কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গণহত্যার বিচার, মামলা ও হয়রানি বন্ধ এবং ছাত্র সমাজের উত্থাপিত ৯ দফা দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা টাউন হল মোড়ে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ চলাকালে তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন দাবি এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সমন্বয়করা বলেন, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত ও হত্যাকাণ্ডের শিকার শহিদদের বিচার না করা হলে এই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। অবস্থান শেষে দুপুর ২টার দিকে নগরীর টাউন হল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার টাউন হল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে মেডিকেল শিক্ষার্থী ডা. সজিব হত্যার বিচার এবং ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে দশটায় মেডিকেল কলেজ গেট এলাকায় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান সংবলিত ফেস্টুন হাতে নিয়ে দাঁড়ায়। বিদ্রোহী গান-কবিতায় প্রদিবাদ জানান তারা।
এ সময় বক্তব্য দেন ডা. নিয়াজ রহমানসহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেলের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী ময়ূরাক্ষী বলেন, কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরল। রক্তের উপর আর থাকা যাবে না, এই রক্ত দেখে আর ঘুমানো যাবে না। জুলাই শুরু হওয়ার পর খেতে ও ঘুমাতে যেতে পারিনি। দয়া করে আর রক্ত ঝড়াবেন না। পুলিশদের তাদের জায়গায় ফিরিয়ে নিন, সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নিন। আমাদের ৯ দফা দাবি নিয়ে সংলাপের জায়গা রাখেন। সংলাপের জায়গা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর শিক্ষার্থী আমার ভাইদের মারবেন না। যে খুন করা হয়েছে তার বিচার করুন।
ডা. নিয়াজ রহমান বলেন, চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ময়মনসিংহ মেডিকেলসহ অন্যান্য মেডিকেলের শিক্ষার্থীরাও এ কর্মসূচি পালন করছে। আন্দোলনে না গেলেও আমাদের একজন চিকিৎসক স্যারকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এই জুলুমের বিচার চাই, এর শেষ দেখতে চাই।
এ ছাড়াও ছাত্রদের যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনে ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে সকাল দশটায় নগরীর চরপাড়া মোড়ে মানববন্ধন করেছে কওমি আলেম সমাজ ও তৌহিদি জনতা। গণহত্যা বন্ধ ও দায় স্বীকার, আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন ও অপরাধীদের দ্রুত বিচার কার্যকর করা, সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা তারা এ ৫ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় বক্তব্য দেন খানকায়ে হুসাইয়িনা মাদানির মুহতামিম মুফতি মাহবুবুল্লাহ কাসেমি, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মুফতি ইসমাইল মানসুর, মুহাদ্দিস, শায়েখ আব্দুল মুমিন, মুফতি আব্দুল আলিম, মুফতি শরিফুল ইসলাম, মুফতি কামরুল ইসলাম, মুফতি জসিম উদ্দিন, নুর উদ্দিন সরকার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে গুলি চালিয়ে যে গণহত্যা করা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। এ দেশের মানুষকে যারা আক্রমণ করবে দেশের মানুষ তাদের জানাজা, দাফন, কাফন বয়কট করবে।