

বাংলাদেশের জুস বাজারে যে কয়েকটি ব্র্যান্ড সময়ের সঙ্গে নিজেকে শুধু টিকিয়েই রাখেনি, বরং পুরো ক্যাটাগরির ভাষা বদলে দিয়েছে, ‘প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক’ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভোক্তার স্বাদ, অভ্যাস ও প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলা এই ব্র্যান্ড আবারও প্রমাণ করল তার নেতৃত্বের অবস্থান। জুস ক্যাটাগরিতে ‘বেস্ট ব্র্যান্ড ইন দ্য বাংলাদেশ ২০২৫’ সম্মাননা অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক নতুন করে নিজের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত করল আরেকটি পালক।
প্রাণ গ্রুপের জুস–যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সে সময় বাজারে আসে প্রাণ ম্যাঙ্গো জুসের কাচের বোতল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল একটি সাহসী উদ্যোগ। তখন প্যাকেটজাত জুসের ধারণা নতুন, আর ম্যাঙ্গো ফ্লেভারকে কেন্দ্র করে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড পরিচয় তৈরি করাও সহজ ছিল না। তবে ধীরে ধীরে ভোক্তার আস্থা অর্জন করে প্রাণ ম্যাঙ্গো। ঘরে ঘরে পরিচিত নাম হয়ে ওঠে এই জুস, যা অনেকের কাছে ‘জুস’ শব্দটিরই সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৯৯ সালে প্রাণ ম্যাঙ্গো জুস টেট্রা–প্যাক আকারে বাজারে আনে প্রাণ গ্রুপ। এটি ছিল ব্র্যান্ডটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আধুনিক প্যাকেজিং, দীর্ঘদিন সংরক্ষণের সুবিধা এবং বহনযোগ্যতার কারণে টেট্রা প্যাক দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই জুস ক্যাটাগরির নেতৃত্বে চলে আসে প্রাণ ম্যাঙ্গো এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে। বিশেষ করে তরুণ ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে প্রাণ ম্যাঙ্গো হয়ে ওঠে দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
একটি ক্যাটাগরির প্রথম ব্র্যান্ড হওয়ার সুবিধা যেমন ছিল, তেমনি ছিল দায়িত্বও। প্রাণ ম্যাঙ্গো শুধু একটি পণ্য নয়, ধীরে ধীরে পুরো জুস ক্যাটাগরির প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। ভোক্তারা নতুন কোনো জুস দেখলে সেটিকে প্রাণ ম্যাঙ্গোর সঙ্গে তুলনা করেই বিচার করতেন। এই বিশ্বাস ধরে রাখাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভোক্তার পরিবর্তিত জীবনধারা ও চাহিদা মাথায় রেখেই প্রাণ ম্যাঙ্গো সময়ে সময়ে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে।
ভোক্তার সুবিধা ও ব্যবহারিক দিক বিবেচনায় নিয়ে ২০১৪ সালে প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংকের পোর্টফোলিওতে যুক্ত হয় পেট–বোতল। এই প্যাকেজিং বিশেষ করে চলতি পথে পান করার জন্য আরও সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। স্কুল, কলেজ, অফিস কিংবা ভ্রমণের সময়—সব ক্ষেত্রেই পেট–বোতলের প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি ব্র্যান্ডটির বিস্তারকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যায় এবং নতুন প্রজন্মের ভোক্তার সঙ্গে সংযোগ আরও দৃঢ় করে।
এই ধারাবাহিক অগ্রগতি ও শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইকুইটির স্বীকৃতি হিসেবেই ২০২৫ সালে প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক অর্জন করেছে ‘বেস্ট ব্র্যান্ড’ সম্মাননা। ব্র্যান্ড ইকুইটি ইনডেক্সের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করায় এই পুরস্কার দেওয়া হয় প্রাণ ম্যাঙ্গোকে। এটি শুধু একটি বছরের পারফরম্যান্স নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে ভোক্তার মনে জায়গা করে নেওয়ারই স্বীকৃতি।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত ১৭তম বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড, করপোরেট প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংকের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘বেস্ট ব্র্যান্ড’ পদক।
প্রাণ মার্কেটিং টিম থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন ডিপুটি ব্র্যান্ড ম্যানেজার ওমর বিন জুবায়ের, সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার মিরাজ সরকার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাহামুদুল হাসান জিসা (হেড অফ মার্কেটিং), জেনারেল ম্যানেজার শেখ সুবায়েল খায়ের, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আলী হাসান আলম। অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা জানান, এই পুরস্কার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কঠোর ও তথ্যভিত্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
বছরের সেরা ব্র্যান্ড নির্বাচন করতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনসার্চ লিমিটেড পরিচালনা করে একটি বিস্তৃত জরিপ। জরিপটি দেশের আটটি বিভাগের শহর ও গ্রামীণ উভয় এলাকায় পরিচালিত হয়। সমান শতাংশের নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণকারী নিয়ে মোট ১২ হাজার ৪০০ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ব্র্যান্ডগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। ভোক্তার সচেতনতা, পছন্দ, ব্যবহার এবং আস্থার মতো একাধিক সূচক বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয় ব্র্যান্ড ইকুইটি ইনডেক্স।
এই অর্জনের মাধ্যমে প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক আবারও প্রমাণ করেছে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভোক্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি একটি ব্র্যান্ডকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে সফল করে তুলতে পারে। কাচের বোতল থেকে টেট্রা প্যাক, সেখান থেকে পেট–বোতল—প্রতিটি ধাপেই প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক বাজারের বাস্তবতা ও ভোক্তার চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েছে।
বাংলাদেশের জুস–বাজারে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন ব্র্যান্ড ও ফ্লেভার আসছে বাজারে। তবে অভিজ্ঞতা, আস্থা ও ভালোবাসার যে সম্পর্ক প্রাণ ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংক গড়ে তুলেছে, তা সহজে ভাঙার নয়। জুস ক্যাটাগরিতে ‘বেস্ট ব্র্যান্ড ইন দ্য বাংলাদেশ ২০২৫’ সম্মাননা সেই বাস্তবতারই প্রমাণ।
মন্তব্য করুন