউনুস (আ.) নদীতে বিশালাকৃতির একটি মাছের পেটে বন্দি হন। এই মহাবিপদে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন তা-ই দোয়া ইউনুস। এই দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাকে মসিবত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
আল্লাহতাআলা এ ফজিলতপূর্ণ দোয়াটি পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেন এভাবে— ‘আর স্মরণ করুন জুন নুন (মাছ ওয়ালা ইউনুস)-এর কথা। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন, আমি তাকে ধরতে পারব না।
অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহ্বান করলেন- ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জোয়ালেমিন।’ অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তামুক্ত করে দিলাম। আমি এভাবে বিশ্ববাসীদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া : ৮৭)
মন্তব্য করুন