

রাজনীতি, প্রযুক্তি ও বিনোদন— এই তিন খাতই ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অনলাইন সার্চের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। সার্চ ইঞ্জিনে মানুষের আগ্রহের বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছেন অল্প কয়েকজন পরিচিত মুখ।
আহরেফস সার্চ ভলিউম ডেটার ভিত্তিতে প্লেয়ার্সটাইম পরিচালিত এক বিশ্লেষণে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
গত ১২ মাসের গড় মাসিক বৈশ্বিক গুগল সার্চের হিসাবে, ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সার্চ হওয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতি মাসে তাকে নিয়ে সার্চ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক, যাকে নিয়ে মাসিক সার্চের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। এ তালিকা আবারও প্রমাণ করে, বৈশ্বিক মনোযোগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও ব্যবসা খাতের প্রভাব কতটা শক্তিশালী।
বিনোদন অঙ্গনের দাপট
২০২৫ সালের শীর্ষ দশ সার্চ তালিকার অর্ধেকই দখল করে রেখেছেন সংগীতশিল্পীরা। টেইলর সুইফটের পাশাপাশি সাব্রিনা কার্পেন্টার, এক্সএক্সএক্সটেনটাসিওন ও রোমিও স্যান্টোস– এই শিল্পীদের প্রত্যেকের নাম মাসে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন বার সার্চ হয়েছে। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও বৈশ্বিক ফ্যানবেস সংগীতশিল্পীদের দৃশ্যমানতা এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যা অন্য অনেক খাতের পক্ষে ছোঁয়া কঠিন।
এ ছাড়া চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনও শীর্ষ ১০০ তালিকায় বড় জায়গা দখল করেছে। স্ট্রিমিং সার্ভিসের বৈশ্বিক বিস্তারের কারণে এই খাতই মোট সার্চ ভলিউমের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
খেলাধুলায় তুলনামূলক কম উপস্থিতি
সার্বিকভাবে খেলাধুলার প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও কিছু ক্রীড়াবিদ এখনো বিপুল মনোযোগ ধরে রেখেছেন। ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সার্চ হওয়া ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। পাশাপাশি তরুণ ফুটবলার লামিন ইয়ামাল প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন, যা উদীয়মান ফুটবল প্রতিভা নিয়ে বাড়তে থাকা আগ্রহেরই প্রতিফলন।
বিতর্ক ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে সার্চের উত্থান
২০২৫ সালে সার্চ আগ্রহ কেবল বিনোদন বা খেলাধুলায় সীমাবদ্ধ ছিল না। আলোচিত অপরাধমূলক মামলা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বও সার্চ তালিকায় বড় প্রভাব ফেলেছে। ধর্মীয় ক্যাটাগরিতে পোপ ফ্রান্সিস সবচেয়ে বেশি সার্চ হওয়া ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন। একই সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধ মামলাকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি গণমাধ্যম কাভারেজ অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ সার্চ ভলিউম তৈরি করেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই সার্চ বৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘমেয়াদি জনপ্রিয়তার চেয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদপ্রবাহ বা ব্রেকিং নিউজের ভূমিকা বেশি।
বৈশ্বিক মনোযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য
জাতীয়তা অনুযায়ী বিশ্লেষণে দেখা যায়, শীর্ষ ১০০ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যক্তিত্বদের আধিপত্য স্পষ্ট। মার্কিন নাগরিকরা সম্মিলিতভাবে মাসে গড়ে ২৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি সার্চ পেয়েছেন, যা যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সম্মিলিত সার্চ ভলিউমের চেয়েও অনেক বেশি। বৈশ্বিক শীর্ষ দশের মধ্যে ছয়জনই ছিলেন মার্কিন নাগরিক, যা যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া, রাজনীতি ও বিনোদন শিল্পের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও স্পষ্ট করে।
দেশভেদে ভিন্ন আগ্রহ
দেশভেদে সার্চের ধরনেও বড় পার্থক্য দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পই সবচেয়ে বেশি সার্চ হওয়া ব্যক্তি। কানাডায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব শীর্ষে রয়েছে। স্পেন ও ইতালিতে টেনিস খেলোয়াড়রা সবচেয়ে বেশি আগ্রহের কেন্দ্রে, আর ব্রাজিল ও পোল্যান্ডে সার্চে আধিপত্য ফুটবল তারকাদের। জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক নেতারাই সবচেয়ে বেশি সার্চ হওয়া ব্যক্তিত্ব, যা দেখায়— জাতীয় প্রেক্ষাপট মানুষের অনলাইন আগ্রহ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।
খাত ও লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ
শীর্ষ ১০০ সার্চ হওয়া ব্যক্তিত্বের মধ্যে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন খাত একাই মোট সার্চ ভলিউমের ৩৬ শতাংশ দখল করেছে। সংগীত খাতের অংশ ২৮ শতাংশ এবং খেলাধুলার অংশ ১৬ শতাংশ। তালিকায় পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫৬ শতাংশ। তবে বিনোদন, ফ্যাশন ও রাজপরিবারসংক্রান্ত সার্চে নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, খাতভিত্তিক এই বৈষম্য মূলত কিছু অত্যন্ত দৃশ্যমান ব্যক্তিত্বের কারণেই তৈরি হয়েছে; এটি সার্বিক প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন নয়।
কী বলছে এই তথ্য
২০২৫ সালের সার্চ তালিকা ইঙ্গিত দেয়, বর্তমান ‘অ্যাটেনশন ইকোনমি’ দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তার চেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনার ওপর বেশি নির্ভরশীল। রাজনৈতিক গুরুত্ব, ভাইরাল মুহূর্ত, প্ল্যাটফর্মের বিস্তৃতি এবং টানা গণমাধ্যম কাভারেজ– এসবই দৃশ্যমানতা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রেখেছে।
তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক মনোযোগ আগের বছরের তুলনায় কমসংখ্যক নামের চারপাশে দ্রুত কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং সেই মনোযোগ আরও দ্রুত বদলে গেছে।
সূত্র : গালফ নিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন