আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যানজটে বাড়ছে দুর্ভোগ, চসিকের সঙ্গে হকারের লুকোচুরি

হকারের দখলে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট এলাকার সড়ক ও ফুটপাত। ছবি : কালবেলা
হকারের দখলে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট এলাকার সড়ক ও ফুটপাত। ছবি : কালবেলা

রোজায় চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নগরীজুড়ে উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সেই ঘোষণা অনুযায়ী চিহিৃত কয়েকটি স্পটে উচ্ছেদও হয়। উচ্ছেদের শেষ হতেই ফিরে আসে দখলদাররা। এরপর আবার উচ্ছেদে নামে চসিক। বারবার উচ্ছেদের পরও সড়কে স্বস্তি ফেরানোর যে ঘোষণা চসিকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এ বাস্তবতায় সড়কে যানজটের কারণে বাড়ছে দুর্ভোগ। সড়ক ও ফুটপাত থেকে বেদখল উচ্ছেদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, পাঁচলাইশ, আমতল, রিয়াউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, ফলমন্ডিসহ আশপাশের এলাকায় বড় ধরনের উচ্ছেদ কার্যক্রম চালায় চসিক। এর মধ্যে ফলমন্ডি থেকে আমতল পর্যন্ত অভিযানটি সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযান বলে চসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে উচ্ছেদ হলেও এসব সেখানে দখল ধরে রাখতে পারেনি সংস্থাটি। উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে হকারের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সবশেষে হকার উচ্ছেদ প্রতিবাদ ও পুনর্বাসনের দাবিতে রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে আসছেন চট্টগ্রামের হকাররা। অন্যদিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েক দফায় ফলমন্ডি এলাকা থেকে আমতলী পর্যন্ত দেখা গেছে, জহুর হকার মার্কেটের সড়ক ও ফুটপাতের দুই পাশেই আবারও বসে পড়েছেন হকাররা। পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে শার্ট, প্যান্ট, জুতা, স্যান্ডেল, রকমারি খাবার, মোবাইল পার্টসসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন সংলগ্ন ব্যস্ততম সড়কে এতে করে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। নগরের নিউমার্কেট এলাকায় মূলত রিয়াজউদ্দিন বাজার-জহুর হকার্স মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট রয়েছে। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে এ এলাকার ব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। তা ছাড়া ফলমন্ডির পাশেই রয়েছে কদমতলী বাসস্ট্যান্ড। তাই রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলে থাকায় বাড়ে যানজটের ভোগান্তি।

নগরের সদরঘাট এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোজ্জামেল হক। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বাসা চকবাজার। সদরঘাট থেকে চকবাজার এলাকা পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে যানজট থাকে। আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট আর চকবাজার এলাকায় ফুটপাত ও সড়ক দখলের কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে চসিকের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘নিউমার্কেট এলাকায় উচ্ছেদের আধা ঘণ্টা পরেই দখলদাররা ফিরে আসে। তাদের ব্যবহৃত চৌকি, মালপত্র এগুলো নালা এবং ড্রেনের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। উচ্ছেদের পর আমরা বেশ কয়েকটি ড্রেন উদ্ধার করেছিলাম। কিন্তু এগুলো তারা আবারও দখল করে নেয়।’

মূলত গত ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে বিআরটিসি ফলমন্ডি থেকে স্টেশন রোড, নিউমার্কেট মোড় হয়ে জিপিও এবং আমতলা পর্যন্ত অংশের প্রায় এক হাজার হকারকে উচ্ছেদ করে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করে চসিক। এরপর চসিকের পক্ষ নগরের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্টেশন রোড এলাকার ফুটপাত পুনরায় দখল ঠেকাতে অভিযানে গেলে চসিকের ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মী ও পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ সময় হকার ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর চসিকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এরপর থেকেই উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

