

ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে স্যার ফজলে হাসান আবেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ‘তরুণ আবেদ: সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাসের সম্মিলন’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে। অনুষ্ঠানে স্যার ফজলের তরুণ বয়সের সিদ্ধান্ত, মূল্যবোধ, নৈতিক দৃঢ়তা ও জীবনদর্শনের নানা দিক তুলে ধরা হয়, যা পরবর্তীকালে তাকে উন্নয়ন খাতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত করে।
অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদের আজীবন জ্ঞানার্জনের প্রতি গভীর কৌতূহল ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই কৌতূহল শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে হবে। তরুণদের মধ্যে অনুসন্ধানী মনোভাব, সৃজনশীলতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে তুলতেই তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন।’
ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ বলেন, ‘আমার বাবা সবসময় নিজের হৃদয়ের কথা অনুসরণ করতেন। তার সেই দর্শন অনুসরণ করেই আমি আমার জীবনে পথ চলার সাহস ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘আবেদ ভাই আমাদের শেখাতেন—নিজের অস্তিত্বের কারণ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলেই জীবনের অর্থ স্পষ্ট হয়।’
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, ‘আবেদ ভাই অল্প কথা বলতেন, কিন্তু প্রতিটি কথাই ছিল গভীর অর্থবহ। তিনি কখনো ব্যক্তিগত সুনামের জন্য কাজ করেননি—মানবসেবাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য।’
প্যানেল আলোচনায় আরও অংশ নেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও গবেষক আফসান চৌধুরী, ব্র্যাকের এক্সিলারেটিং ইম্প্যাক্ট ফর ইয়ং ওমেন (AIM)-এর পরিচালক পরমা হোসেইন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার তাওহীদ আনোয়ার এবং ১৭তম সমাবর্তনের ভ্যালেডিক্টোরিয়ান রানা তাবাসসুম। আলোচনায় নতুন প্রজন্মের ভাবনা, সমাজ ও বিশ্ব নিয়ে তাদের স্বপ্ন এবং আবেদ ভাইয়ের জীবনদর্শনের প্রভাব উঠে আসে।
আফসান চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা আবেদ ভাইয়ের ভেতরে স্বাভাবিকভাবেই ছিল। এই সেবার মনোভাব সবার মধ্যেই থাকে—প্রয়োজন শুধু সঠিক অনুপ্রেরণা।’
অনুষ্ঠানে স্কট ম্যাকমিলান রচিত স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনীগ্রন্থ ‘হোপ ওভার ফেইট’ থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রক্টর ড. রুবানা আহমেদ।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ডিজিটাল প্রতিযোগিতায় গদ্য, কবিতা ও ভিজ্যুয়াল আর্টের মাধ্যমে স্যার ফজলেকে তুলে ধরা হয়। প্রতিযোগিতার সেরা ছয়জন শিক্ষার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন আসিফ সালেহ, তামারা হাসান আবেদ ও অধ্যাপক ফারহাত আনোয়ার।
এ ছাড়া ‘যদি আবেদ ভাই এখানে থাকতেন’ শীর্ষক একটি নাটিকা পরিবেশন করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যান্ড থিয়েটার ফোরাম, যেখানে তরুণ আবেদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের একটি কল্পনাভিত্তিক সংলাপ উপস্থাপন করা হয়। মনন ক্লাবের শিক্ষার্থীরা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনা করেন।
অনুষ্ঠানে স্যার ফজলেকে স্মরণ করে বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেসের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা এবং তার সহধর্মিণী লেডি সৈয়দা সারওয়াত আবেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মৌটুসী কবীর এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আজওয়াদ মোস্তাফিজ আদর।
উল্লেখ্য, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
মন্তব্য করুন