ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব ও সাবেক সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেছেন, ‘আপনারা বিএনপির প্রতি আস্থা রাখবেন। কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। কথা দিচ্ছি, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর আমরা কাঁটার আঁচড়ও লাগতে দেব না।’
শুধু তাই নয়, গত ১৮ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারা দেশে আপনাদের ওপর সংঘটিত প্রতিটি সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। এখানে বিএনপির কোনো লোক যদি জড়িত থাকে, তাদেরও বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে শুক্রবার (০৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর স্বামীবাগে ইসকন আশ্রমে ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তবে তিনি এক বার্তায় ভবিষ্যতে ইসকন মন্দিরে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
আব্দুস সাত্তার আরও বলেন, একটি মহল বিএনপিকে নিয়ে নানা কথা বলার চেষ্টা করে, অপপ্রচার চালায়। আপনারা (ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা) কেউ এসব অপপ্রচারে কান দেবেন না। অপপ্রচারে কান দিয়ে বিএনপিকে ভুল বুঝলে তা হবে দুঃখজনক। এ দেশ সবার। বিএনপি সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরের চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্নে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশে এখন আস্থার সংকটে ভুগছে। তারা এখন নিশ্চয় ভাবছেন, আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন?
আমি বলব, বিএনপির প্রতি যদি আপনাদের আস্থা থাকে, আপনারা বিএনপিকে ভোট দেন। তবে নিজেদের স্বার্থে আমাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, আমাদের কেউ যেন কোনো একটি দলের ঘরের লোক মনে না করে। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব তাড়াতাড়ি ভালো একটি নির্বাচন দেবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বিজন কান্তি সরকার বলেন, ইসকনকে বিভিন্ন সময় জঙ্গি তকমা দেওয়ার চেষ্টা হয়; কিন্তু ইসকনে জঙ্গি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মানবতার কল্যাণে কাজ করে থাকে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে ‘হিন্দু কার্ড’ খেলেছে; কিন্তু হিন্দুদের কল্যাণে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজ করেনি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ট্রাস্টি সুশীল বড়ুয়া বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘মাইন্ডসেট’-এ পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন। আর সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, সংগঠনের ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক শুভ নিতাই দাস ব্রহ্মচারী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম খান টিপু প্রমুখ।
মন্তব্য করুন