১৪ বছর পর প্রথমবারের মতো সিরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তেল রপ্তানি করেছে। সম্প্রতি টারতুস বন্দর থেকে ৬ লাখ ব্যারেল হেভি ক্রুড অয়েল বহনকারী একটি ট্যাংকার গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বি সার্ভ এনার্জির সঙ্গে এই চুক্তি সিরিয়ার বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে আংশিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সিরিয়ার ওপর থেকে কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
২০১০ সালে সিরিয়া দৈনিক প্রায় ৩ দশমিক ৮ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করত। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দেশটির তেল খাত। তখন দামেস্ক সরকার বাধ্য হয় তেল পাচার, বার্টার বাণিজ্য ও অস্বচ্ছ লেনদেনে নির্ভর করতে।
এবারের চালানটি সিরিয়ার একাধিক তেলক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। কুর্দি নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া তেল সরবরাহের ধারাবাহিকতায় এ রপ্তানি হলেও রাজনৈতিক টানাপোড়েনে সেই সহযোগিতা দুর্বল হয়ে গেছে।
বি সার্ভ এনার্জির সঙ্গে চুক্তিতে দামেস্ক এবার বৈধ বাণিজ্যিক ও বীমা কাঠামো নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গত জুনে এক নির্বাহী আদেশে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
একই সময়ে নতুন সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পদক্ষেপ নিয়েছে। টারতুস বন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জুলাইয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতা সই হয়। এতে রাশিয়ার আগের চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। ফলে মস্কোর অর্থনৈতিক প্রভাব হ্রাস পায় এবং উপসাগরীয় বিনিয়োগকারীরা সুযোগ পায়।
নতুন সরকার ডিক্রি নং ১৫০/২০২৫ জারি করে তেল, বিদ্যুৎ ও পানি খাত একত্রিত করে একটি নতুন জ্বালানি মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এর লক্ষ্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ চালান সিরিয়ার বাজারে ফেরার সংকেত হলেও নিয়মিত রপ্তানির নিশ্চয়তা এখনো নেই। বিশ্লেষক ফিরাস জেইন আল-দিন বলেন, এটি হয়তো প্রতীকী পদক্ষেপ, আবার হয়তো নিয়মিত চালানের সূচনা। তবে অবকাঠামো পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া উৎপাদন বাড়ানো কঠিন হবে।
তার মতে, রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে সিরিয়া দুই মাসে অর্ধ থেকে এক মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত রপ্তানি করতে পারে, যা স্থানীয় মুদ্রার ওপর চাপ কমাবে। কিন্তু যদি নিষেধাজ্ঞা ফিরে আসে, তাহলে আবারও পাচার ও বার্টার বাণিজ্যে ফিরতে হতে পারে। সূত্র : শাফাক নিউজ
মন্তব্য করুন