মুহাম্মদ আশরাফুল হক ভূঞা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলা লোকজ সাহিত্যে কালজয়ী নাম চন্দ্রকুমার দে

বাংলা লোকসাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান সংগ্রাহক চন্দ্র কুমার দে’র ম্যুরাল। ছবি : কালবেলা
বাংলা লোকসাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান সংগ্রাহক চন্দ্র কুমার দে’র ম্যুরাল। ছবি : কালবেলা

চন্দ্রকুমার দে ছিলেন বাংলা লোকসাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান সংগ্রাহক। যেসব লোকগল্প, লোকগীতি পূর্ব বাংলায়, বিশেষত ময়মনসিংহ অঞ্চলে বহুকাল ধরে প্রচলিত রয়েছে, চন্দ্রকুমার দে ছিলেন সেগুলোর একজন সুবিখ্যাত সংগ্রাহক। একই সঙ্গে তিনি একজন দক্ষ লেখক হিসেবেও নাম করেছিলেন।

লোকসাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সংগ্রাহক ১৮৮৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা) কেন্দুয়া উপজেলার আইথর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামকুমার দে। তাদের পূর্বপুরুষদের নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) রাঘবপুর গ্রামে।

অতি অল্প বয়সেই তিনি পিতা-মাতা উভয়কেই হারান। যার দরুণ ছোটবেলা থেকেই তাকে উপার্জনের পথ খুঁজতে হয়েছিল। সংস্কৃত সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানলাভ ছাড়া তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তিনি যেসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘মৈমনসিংহ গীতিকা (১৯২৩)’ এবং ’পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (১৯২৩-১৯৩২)’ নামে প্রকাশিত হয়েছে, যা পরবর্তীতে ইংরেজিতে ‘Eastern Bengal Ballads’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।

কর্মজীবনের প্রথমে তিনি একটি মুদি দোকানে মাস প্রতি এক রুপি বেতনে চাকরি নেন। কাজের প্রতি মনোযোগ না থাকায় তার এক টাকা বেতনের চাকরিটা চলে যায়। পরবর্তীতে তারানাথ তালুকদার মাস প্রতি ২ রুপি বেতনে তাকে কর আদায় সম্পর্কিত কাজে নিযুক্ত করেন।

১৯১২ সালে তিনি ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ‘সৌরভ’ পত্রিকায় লোকসাহিত্যের ওপর কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মজুমদার চন্দ্রকুমার দে’র প্রতিভা আবিষ্কার করেন এবং এই প্রবন্ধগুলোর মাধ্যমে সুধীসমাজের কাছে তার পরিচিতি ঘটে। এ ছাড়া তিনি চন্দ্রকুমারকে গৌরীপুরের জমিদারিতে মাসপ্রতি ৮ রুপি বেতনে গোমস্তার কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন। কর আদায়ের জন্য বিভিন্ন গ্রাম ভ্রমণের সুবাদে তিনি কবিগান ও পালাগান শোনার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং লিপিবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু খাজনা প্রায় কিছুই আদায় করেননি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে (১৩২০ বঙ্গাব্দে) ‘সৌরভ’ পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায় চন্দ্রকুমার দে’র ‘মহিলা কবি চন্দ্রাবতী’ নামক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। দীনেশচন্দ্র সেন এই প্রবন্ধটি পরে অভিভূত হন এবং আরও তিনজন লোকসাহিত্য সংগ্রাহকের সাথে চন্দ্রকুমার দে কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালাগান সংগ্রাহকের পদে নিযুক্ত করেন। এ সময় তার মাস প্রতি বেতন ছিল ৭০ রুপি।

তার সংগৃহীত লোকসাহিত্যগুলোই দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা (১৯২৩)’ এবং ‘পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (১৯২৩ – ১৯৩২)’ নামে প্রকাশিত করেন। মৈমনসিংহ গীতিকায় তার দ্বারা অন্তর্ভুক্ত পালাগুলো হচ্ছে : মহুয়া (রচয়িতা দ্বিজ কানাই), চন্দ্রাবতী (রচয়িতা নয়নচাঁদ ঘোষ), ‘কমলা (রচয়িতা দ্বিজ ঈশান), দেওয়ানা মদিনা (রচয়িতা মনসুর বয়াতী), ‘দস্যু কেনারামের পালা (রচয়িতা চন্দ্রাবতী), কঙ্ক ও লীলা, মলুয়া, দেওয়ান ভাবনা, কাজলরেখা, রূপবতী।

তার সংগৃহীত যেসব পালা পূর্ববঙ্গ গীতিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর কয়েকটির নাম হলো : ধোপার পাট, মইষাল বন্ধু, কমলা রাণীর গান, দেওয়ান ঈশা খাঁ, ভেলুয়া, আয়না বিবি, গোপিনী কীর্তন। এই পালাগুলোর অধিকাংশই ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

মৌখিক ধারার এসব গান ও সাহিত্য মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করে জনসম্মুখে তুলে ধরার মৌলিক কৃতিত্ব চন্দ্রকুমারের। পালা সংগ্রহ ছাড়া চন্দ্রকুমার নিজে বেশকিছু কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে এই মহান ব্যাক্তিত্বের জীবনাবসান ঘটে।

চন্দ্র কুমার দে স্মৃতি রক্ষার্থে তার নিজ গ্রাম আইথর গ্রামে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব কামরুল হাসান ভূঞাকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আল মামুন কোকিলকে সাধারণ সম্পাদক করে ‘চন্দ্র কুমার দে স্মৃতি পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে।

তার স্মৃতি রক্ষার্থে সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় ৫ মার্চ -২০২২ দুপুরে ম্যুরাল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। যা এখন দৃশ্যমান।

চন্দ্র কুমার দে স্মৃতি পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান ভূঞা বলেন, চন্দ্র কুমার দে ছিলেন আমাদের তথা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ লোকজ ধারা। এই লোকজ সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারে জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আইথর গ্রামের নিজের বাড়িতে চন্দ্র কুমার দের নামে লোক সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়তে হবে। এই কেন্দ্র স্থাপন এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এখনো যমুনার সামনে অবস্থান বিক্ষোভকারীদের

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা

আগুনে ঘি ঢালা নয়, শান্তি চাই : এরদোয়ান

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

আরব সাগরে ভারতের অভিযান, টার্গেটে পাকিস্তান

০৯ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

০৯ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

অবশেষে গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী

১৭ দিন পর রাজশাহী পলিটেকনিকে খুলল তালা

শেখ হাসিনার পক্ষে শিক্ষার্থীদের স্লোগান, প্রধান শিক্ষককে শোকজ

১০

স্বাস্থ্য পরামর্শ / মায়ের গর্ভেই থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

১১

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

১২

মরদেহ দাফনের পাঁচদিন পর বাবা জানলেন সন্তান জীবিত

১৩

দেশজুড়ে ভারতের ২৪টি বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা

১৪

সাবেক মেয়র আইভীকে আটকের খবরে বাড়ি ঘেরাও

১৫

পাকিস্তানের মিসাইল বৃষ্টি, অন্ধকার ভারত

১৬

ভারতের প্রত্যাঘাত ছিল অ-উত্তেজক ও সুনির্দিষ্ট : বিক্রম মিশ্রি

১৭

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান

১৮

দৌলতপুরে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ পরিবারের দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা বকুল

১৯

সরকারি বাঙলা কলেজে দ্বিতীয় আন্তঃবিভাগ বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত

২০
X