বান্দরবানে থানচি উপজেলা সদরে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে পাহাড় কেটেছে প্রভাবশালী একটি মহল। মাটিগুলো নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজের নির্মাণাধীন সীমানা প্রাচীরের গর্ত ভরাট করা হয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনেদুপুরেই চলছে এ ধ্বংসযজ্ঞ। এদিকে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পরিবেশ অধিদপ্তরের।
মাটি কেটে ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা পালন পাহাড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবাধে পাহাড় কাটায় এখানকার পরিবেশের ভারসাম্য বিশেষ প্রভাবিত হচ্ছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন : লামায় পাহাড় কাটতে গিয়ে প্রাণ গেল শ্রমিকের
জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ২২ লাখ টাকার ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় থানচি রেস্ট হাউজ রক্ষণাবেক্ষণের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বাস্তবায়ন কাজের মাটি ভরাটসহ অর্ডার পেয়েছেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই থোয়াইপ্রুঅং মারমা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সীমানা প্রাচীরের কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পাহাড় কেটে মাটি ভরাটের কাজ চালাচ্ছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলছে পাহাড় কাটার কাজ। বড় ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান, ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে অবাধে পাহাড় কাটছেন থোয়াইপ্রুঅং মারমা। ১টি ভারী স্কেভেটর ও ২টি ট্রাকে করে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সাংবাদিকদের সামনে ঠিকাদার থোয়াইপ্রু অং মারমা শ্রমিকদের উদেশ্য বলেন, ‘সাংবাদিক টাংবাদিক ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কাজ করো না হয় বেতন পাবে না। এ রকমে শতাধিক সাংবাদিক পকেটে রেখে কাজ করছি। তারা ছবি তোলার, ভিডিও করার, আমার... পারবে না।’
স্কেভেটরচালক ফারুক ও ট্রাকচালক রাশেল সাংবাদিকদের জানান, আমরা পেটের দায়ে কাজ করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাইয়ের নির্দেশে আমরা কাজ করেছি। এর আগে কোরবানির ঈদের আগেও আমরা কাজ করেছি।
উপজেলা সদর হতে এক কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে থানচি সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মরিয়ম পাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক সুরেন্দ্র ত্রিপুরার মালিকানা উঁচু জমি পাহাড় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
যোগাযোগ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের প্রকল্প তদারকি কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হচ্ছে, সেখানে মাটি ভরাট করতে প্রায় ১০ লাখ ঘনফুটেরও বেশি মাটি লাগবে। ঠিকাদার চেয়ারম্যানের ছোট ভাই, তিনি কাজটা করার কথা রয়েছে। কিন্তু অবৈধ পন্থায় পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করলে সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখানোর সমান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইয়াছির আরফাতকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
থানচি থানার ওসি ইমদাদুল হক বলেন, ‘আপনারা এলাকার মানুষ, আমারও সীমাবদ্ধতা আছে। সবকিছু করতে চাইলেও করা যায় না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবুল মনসুর বলেন, ’আজকের মিটিং শেষে আমার অফিসে মানুষ একটু বেশি, তাই বিস্তারিক্ত মোবাইল ফোনে বলাও সম্ভব না।’
বান্দরবান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখন অফিসের কাজেই ঢাকায় অবস্থান করছি। পাহাড়ের মাটি কাটার জন্য আমাদের অধিদপ্তর থেকে কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সরকারিভাবে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হবে। সঠিক প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্বে মামলাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন