কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১৭ পিএম
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
গবেষণা

সবুজায়নের পোশাক কারখানার মুনাফা বেড়েছে, কমেছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি 

পুরোনো ছবি।
পুরোনো ছবি।

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব স্বীকৃত সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে বাংলাদেশের শতাধিজ পোশাক কারখানা। এক গবেষণা বলছে, সবুজায়ন পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে এসব কারখানার মুনাফা বেড়েছে আর কমেছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

সিপিডি ও সুইডেন দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের সবুজ রূপান্তর নিশ্চিত করা শীর্ষক ডায়ালগে এসব তথ্য জানানো হয়। ডায়ালগে তৈরি পোশাক খাতের সবুজায়ন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্স ফেলো মুনতাসির কামাল।

২০২২ সালের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালে ৪০৩ ফ্যাক্টরি থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত ও ৪৫৪১ কর্মকর্তা, কর্মচারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে থেকে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদন জানানো হয়, বড় প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বড় কারখানার ৯৬.৮৬ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৮৯.৫৮ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৮৪.১৬ শতাংশ ও ৯৫. ০৭ শতাংশ বেড়েছে। বড় ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ৩৪.০৯ শতাংশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ৮১.৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৬৫.২০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৪.৫৯ শতাংশ ও ৭৬.৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এই ধরনের ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ৩৩.৮০ শতাংশ।

সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে মাইক্রো কারখানার ৮৪.৪৮ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৬৩.১৩ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৩.৮৭ শতাংশ ও ৭৫.৭১ শতাংশ বেড়েছে। মাইক্রো ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ১৫.৯৫ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তদারকি, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়সহ নানা কারণে পোশাক কারখানায় সবুজায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, অনেক কারখানার বিভিন্ন ধরনের সবুজায়ন সার্টিফিকেট নিয়েছে। এর পাশাপাশি দেখছি-লিড একটা সার্টিফিকেশন আছে, যেটা ইউএস জিএফের অধীনে হয়ে থাকে। সেটার মধ্যে এনার্জি, ওয়াটার, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, কেমিক্যাল ওয়েস্ট এই সবই আছে। সেই সার্টিফিকেট প্রায় ২০০ কারখানা নিয়েছে, আর ৪০০-৫০০ পাইপলাইনে আছে।

তিনি বলেন, কিন্তু আমরা যখন বায়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন শুনছি তাদের চাহিদা ভিন্ন। সবুজের সংজ্ঞা, সূচক ভিন্ন এই সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে। সেখানে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এই চাহিদাগুলো যদি একীভূত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে রপ্তানিকারকদের সুবিধা হয়। একেক রপ্তানিকারকের চাহিদা একেক রকম, লিডকে অনেক বায়ারই স্বীকার করতে চায় না। তার মানে আরও প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের সবুজ কারখানা গ্লোবাল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। আমার মনে হয় সিপিডিকে অন্যান্য দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। পোশাক কারখানা এরই মধ্যে তীব্র নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

তিমি বলেন, ২০০ এর অধিক সবুজ কারখানা আমাদের আছে। ৭৩টি প্লাটিনাম রেটিং, ১৫০টি গোল্ড, ১০টি সিলভার রেটিং। বিশ্বের সেরা ১৫টি লিড ফ্যাক্টরির ১৩টি বাংলাদেশে। ৫০০০ ফ্যাক্টরি সবুজায়ন সার্টিফিকেট নেওয়ার পথে আছে।

ব্যবসায়ী তাবিথ আওউয়াল বলেন, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া যতই সবুজ হোক না কেনো, বের হওয়া পণ্যটি সবুজ না হয়- এটা ভবিষ্যতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে। ফ্যাশন কোম্পানিগুলোকে ২০৩০ সাল নাগাদ উৎপাদনের একটা অংশ রিসাইকল টেক্সটাইল দিয়ে করতে হবে। আমাদের রিসাইকেল করা যায় এমন বর্জ্যের উৎসের প্রয়োজন। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বছরে ৫.৮ ট্রিলিয়ন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপন্ন করে। আমরা যদি সেটা সংগ্রহ করতে পারি তাহলে রিসাইকল পণ্যে উৎপাদনের বড় সমস্যা সমাধান করতে পারবো। কিন্তু সরকার বর্জ্য নিয়ে বর্জ্য বলতে চায় না। তাদ্ব্র বর্জ্য বিনিময় নীতিমালা নেই। এ কারণে আমরা দেখছি ল্যান্ডফিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, বর্জ্য বেড়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এই গবেষণা আমাদের ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে। আমরা সবুজ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে মনোযোগী হয়েছি। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। এখানে সবুজায়নের পাশাপাশি দূষণ ও কমাতে হবে।

তিনি বলেন, এনফোর্সমেন্ট-রেগুলেশন এইগুলো গর্ভনেন্স ইস্যু। এইটা সবচেয়ে কঠিনও। এনফোর্সমেন্ট ও রেগুলেশন ঠিক মতো হলে আমাদের বাজার অর্থনীতি ঠিক মতো কাজ করে। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা না, সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব। বাজার যাতে কাজ করতে পারে। এতে পরিবেশের উপর যেনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে বাজারে কোনোরকম খবরদারি না করে বাজারকে সহযোগিতা করা, প্রতিযোগিতা মূলক বাজার কাঠামোর মধ্যে যেনো সবাই কাজ করে সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস খাতের প্রাইস ফরমেশন সরকার নির্ধারন করে দিতে পারে না, প্রাইস চাইতেও পারে না। বায়ারদের কাছ এটা চাইতে হবে শিল্প মালিকদের। ভালো পণ্য চাইতে হলে, সবুজায়ন চাইলে যেহেতু বায়ারদের প্রিমিয়াম পাইস দিতে হবে কারণ আমরা জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের মধ্যে আছে। এক্ষেত্রে সরকার সবুজায়ন করার ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দিতে পারে।

তিনি বলেন, এই শিল্পের বিকাশে ডলারের যে অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে আমাদের। এটা রপ্তানিখাতকে সহায়তা দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। এটা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রণোদনা বলে আমি মনে করি।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জোবাইদা রহমান আসছেন শুক্রবার সকালে

কুকুরছানা হত্যায় গ্রেপ্তার নারীর সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ : ডিএমপি

ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রবি শঙ্কর কন্যা

মামদানিকে পাত্তা না দিয়ে নিউইয়র্ক যাবেন নেতানিয়াহু

মাইকিং করে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের

বিএনপির আরও ৩৬ প্রার্থীর কে কোন আসনে

চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব আর দেখতে চাই না : শিবির সভাপতি

আড়ংয়ে শুরু হচ্ছে ‘উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড’, চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত

আকরামের ঐতিহাসিক রেকর্ড ভাঙলেন স্টার্ক

১০

আগামী নির্বাচন হবে বিশ্ব স্বীকৃত ঐতিহাসিক নির্বাচন : সালাহউদ্দিন

১১

স্কুলের তালা ভেঙে প্রাথমিকের পরীক্ষা নিলেন ইউএনও 

১২

এবার আগুনে দগ্ধ হলেন আরিফিন শুভ

১৩

হামজা ও মিরাজের সঙ্গে এক স্বর্ণালী সন্ধ্যায়

১৪

সন্তানহারা মা কুকুর পেল নতুন ৪ ছানা, আদর-যত্নে কাটছে সময় 

১৫

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল চীন

১৬

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে চায় ২ দেশ

১৭

‎জবিতে সশরীরে ক্লাস শুরু মঙ্গলবার

১৮

ডিএমপির ৫০ থানার ওসি বদল

১৯

প্রেমিকের হুডি চুরি করতেন ভারতীয় এই অভিনেত্রী

২০
X