কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

২৫ মার্চ কালরাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন কবি হেলাল হাফিজ

কবি হেলাল হাফিজ। ছবি : সংগৃহীত
কবি হেলাল হাফিজ। ছবি : সংগৃহীত

মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে সারা দেশের নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই অভিযান চলে ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ২৬ মার্চ ভোর পর্যন্ত। এই অভিযানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল মানুষ হত্যা। অভিযানের প্রধান ৩টি লক্ষ্যবস্তুর একটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অপর দুটি লক্ষ্যবস্তু পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সদর দপ্তর এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান কবি হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পড়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতেন। হয়তো তার লেখা বিখ্যাত কবিতাগুলো থেকে বঞ্চিত হতো জাতি।

২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে দেখেন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বের হতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে তার দেখা হয়। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন নির্মলেন্দু গুণ।

ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানবার জন্য সেদিন আজিমপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছিলেন কবি গুণ। পরে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজনে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কবি হেলাল হাফিজ সাংবাদিকতায় যোগ দেন। তারপর ধীরে ধীরে নিভৃত জীবনের পথ বেছে নেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখবোধের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের আকাশচুম্বি খ্যাতিই তাকে নীরব জীবনের পথে ধাবিত করেছে।

কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার, আর মাতার নাম কোকিলা বেগম।

তিনি ১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতায় যোগদান করেন।

হেলাল হাফিজ ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

কবি হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশ হয় ১৯৮৬ সালে। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো বই বের করেননি তিনি। ২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।

তিনি ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এর আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাকসু নির্বাচন / মেয়েদের ৬ হলে ভিপি-এজিএস পদে শিবির, জিএসে আম্মার

রাকসুতে ১৩ হলের ফল ঘোষণা

পরিবেশ, পরিস্থিতি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ব্যর্থ : মোস্তফা জামান

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ঢাবিতে মশাল মিছিল

এইচএসসিতে উত্তীর্ণ / গুমের শিকার হিরুর কন্যা নাবিলাকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

জন্মদিনে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত রাশেদ প্রধান

দুই খুদে ফুটবলারের পাশে বিএনপি

রাকসুতে শহীদ হবিবুর রহমান হলে ভিপি–এজিএসে শিবির, জিএসে আম্মার

বিশ্লেষণ / কেন পাকিস্তান-তালেবানদের মধ্যে সমঝোতা সহজ নয়

১০

রাকসুতে ১১ হলের ফল ঘোষণা, এগিয়ে যারা

১১

শিগগির উদ্বোধন হতে যাচ্ছে হোটেল ‘বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস বে হিলস্’

১২

রাকসু নির্বাচন / নবাব আব্দুল লতিফ হলের ফল ঘোষণা

১৩

রাকসুতে ৮ হলের ফল ঘোষণা

১৪

রাকসু নির্বাচন / শের-ই বাংলা হলের ফল ঘোষণা

১৫

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না এনসিপি

১৬

রাকসুতে জুলাই-৩৬ হলের ফল ঘোষণা

১৭

রাকসু নির্বাচন / রহমতুন্নেসা হলের ফল ঘোষণা

১৮

জুলাই সনদ বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট মাইলফলক : খালেদা জিয়া

১৯

সম্মতি ছাড়াই ঢাবির দুই অধ্যাপককে কমিটিতে রাখল ইউটিএল

২০
X