সবশেষ গত ২০ মার্চ পুরাতন রেলস্টেশন থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত পুনরায় দখল ঠেকাতে অভিযান চালায় চসিক। সেদিন থেকে শুরু করে গত ১০ দিনে বায়েজিদ থানার চৌধুরী নগর আবাসিক, চান্দার থানার শাহ আমানত সেতু সড়কে ফুটপাত থেকে ভ্রাম্যমাণ হকার তাড়াতে অভিযান চালায় চসিক। ১ এপ্রিল নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানায় অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয় একটি গাড়ির গ্যারেজ। এ সময় ৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে চসিকের ভ্রম্যমাণ আদালত।

তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ, কুলগাঁও বাস-ট্রাক টার্মিনাল, সরাইপাড়া, পাঁচলাইশ মক্কী মসজিদসহ বেশকিছু এলাকায় উচ্ছেদ চালিয়ে অবৈধ দোকানপাট, ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে চসিক। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২০ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন বছরে মাথায় এবারই উচ্ছেদ ঘিরে একেবারেই হার্ডলাইনে দেখা গেছে সংস্থটিকে।

চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীও জানিয়েছেন ফুটপাত ও সড়ক সহসাই বেদখল মুক্ত করা হবে। তিনি কালবেলাকে বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমরা ফুটপাত করে দেব। সেটা আরেকজনে দখল করবে, সেটা হতে পারে না। বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে বানানো ফুটপাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না, নারীরা নিরাপদে হাঁটতে পারবে না তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই ফুটপাতে হকার বসতে দিব না। মানবিক বিবেচনায় হকারদের জন্য একটি হলিডে মার্কেট তৈরি করব। চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশনের সভাপতি মিলন হোসেন মিলন কালবেলাকে বলেন, মেয়র রেজাউলকে আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। কিন্তু আজকে ৩ বছরে তিনি কোনোদিন আমাদের সঙ্গে মিটিং করেনি। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া হাজার হাজার গরিব হকারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই যদি পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হয়, তাহলে আমাদের জীবন চলে গেলেও আমরা ফুটপাত ছাড়ব না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অমোচনীয় কালির বিষয়ে যা জানালেন নির্বাচন কমিশন

মিরপুরে আগুনে হতাহতের ঘটনায় জমিয়তের শোক

মেট্রোরেল যাত্রীদের জন্য বড় সুখবর

ওজন কমাতে খেতে হবে যেসব সহজলভ্য সবজি

ফিফার অদ্ভুত নিয়মে র‌্যাংকিংয়ের ২১০ নম্বর দলটিও খেলতে পারে বিশ্বকাপে

ওএমআরে ভোট গণনা হবে, সময় নষ্ট হবে না : সহ-উপাচার্য

ব্রেইলে ব্যালট না থাকায় ভোট নিয়ে শঙ্কায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটাররা

কর্ম ভিসা কমিয়ে দিচ্ছে ইউরোপের এক দেশ

অস্ত্র মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু 

সাড়া ফেলেছে এফ কে ডলারের ‘তুমি আমার কে’

১০

ডেঙ্গুর হটস্পট ময়মনসিংহ

১১

দুদকের পরিচালক হলেন দুই পুলিশ সুপার

১২

ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে জাবি ছাত্রী নিহত

১৩

নিখোঁজের ৪ দিন পর তরুণীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

১৪

পিআর নিয়ে তর্ক-বিতর্ক পার্লামেন্টে গিয়ে হবে : মির্জা ফখরুল 

১৫

মিরপুরে আগুন : ৭ লাশ শনাক্তের দাবি স্বজনদের

১৬

ঘরেই তৈরি করুন মেজবানি মসলা

১৭

সম্পর্ক নীরবে ভাঙতে পারে এই ১১ কথা

১৮

মা হতে চলেছেন সোনাক্ষী

১৯

৫ মাসের শিশুকে অপহরণ, বিক্রি করা হয় ১ লাখ ২০ হাজারে

২০
X