নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাছানাশক বিষ দিয়ে ঘাস পোড়ানোয় ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা, হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য, ঘটছে স্বাস্থ্যহানি। সাধারণত কৃষকরা ক্ষেতে নিড়ানিসহ উচুঁনিচু কৃষিজমির আগাছা শ্রমিক ও হালচাষ দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফসল চাষাবাদের উপযোগী করে তুলত। এতে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। এখন কৃষিশ্রমিক ও হালচাষের মূল্য বৃদ্ধিতে স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে সেই দিকে ঝুঁকছেন তারা।
বিশেষ করে আগাছা পোড়ানোয় ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতির উপকারী কীটপতঙ্গ, কেঁচো, ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ নানা জলজপ্রাণী। মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে বিভিন্ন বিল, ঝিল ও জলাশয়। বিষাক্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে হরেক দেশীয় পাখি। দিন দিন কমছে এদের সংখ্যাও। গো-খাদ্যের জন্য মাঠগুলো সবুজ ঘাস শূন্য হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন : লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, ইরি-বোরো ঘরে তোলার পর আমন চাষাবাদের মধ্যবর্তী সময়ে উঁচুনিচু জমিতে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জন্ম নেয়া আগাছা পরিচর্যার বদলে কৃষক বিভিন্ন আগাছানাশক স্প্রে করে ভস্মীভূত করে দিচ্ছে।
এ সময় বড়ভিটা ইউপির বড়ভিটা বাজার এলাকার কৃষক বাচ্চু ও নিতাই পানিয়াল পুকুর খোলাহাটি গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, ধান কাটার পর জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মায়। এক বিঘা জমির আগাছা দমন করতে প্রায় ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিকের দরকার। এতে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি গুনতে হয়। সেখানে টেটোমোর নামক ১৪০ টাকার বিষ দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্য আগাছা পুড়ে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিক ও হালচাষ দিয়ে ঘাষ মাটিতে পুতে দিলে জমির উর্বরতা বাড়ে। তবে খরচ কয়েকগুণ বেশি হয়। এতে সবাই কীটনাশক দিয়ে আগাছা দমন করছে।
আরও পড়ুন : ভরা বর্ষায়ও বৃষ্টি নেই, আমন-পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক জ্যোতির্ময় বলেন, ট্রাক্টর, গরুর হাল কিংবা শ্রমিক দিয়ে আগাছা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতা ও অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান আগাছা দমনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে মাটির ভৌতগুণাগুণ ও অণুজীবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যত্রতত্র এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাটি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মৃত্যু ঘটছে। এসব রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি বা আইন করে এখনই বন্ধ করা দরকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কৃষক সময় ও টাকা বাঁচানোর জন্য আগাছানাশক ব্যবহার করছে; যা মাটির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসলের কাক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই কৃষিজমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে বিষ ব্যবহার না করাই উত্তম। মাটির ভৌতগুণাগুণ ও অনুজীব ঠিক রাখতে খরচ একটু বেশি হলেও কৃষককে ফসল চাষাবাদের ১৫ থেকে ১ মাস আগে আগাছা শ্রমিক, হালচাষ দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এতে জমির জৈবসারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে উর্বরতা শক্তি বাড়বে আবার প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রক্ষা পাবে।
মন্তব্য করুন