শাহজাহান ইসলাম লেলিন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১০:৪৭ এএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিষ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ঘাস, হুমকিতে কৃষি-জীববৈচিত্র্য

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের একটি ক্ষেতে দেওয়া হয়েছে আগাছানাশক বিষ। ছবি : কালবেলা
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের একটি ক্ষেতে দেওয়া হয়েছে আগাছানাশক বিষ। ছবি : কালবেলা

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাছানাশক বিষ দিয়ে ঘাস পোড়ানোয় ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা, হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য, ঘটছে স্বাস্থ্যহানি। সাধারণত কৃষকরা ক্ষেতে নিড়ানিসহ উচুঁনিচু কৃষিজমির আগাছা শ্রমিক ও হালচাষ দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফসল চাষাবাদের উপযোগী করে তুলত। এতে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। এখন কৃষিশ্রমিক ও হালচাষের মূল্য বৃদ্ধিতে স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে সেই দিকে ঝুঁকছেন তারা।

বিশেষ করে আগাছা পোড়ানোয় ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতির উপকারী কীটপতঙ্গ, কেঁচো, ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ নানা জলজপ্রাণী। মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে বিভিন্ন বিল, ঝিল ও জলাশয়। বিষাক্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে হরেক দেশীয় পাখি। দিন দিন কমছে এদের সংখ্যাও। গো-খাদ্যের জন্য মাঠগুলো সবুজ ঘাস শূন্য হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন : লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, ইরি-বোরো ঘরে তোলার পর আমন চাষাবাদের মধ্যবর্তী সময়ে উঁচুনিচু জমিতে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জন্ম নেয়া আগাছা পরিচর্যার বদলে কৃষক বিভিন্ন আগাছানাশক স্প্রে করে ভস্মীভূত করে দিচ্ছে।

এ সময় বড়ভিটা ইউপির বড়ভিটা বাজার এলাকার কৃষক বাচ্চু ও নিতাই পানিয়াল পুকুর খোলাহাটি গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, ধান কাটার পর জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মায়। এক বিঘা জমির আগাছা দমন করতে প্রায় ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিকের দরকার। এতে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি গুনতে হয়। সেখানে টেটোমোর নামক ১৪০ টাকার বিষ দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্য আগাছা পুড়ে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিক ও হালচাষ দিয়ে ঘাষ মাটিতে পুতে দিলে জমির উর্বরতা বাড়ে। তবে খরচ কয়েকগুণ বেশি হয়। এতে সবাই কীটনাশক দিয়ে আগাছা দমন করছে।

আরও পড়ুন : ভরা বর্ষায়ও বৃষ্টি নেই, আমন-পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক জ্যোতির্ময় বলেন, ট্রাক্টর, গরুর হাল কিংবা শ্রমিক দিয়ে আগাছা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতা ও অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান আগাছা দমনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে মাটির ভৌতগুণাগুণ ও অণুজীবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যত্রতত্র এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাটি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মৃত্যু ঘটছে। এসব রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি বা আইন করে এখনই বন্ধ করা দরকার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কৃষক সময় ও টাকা বাঁচানোর জন্য আগাছানাশক ব্যবহার করছে; যা মাটির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসলের কাক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই কৃষিজমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে বিষ ব্যবহার না করাই উত্তম। মাটির ভৌতগুণাগুণ ও অনুজীব ঠিক রাখতে খরচ একটু বেশি হলেও কৃষককে ফসল চাষাবাদের ১৫ থেকে ১ মাস আগে আগাছা শ্রমিক, হালচাষ দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এতে জমির জৈবসারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে উর্বরতা শক্তি বাড়বে আবার প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রক্ষা পাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ৬ নির্দেশনা

খালসহ ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করলেন খুলনার জেলা প্রশাসক

৩০ আগস্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন

জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন

বছর ঘুরে ফিরল সেই জুলাই 

৩৬ জুলাই বিপ্লব ও নির্মম নির্যাতনের মধ্যেও বেঁচে ফেরার গল্প

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ / এস আলম পরিবারের তিন সদস্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

১০

খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষের অভিযোগ

১১

রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল’ দিবস উদযাপন

১২

২৯৫ জন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করল চসিক

১৩

যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন ইউনূস-রুবিও

১৪

করোনার ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা’, অতঃপর...

১৫

ইরানে একাধিক ইউরোপীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

১৬

ঢাবি শিক্ষার্থী সৌমিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

১৭

ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হাবিপ্রবিসাসের অফিসরুম ভাঙচুর

১৮

গাজাবাসীর জন্য বিশেষ ভিসা চালু করতে স্টারমারকে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

১৯

পাবিপ্রবিতে শিক্ষাবৃত্তি ও গবেষণা প্রণোদনা প্রদান

২০
X