

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদের পানির স্তর কমে গিয়ে জেগে ওঠা বালু চরে স্বপ্ন বুননে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুড়িগ্রামের চিলমারীর চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা। আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে প্রতিবছর এই সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির স্তর কমে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বালুচর জেগে ওঠে। এই চরে গুটিকয়েক ফলন দেখা যায়। এর মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন বেশি সংখ্যক চাষ হয়। এর মধ্যে দেখা গেছে, বিশাল এই বালুচরগুলোয় পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। তবে আগাম বন্যার শঙ্কাও রয়েছে।
কৃষকরা বলেন, তিন মাস মেয়াদি এই ফসলে লাভজনক। কিন্তু এবার কিছুটা সারের সংকট ও বীজের দাম বেশি পড়েছে। আর এই পেঁয়াজের ফলন ওঠানোর সময় বন্যার শঙ্কা থেকে যায়। যদি আগাম নদীতে পানি না বৃদ্ধি পায় তাহলে আশানুরূপ ফলন ঘরে ওঠানো সম্ভব।
কৃষি অফিস জানায়, এবার প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। চাষের খরচ কম হলেও সেচ ও সারের খরচ তুলনামূলক বেশি। এপ্রিল মাসের মধ্যে বন্যার শঙ্কা না থাকায় বোরো ধান ছাড়া অন্যান্য রবিশস্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের তীর বিশাল বালুচর জুড়ে রোপণ করা হচ্ছে পেঁয়াজের বীজ। বিস্তীর্ণ এই চরগুলো সদ্য জেগে ওঠা। দেখা যায়, কৃষকরা হাতছানি দিয়ে বীজ লাগাচ্ছেন এবং বালু দিয়ে এসব ঢেকে দিচ্ছেন। এবার বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে ব্যয় হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা।
অষ্টমীরচর ইউনিয়নের মুদাফৎ কালিকাপুর ফকির পাড়া এলাকার কৃষক আকরম মুন্সি বলেন, ‘আল্লাহর ওপর ভরসা করে পেঁয়াজ লাগাচ্ছি। গত বারের চেয়ে এ বছর খরচ বেশি, সার পাচ্ছি না বীজের দাম অনেক, সরকারি কোনো সহযোগিতা পাই না আমরা। সব কিছু দোকান থেকে বাকিতে নিয়ে চাষ করতে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি পেঁয়াজের ফলন ভালো হবে। আর পেঁয়াজ ওঠানোর সময় যদি আগাম নদীতে পানি হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ হবে।’
চিলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় কালবেলাকে বলেন, বারি পেঁয়াজ-১ খরা সহিষ্ণু জাত যা চরাঞ্চলে তুলনামূলক ভালো হয়। এ ছাড়াও তিন মাস মেয়াদি লাভজনক ফসলের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি আলু, আলু, তিল, তিসি, কালোজিরা ও সরিষা। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন উপকরণ প্রাপ্ত বরাদ্দ অনুযায়ী প্রদান করা হয়। ধারাবাহিকভাবে সব কৃষক এ কর্মসূচির আওতায় আসার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সকল কৃষককে যে কোনো ফসল উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
নদী কর্মী ও বিশ্লেষক জাহানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন কেবল বৈজ্ঞানিক প্রমাণের বিষয় নয়, এটি কুড়িগ্রামের মানুষের প্রতিদিনের বাস্তবতা। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গত সাত বছরে কুড়িগ্রামে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। বন্যা সময় খরা, আবার সময়ে হঠাৎ বন্যা। এসব লক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে ইঙ্গিত করে।
তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রামের বড় বড় নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নিচের জোয়ারের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নদীর উপরিভাগের পানি পরিবেশের অধিক তাপমাত্রার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে নদীর মাঝে ছোট ছোট দ্বীপচর জাগছে। এখন এসব বালুচরের জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি চাষাবাদ করার জন্য কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন