প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির নির্ধারিত প্রশ্নে পরীক্ষা না নেওয়ায় খাতা দেওয়ার পর জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টায় ওই বিদ্যালয়ে এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্রার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে এসে পরীক্ষার হলে বসার পর খাতাও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির মনোনীত ৫ সদস্যের পরীক্ষা কমিটির করা প্রশ্নে পরীক্ষা না নেওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার হিন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়াসহ ৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে পরীক্ষার জন্য ২৪ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে ওই চারটি পদের নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ডিজির একজন প্রতিনিধি, ডিসির প্রতিনিধি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ডিসির নির্দেশক্রমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হন। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার্থীরা হলে গিয়ে বসার পর সবাইকে খাতাও দেওয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মনোনীত পরীক্ষা কমিটির ৫ সদস্যের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করে পূর্বের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের করা হুবহু প্রশ্ন দেখতে না পেয়ে চূড়ান্ত প্রশ্নে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। এ ছাড়াও কমিটির ৫ সদস্যের প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করার পর তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ায় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মনঃক্ষুণ্ণ হন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এদিকে চারটি পদে নিয়োগের বিপরীতে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও তোলা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি এবং বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে অনেকেই পোস্ট করেন। যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। মেধাবীরা যেন বঞ্চিত না হয় সে কারণে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন কেউ কেউ।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তানিয়া, আব্দুল হাই, সাবিনা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে এসে বসে আছি। এখন দুপুর ১২টা বেজে গেছে। খাতা দেওয়ার পর হঠাৎ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করেছে। বিষয়টি যদি আগে জানানো হতো তাহলে কষ্ট করে আমাদের এখানে আসতে হতো না।
প্রধান শিক্ষক নজাবর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমার কোনো বক্তব্য নেই। প্রশাসন পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কেন করেছে সেটা উনারাই বলতে পারবে। আমি কোনো বক্তব্য দেব না।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু রাশেদ আলমগীর কালবেলাকে বলেন, প্রশাসন নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছে এখানে আমার কিছু বলার নেই। আপনি বক্তব্য নিতে হলে উনাদের থেকে নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাচ্ছুম কালবেলাকে বলেন, হিন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে ল্যাব সহকারী, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়াসহ চার পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তবে এ পরীক্ষা ঘিরে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ার কারণে জেলা প্রশাসকের দিকনির্দেশনায় পরীক্ষা কমিটির ৫ সদস্যের মাধ্যমে নতুন করে প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করার পর পূর্বের প্রশ্নপত্র সমন্বয় করে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক তাদের করা হুবহু প্রশ্ন দেখতে না পেয়ে চূড়ান্ত প্রশ্নে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। এ ছাড়াও কমিটির ৫ জনের প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করার পর তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ায় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। পরে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি পরীক্ষা স্থগিত করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষা স্থগিত করেন।
মন্তব্য করুন