বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মধুমতী নদী ভাঙনে এলাকা ছাড়ল শতশত পরিবার

ভাঙনকবলিত মধুমতী নদীতীরবর্তী এলাকাবাসী। ছবি : কালবেলা
ভাঙনকবলিত মধুমতী নদীতীরবর্তী এলাকাবাসী। ছবি : কালবেলা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে মধুমতী নদীর ভাঙনে গ্রাম ছেড়েছে শতশত পরিবার। এবারেও বর্ষা মৌসুমের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। ভাঙন পাড়ের পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত দিন কাটাচ্ছেন আতংকে। প্রতিনিয়ত তাদের একটাই চিন্তা- কখন যেন তাদের বসতভিটা মধুমতী নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন জানা নেই তাদের।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার আবাদি জমি, ভিটেমাটি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সহায় সম্পদ। এমনকি বারবার ভাঙনে ওই এলাকার পাকা রাস্তাসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

রোববার (৭ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ভাঙনের ভয়াবহতা এবং নদীপাড়ের মানুষের আহাজারি।

স্থানীয়রা জানান, একাধিকবার মধুমতী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন এখানকার মানুষ। বারবার প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন রোধের আশ্বাস দিলেও হয়নি কোনো প্রতিকার। বর্ষার শুরুতে এবারও ওই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। তাই ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চায় এলাকাবাসী।

উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের শরিফা বেগম (৫০) জানান, তাদের পূর্বপুরুষের ১০০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের জমি বর্গা চাষ করে পরিবারের সবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এ পর্যন্ত ৩ বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবার। এবারও ভাঙনের দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে। কী করবেন ভেবেই পাচ্ছেন না। তিনি এ ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।

তেলকাড়া গ্রামের হাসমত শিকদার (৭০) জানান, স্বাধীনতার পর থেকে শতশত পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে অন্য জায়গায়। অনেক আপনজন গ্রাম ছেড়ে কোথায় যে চলে গেছে তাদের খোঁজ জানা নেই। তাদের সঙ্গে কখনও আর দেখা হবে কি না তাও তিনি জানেন না।

এ ব্যাপারে ভাঙনকবলিত তেলকাড়া গ্রামের বাসিন্দা রুব্বান বেগম (৪৫), রহিমা বেগম (৩৮), হেমায়েত মোল্যা (৪৪) ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান (৬০) জানান, মধুমতী নদীর বারবার ভাঙনে তাদের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। তাদের পুর্বপুরুষের ভিটেমাটি এখন নদীর ওপার গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে চলে গেছে। তাদের এসব জমিগুলো জবরদখল করে রেখেছে ওই এলাকার লোকজন। নদী ভাঙনে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওই সমস্ত পরিবার। আবারও ভাঙতে ভাঙতে নদীর কিনারে চলে এসেছে তাদের বসতভিটা। যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে তাতে করে বসতভিটা কখন যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এবার বসতবাড়ি ভাঙলে আর মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না তাদের। তাদের একটাই আকুতি, সরকারের পক্ষ থেকে যেন ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্টু শিকদার জানান, মধুমতী নদীর ভাঙনে অসংখ্য বসতবাড়ি, আবাদি জমি, মাদ্রাসা, মসজিদ ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে এই ওয়ার্ডে ১ হাজার ৭০০ ভোটার ছিল, সেটি কমে এখন ১ হাজার ভোটার আছে। ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, কয়েক বছরের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো এলাকা। তিনি মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষেয়ে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (SDE) মো. শফি উল্লাহ বলেন, নড়াইল সীমানায় মধুমতী নদীভাঙনকবলিত যে পয়েন্টগুলো রয়েছে, সবগুলো পয়েন্টের ভাঙন রোধে সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে ওইসব এলাকায় কাজ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সংসদের হুইপ ও সাংসদ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর এলাকায় ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, উপজেলার তেলকাড়া গ্রামের মধুমতী নদীভাঙন রোধে আপাতত কোনো বরাদ্দ নেই, এ কারণে কোনো ধরনের কাজ করতে পারছি না। প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন দেওয়া আছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে এবং বরাদ্দ পেলে আগামীতে ওই এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাবেতাতুল ওয়ায়েজীনের সঙ্গে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের মতবিনিময়

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

কালবেলার সংবাদের পর স্বপ্নের রঙিন ঘরে শাহারবানু

আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াত : মুজিবুর রহমান

রাজধানীতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডেড ভিডিও প্রদর্শন

জবাব দিতে পিএসসিকে আলটিমেটাম

অসদাচরণের অভিযোগে বদলি চিকিৎসক দম্পতি

১০

সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

১১

শহীদ জিয়ার মাজারে দোয়া করলেন খালেদা জিয়া

১২

নোয়াখালী বিভাগ চাইলেন ‘কাবিলা’

১৩

বেথ মুনির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত জয়

১৪

‘বিষাক্ত মদ’ পানে সংরক্ষিত ইউপি সদস্যের স্বামীর মৃত্যু

১৫

বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য

১৬

ঢাকা উত্তর সিটিতে জন্মনিবন্ধন ছাড়াই টাইফয়েড টিকা মিলবে

১৭

শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে খালেদা জিয়া

১৮

জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ নারী ফুটবল দলকে গণসংবর্ধনা

১৯

দুই বছর আগের মামলায় নতুন করে ‘আসামি’ সাংবাদিক

২০
X